Coronavirus

চাহিদা নেই দুধ-ছানার, ঘরে ঘরে নাড়ু মিষ্টি              

জেলার বহু পরিবার গাভী পালন করে সংসার চালান। কেউ কেউ দুধ থেকে ছানা,  চাঁচি তৈরি করে মিস্টির দোকানে বিক্রি করেন।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ

ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২০ ০৬:৩৫
Share:

আয়োজন: বাড়িতেই তৈরি হচ্ছে মিষ্টি। ছবি: কল্যাণ আচার্য

মিষ্টির দোকান অল্প সময়ের জন্য খোলা। কিন্তু, সে খোলা না খোলা সমান। কারণ, চাহিদা নেই দুধ-ছানার। তাই গো-পালকেরা দুধ ও ছানা নিয়ে পড়েছেন মহা সমস্যায়। অসুবিধায় দুধের ব্যবসায়ীরাও। পরিস্থিতির সামাল দিতে নিজেরাই বাড়িতে মিস্টি নাড়ু করছেন। তাতে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হলেও অন্তত দুধ-ছানা কাজে লাগানো যাচ্ছে। মিষ্টি পেয়ে বাড়ির ছোটরাও ভারী খুশি। ঘুরছে ফিরছে আর টপাটপ নাড়ু-মিস্টি মুখে ফেলে দিব্যি আছে তারা।

Advertisement

জেলার বহু পরিবার গাভী পালন করে সংসার চালান। কেউ কেউ দুধ থেকে ছানা, চাঁচি তৈরি করে মিস্টির দোকানে বিক্রি করেন। আবার কেউ ব্যবসায়ীদের দুধ বিক্রি করে দেন। কিন্তু, লকডাউনের জেরে ছানা ও চাঁচির চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গিয়েছে। বেলা ১২ থেকে ৪টে পর্যন্ত মিষ্টির দোকান খোলার অনুমতি রয়েছে। বিভিন্ন মিস্টির দোকানদারের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, প্রচণ্ড রোদ গরমের জন্য ওই সময়সীমার মধ্যে দোকানে তেমন একটা ক্রেতা আসছেন না। তাই বেশি মিষ্টি তৈরির ঝুঁকি নিতে চান না তাঁরা। অতএব ছানার চাহিদাও তাঁদের আগের মতো নেই।

নানুরের ব্যাঙ্ক মোড়ের সুজিত ঘোষের দোকানে লকডাউন ঘোষণার আগে দৈনিক ২৫ কেজি ছানার মিষ্টি তৈরি হতো। এখন মাত্র ৪ কেজি তৈরি হচ্ছে। কীর্ণাহারের বকুল ঘোষের দোকানে দৈনিক ৮০ কেজি ছানার মিষ্টি তৈরি হতো। এখন সেখানে ১২-১৫ কেজি। দু’জনেই বলছেন, “এমনিতেই লকডাউনের জেরে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। তার উপরে, যে সময় দোকান খোলা থাকছে, কারও দেখা মিলছে না। তাই নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে আমরাও বেশি মিষ্টি তৈরির ঝুঁকি নিতে পারছি না।“

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে গো-পালকেরা পড়েছেন মহাবিপাকে। বিক্রি না হওয়ায় বাড়িতে প্রতিদিন প্রচুর দুধ জমে যাচ্ছে। ময়ূরেশ্বরের গদাধরপুরের সুরেশ মণ্ডলের বাড়িতে দুটি গাভী রয়েছে। লাভপুরের চৌহাট্টার শ্রীদাম দাসেরও দুটি গাভী। সকাল বিকেল মিলে দুধ হয় প্রায় ১৫ কেজি। আগে কেজি খানেক করে দুধ বাড়িতে খাওয়ার জন্য রেখে বাকিটা বিক্রি করে দিতেন। দাম পেতেন কেজি প্রতি ২০-২৫ টাকা। এখন দাম একই আছে। কিন্তু চাহিদা তলানিতে। তাই উদ্বৃত্ত দুধ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। তাঁদের কথায়, “কী করব অত দুধ নিয়ে? কাছাকাছি যে-সব আত্মীয়স্বজন আছেন, তাঁদের বাড়িতে কিছুটা পাঠিয়ে দিচ্ছি। বাকিটা দিয়ে ছানা, চাঁচি আর নাড়ু মিস্টি করা হচ্ছে।“

নানুরের মতিপুরের সুভদ্রা ঘোষ , সাঁইথিয়ার ভগবতীপুরের বিমলা মণ্ডল জানান, চা তৈরি বা বাচ্চাদের জন্য যৎসামান্য দুধ খাওয়ার চল থাকলেও নবান্ন, ভাইফোঁটা কিংবা পুজো ছাড়া নাড়ু-মিস্টির চল নেই বললেই চলে। কিন্তু এখন রোজই তৈরি করতে হচ্ছে। তাঁরা বলেন, “আমাদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু ছেলেমেয়েরা মহাখুশি।“

একই পরিস্থিতি দুধ ব্যবসায়ীদের। দুধ কিনে ছানা বা চাঁচি তৈরি করে মিষ্টির দোকানে সরবরাহ করতেন ফিংতোড় গ্রামের মিলন ঘোষ, সাঁইথিয়ার নেতুর গ্রামের মদন ঘোষেরা। তাঁরা বলেন, “আগে আমরা প্রায় ১ কুইন্টাল করে দুধ কিনতাম। মিষ্টির দোকানে চাহিদা না থাকায় এখন সেখানে ২০-২৫ কেজি করে দুধ কিনছি। তা-ও সবদিন বিক্রি হয় না।“

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন