রামপুরহাট শহরে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা

পথে ইমারতি দ্রব্য, অভিযুক্ত পুরপ্রধান

অনিয়মটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে দীর্ঘ দিন ধরেই। সেই নিয়মরক্ষার ভার যাঁদের হাতে রয়েছে, তাঁদেরই কেউ যদি সেই অনিয়মে হাত পাকাতে শুরু করেন?শনিবার সকালে এমনই ছবি দেখা গেল রামপুরহাট শহরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৭ ০১:৩৬
Share:

তদারকি: দেখেও চলে যাচ্ছে পুলিশ। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাজের তদারকি করছেন পুরপ্রধান। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

অনিয়মটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে দীর্ঘ দিন ধরেই। সেই নিয়মরক্ষার ভার যাঁদের হাতে রয়েছে, তাঁদেরই কেউ যদি সেই অনিয়মে হাত পাকাতে শুরু করেন?

Advertisement

শনিবার সকালে এমনই ছবি দেখা গেল রামপুরহাট শহরে। যেখানে শহরের ব্যস্ততম রাস্তার অর্ধেকের বেশি অংশ জুড়ে ইমারতি দ্রব্য ফেলে দাঁড়িয়ে থেকে নিজের বহুতল বাড়ি তৈরির তদারকি করছেন খোদ শহরের তৃণমূল পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারি। যা দেখে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে এলাকায়। বিরোধীদের দাবি, পুরপ্রধানের এই কাজ প্রথমত আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। দ্বিতীয়ত, পুরপ্রধানই যদি নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখান, তা হলে শহরের সাধারণ মানুষ কেন তা পালন করবেন? প্রভাবশালী হওয়ার কারণেই শাসকদলের ওই পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে এখনও আইন মেনে পুলিশ পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ বিরোধীদের।

এ দিন সকাল থেকে শহরের হাটতলা পাড়া সংলগ্ন এলাকায় দেশবন্ধু রোডের উপরে ট্রাক্টরের পরে ট্রাক্টর বালি ও স্টোনচিপস‌্ ফেলতে দেখা যায়। তার জেরে ব্যস্ততম সময় শহরের ওই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। একফালি শুরু রাস্তা ছেড়ে রাখলেও তা দিয়ে মোটরবাইক, টোটো ও অন্যান্য যানবাহন চলাচল করতে ব্যাপক বেগ পায়। চরম অসুবিধায় পড়েন পথচারীরাও। গোটা ঘটনায় চরম ক্ষোভ ছড়ায় এলাকার ব্যবসায়ীদের একাংশের মধ্যে। তাঁরা সংশ্লিষ্ট ৫ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের কাছে এ নিয়ে নালিশও জানান। ওই ব্যবসায়ীরা নির্মাণে যুক্ত ঠিকাদারকে এ ভাবে পথরুদ্ধ করে ইমারতি দ্রব্য ফেলায় আপত্তি জানান।

Advertisement

ওই ব্যবসায়ীদের দাবি, তাঁদের আপত্তি উড়িয়ে দিয়ে ঠিকাদার পরিষ্কার জানিয়ে দেন, ‘পুরপ্রধানের বাড়ি তৈরি হচ্ছে, কাজে বাধা দিয়ে লাভ নেই’। অপমানিত ব্যবসায়ীরা এর প্রতিবাদে পথ অবরোধে সামিল হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তত ক্ষণে ব্যবসায়ীদের ক্ষোভের কথা কানে পৌঁছেছে অশ্বিনীবাবুর কাছে। তিনি এলাকায় পৌঁছে কথা বলে ওই ব্যবসায়ীদের পথ অবরোধ করার থেকে নিরস্ত করেন। তখনকার মতো বিষয়টি চুপচাপ মেনে নিলেও ক্ষোভ গোপন রাখছেন না ওই ব্যবসায়ীরা। তাঁদের অনেকেরই ক্ষোভ, ‘‘রামপুরহাট পুরসভাই মাঝে মধ্যে শহরের রাস্তায় ইমারতি দ্রব্য ফেলে রাখা দণ্ডনীয় অপরাধ বলে মাইকে প্রচার চালায়। অথচ পুরপ্রধানই সেই কাজ করছেন!’’ প্রশ্ন উঠছে, অনেক সময়ই এই অপরাধে পুলিশ এলাকার মানুষকে থানায় তুলে নিয়ে যায়। তা হলে কোন আইনে পুরপ্রধান ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন? ঘটনার সময় কোনও ব্যবস্থা না নিয়েই পুলিশকে গাড়ি নিয়ে ওই ইমারতি দ্রব্য পড়ে থাকা রাস্তার সরু অংশ দিয়ে চলে যেতে দেখা যায়।

এ দিকে, বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরাও। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর শুভাশিস চৌধুরী বলছেন, ‘‘পুরসভার প্রচারে সাড়া দিয়ে সাধারণ নাগরিক বাড়ি নির্মাণের প্রয়োজনীয় ইট, বালি, পাথর রাস্তা ধারে ফেলেও আবার খরচা করে সেই সমস্ত ইমারতি দ্রব্য সরিয়ে নিচ্ছেন। সেখানে পুরপ্রধান কেন নিজের ক্ষমতা জাহির করে দাঁড়িয়ে থেকে রাস্তার ধারে ইমারতি দ্রব্য ফেলে বাড়ি তৈরি করবেন?’’ শুধু রাস্তায় ইমারতি দ্রব্য ফেলা নিয়েই নয়, প্রশ্ন তৈরি হয়েছে পুরপ্রধানের নির্মীয়মাণ বহুতল বাড়ি নিয়েও ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অমল শেখের অভিযোগ, ‘‘পুরপ্রধান আইনের কোনও তোয়াক্কা করছেন না। বহুতলটি অবৈধ ভাবে তৈরি হচ্ছে। কারণ, বহুতল নির্মাণের ক্ষেত্রে চারপাশে যে পরিমাণ জায়গা ছাড়ার কথা, তা পুরপ্রধান ছাড়েননি।’’

চাপের মুখে ভুল মেনে নিয়েছেন অশ্বিনীবাবু। তবে তাঁর দাবি, ‘‘প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ চলছে। সামনে তেমন জায়গা নেই। রাস্তায় ইমারতি দ্রব্য ফেলা ছাড়া উপায় ছিল না। তবে, এ ভাবে রাস্তার উপর বালি পাথর ফেলে বাড়ি তৈরি করা আমার ভুল হয়েছে।’’ চারপাশে প্রয়োজনীয় অংশ ছেড়েই বহুতলটি তৈরি করা হচ্ছে বলেও পুরপ্রধানের দাবি।

এ দিকে, পুর আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, এ ক্ষেত্রে ১৯৮৫ সালের পুর আইনের ১৮৫ ধারা অনুযায়ী, অভিযুক্তকে ১০০ টাকা ফাইন করতে পারে। তার পরে যত দিন না ওই ইমারতি দ্রব্য সরানো হচ্ছে, তত দিন দিন প্রতি ২০ টাকা করে অভিযুক্তকে ফাইন করার নিয়মও রয়েছে। আবার আইনজীবীদের মতে, এই ধরনের ঘটনায় পুরসভা অভিযুক্তকে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিতে পারে। তার পরেও জিনিসপত্র না সরালে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার জন্য পুলিশকে বলবে। আবার পুলিশ নিজেও স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৩৩ ধারায় (‌বেআইনি ভাবে ইমারতি দ্রব্য রেখে রাস্তা দখল করা) অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করতে পারে। রামপুরহাটের ক্ষেত্রে এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনওটিই হয়নি।

কেন? মুখ খোলেননি পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন