Coronavirus

‘একটা মোমবাতি পাই কোথায়’

শুক্রবার সকালে ভিডিয়ো বার্তায় দেশবাসীর কাছে ওই আবেদন রাখেন তিনি। তার পর থেকেই মোমবাতির খোঁজ চোখে পড়েছে নানা জায়গায়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২০ ০৪:৫৩
Share:

মোমবাতি কিনতে দোকানে খুদে। কীর্ণাহারে শনিবার। ছবি: কল্যাণ আচার্য

কোথাও মোমবাতি পেতে বন্ধ দোকান খুলতে অনুরোধ, কোথাও আবার প্রদীপের খোঁজে লকডাউনের মধ্যেই কুমোরপাড়ায় খোঁজ! রবিবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর ডাকে সাড়া দিয়ে আলো জ্বালতে এমন নানা ছবিই চোখে পড়ল জেলাজুড়ে। অনেকে অবশ্য এই আহ্বানকে গুরুত্ব দেননি। তাঁদের দাবি, করোনাভাইরাস সংক্রমণে এমন প্রতীকী কর্মসূচির চেয়ে বাস্তবোচিত কর্মসূচি এখন অনেক বেশি জরুরি।

Advertisement

শুক্রবার সকালে ভিডিয়ো বার্তায় দেশবাসীর কাছে ওই আবেদন রাখেন তিনি। তার পর থেকেই মোমবাতির খোঁজ চোখে পড়েছে নানা জায়গায়। লকডাউনে বন্ধ হলেও শুক্রবার সন্ধ্যায় ধূপধুনো দিতে মিনিট পাঁচেকের জন্য দোকান খুলেছিলেন দুবরাজপুরের একটি দশকর্মা ভাণ্ডারের মালিক অর্জুন চৌধুরী। তখনই চার-পাঁচ জন খদ্দের ঢুকে পড়েন মোমবাতির খোঁজে। শনিবার সকালে লকডাউনের মধ্যেই পাইকর কুমোরপাড়ায় পৌঁছে যান কলেজ ছাত্রী পল্লবী দে। দশটি মাটির প্রদীপ তাঁর চাই-ই চাই। প্রদীপ নিয়েই বাড়ি ফেরেন তিনি।

সবার অবশ্য চাহিদা মেটেনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, লকডাউনের জেরে অত্যাবশকীয় পণ্যের দোকান ছাড়া অন্য দোকান বন্ধ। তাছাড়া এখন দীপাবলির মরসুম না হওয়ায় চাহিদা অনুয়ায়ী মোমবাতি বা প্রদীপ মিলছেও না। তবে মোমবাতি-প্রদীপ না পেলেও অনেকেই নিজের মোবাইল ফোনের টর্চের উপর ভরসা রাখছেন। সিউড়ির এক কলেজ পড়ুয়া বলছেন, “মোমবতি প্রদীপ না পাই মোবাইলের চর্চ জ্বলবে। দূরত্ব বাজায় রেখে মানুষের একত্রিত হওয়াটাই বিষয়।”

Advertisement

জেলা সদর সিউড়ি ছাড়াও রামপুরহাট, বোলপুর, সাঁইথিয়া-সহ নানা এলাকায় দোকানে গিয়ে ক্রেতারা মোমবাতির খোঁজ করছেন বলে খবর মিলেছে। লাভপুর, নানুর, ময়ূরেশ্বর ও সাঁইথিয়া থানা এলাকায় বিজেপি কর্মীদের মধ্যে মোমবাতি কেনার তোড়জোড় দেখা গিয়েছে। কেউ কেউ আবার বন্ধ দোকান খুলিয়ে মোমবাতি দেওয়ার আবদারও করেছেন। বোলপুরের ব্যবসায়ীদের একাংশ বলছেন, দীপাবলি নয় বলে স্টক তেমন থাকার কথা নয়। তাছাড়া সাম্প্রতিক অতীতে জেএনইউ কাণ্ড, বিশ্বভারতীতে অশান্তি এমন নানা ঘটনার প্রতিবাদে
পরপর মোমবাতি মিছিলে ও রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির জন্যও প্রচুর মোমবাতি বিক্রি হয়েছে। তাই চাহিদা থাকলেও জোগান কম। তবে ব্যবসায়ীদের আরেকটা অংশের দাবি, প্রদীপ না পাওয়া গেলেও মোমবাতি কিছু সব সময়ই থাকে। কারণ লোডশেডিং থেকে পুজো, সব কাজেই মোমবাতি লাগে। তাই সমান্য কিছু দোকান খোলা থাকলেও মোমবাতি পাওয়া অসম্ভব নয়। আজ, রবিবার সকালে চাহিদা আরও বাড়বে বলে আশা তাঁদের।

সাধারণ মানুষের অনেকের মোমবাতি কেনার এই হিড়িকেই আশঙ্কার মেঘ দেখছেন বিরোধীদের অনেকে। তাঁদের যুক্তি, ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে যেখানে প্রধানমন্ত্রী নিজেই লকডাউন ঘোষণা করে ঘরবন্দি থাকার কথা বলেছেন। কিন্তু তাঁরই আহ্বানে সাড়া দিতে গিয়ে দলে দলে মানুষ যদি মোমবাতির খোঁজে বেরিয়ে পড়েন তাহলে লকডাউনের উদ্দেশ্য সফল হবে কি, প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।

বিজেপি বিরোধীদের দাবি, লকডাউনের জেরে গরিব খেটে খাওয়া মানুষ চরম সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। বিপাকে পড়েছেন কাজের খোঁজে অন্য রাজ্যে গিয়ে আটকে পড়া শ্রমিকেরাও। অর্থনীতির বেহাল দশা। এ সব থেকে নজর ঘোরাতেই এমন নিদান দেওয়া হয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ। জেলা তৃণমূলের নেতারা অবশ্য বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা মতামত দিতে রাজি হননি। তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি অভিজিৎ সিংহ বলছেন, “প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন সেটা সরকারি কোনও নির্দেশ নয়। যাঁর ইচ্ছে তিনি মানবেন, যাঁর ইচ্ছে হবে না তিনি করবেন না। এর বাইরে কোনও মন্তব্য নয়।”

বিজেপি জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল বলছেন, “মোমবাতি, প্রদীপ দোকানে না মিললেও ঠাকুর ঘরে প্রদীপ জ্বলেই। তাও যদি না পাওয়া যায় মানুষ মোবাইল চর্চ জ্বালাবে। ইচ্ছেটাই বড় কথা। কী জ্বলল সেটা বড় কথা নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন