Bankura

ভ্রাতৃবধূ ও ভাইঝিকে খুন করে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল উঠোনে! বাঁকুড়ায় দম্পতির যাবজ্জীবন

সম্পত্তি নিয়ে বিবাদে ভ্রাতৃবধূ ও দেড় বছরের ভাইঝিকে মাথায় আঘাত করে খুন করেছিলেন এক দম্পতি। প্রমাণ লোপাট করতে দু’টি দেহ রাতারাতি পুঁতে দেওয়া হয়েছিল বাড়ির উঠোনে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৫ ২০:২০
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

সম্পত্তি নিয়ে বিবাদে ভ্রাতৃবধূ ও দেড় বছরের ভাইঝিকে মাথায় আঘাত করে খুন করেছিলেন এক দম্পতি। প্রমাণ লোপাট করতে দু’টি দেহ রাতারাতি পুঁতে দেওয়া হয়েছিল বাড়ির উঠোনে। ২০১৪ সালের ১৬ এপ্রিল বাঁকুড়ার জয়পুর থানার মাধবপুর গ্রামের হাড়হিম করা সেই জোড়া খুনের ঘটনায় অবশেষে দম্পতিকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালত।

Advertisement

আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই বিবাদ চলে আসছিল বাঁকুড়ার জয়পুর থানার মাধবপুর গ্রামে র দুই ভাই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ও সন্দীপ চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের মধ্যে। ২০১৪ সালের ১৬ এপ্রিল আচমকাই নিজেদের বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যান ছোট ভাই সন্দীপ চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী মমতা ও দেড় বছর বয়সি কন্যাসন্তান অনন্যা চট্টোপাধ্যায়। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেও স্ত্রী ও কন্যাসন্তানের খোঁজ না পেয়ে পর দিন জয়পুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন সন্দীপ। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশের সন্দেহ হয় সন্দীপের দাদা প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ও বৌদি অনিতা চট্টোপাধ্যায়ের উপর। দু’জনকে একসঙ্গে বসিয়ে দীর্ঘ ক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পুলিশের জেরায় শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়েন ওই দম্পতি। জেরার মুখে ওই দম্পতি স্বীকার করেন, সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে ভ্রাতৃবধূ মমতা ও ভাইঝি অনন্যাকে খুন করে তাঁরাই দেহ দু’টি বাড়ির উঠোনে লেবু গাছের তলায় পুঁতে দিয়েছেন। এর পরেই পুলিশ ওই দম্পতিকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারির এক বছর পর আদালত থেকে জামিন পান অভিযুক্ত দম্পতি। কিন্তু জামিন পেতেই ওই দম্পতি ফেরার হয়ে যাওয়ায় থমকে যায় ঘটনার বিচারপ্রক্রিয়া। দীর্ঘ ন’বছর ধরে খোঁজাখুঁজির পর ২০২২ সালের অগস্ট মাসে ওই দম্পতির সন্ধান পায় পুলিশ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর এলাকা থেকে পুনরায় ওই দম্পতিকে গ্রেফতার করে এনে বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালতে পেশ করে জয়পুর থানার পুলিশ। এর পর থেকে বিচারপ্রক্রিয়া চলছিল বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালতে। ঘটনায় তথ্যপ্রমাণ ও সাক্ষ্যর ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার জোড়া খুনের ঘটনায় প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী অনিতা চট্টোপাধ্যায়কে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। পরে ওই দম্পতিকে যাবজ্জীবন কারাবাস, পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাস কারাবাসের নির্দেশ দেন বিচারক। একই সঙ্গে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অপরাধে দম্পতিকে সাত বছর কারাবাস ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৩ মাস কারাবাসের নির্দেশ দেন বিচারক। বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালতের অতিরিক্ত সরকারি আইনজীবী গুরুপদ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘অভিযুক্তেরা আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর ফেরার হয়ে যাওয়ার কারণেই বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করলে ফের বিচার শুরু হয়। অবশেষে সেই বিচার প্রক্রিয়া শেষ হল।’’

জোড়া খুনের ঘটনায় আদালত দোষী দম্পতিকে যাবজ্জীবন কারাবাসের নির্দেশ দেওয়ায় খুশি নন মৃতা মমতা চট্টোপাধ্যায়ের স্বামী সন্দীপ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমার ২১ বছরের স্ত্রী ও দেড় বছরের শিশুকন্যাকে নির্মম ভাবে খুন করে যারা দেহ লোপাট করেছিল, আমি তাদের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছিলাম। নৃশংস ঘটনায় দোষীদের কমপক্ষে ফাঁসি হওয়া উচিত ছিল। আমি এই রায়ে মোটেও সন্তুষ্ট নই।’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement