প্রচারে সিপিএম, চার প্রান্ত থেকে ‘লং মার্চ’

সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় চারটি প্রান্ত থেকে পদযাত্রা শুরু হবে। মিছিল হবে লোহাপুর থেকে সিউড়ি, দুবরাজপুর থেকে সিউড়ি, রাজনগর থেকে সিউড়ি এবং কোটাসুর থেকে সিউড়ির দিকে।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৪১
Share:

লিখন: ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘লং মার্চের’ প্রচার। নিজস্ব চিত্র

পরের পর ভোটে বিপর্যস্ত হয়ে সংগঠন চূড়ান্ত বেহাল। মাঠে নেমে আন্দোলন হারিয়ে গিয়েছে—এই আক্ষেপ হামেশাই শোনা যায় দলের কর্মীদের মুখে। সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত ভোটেও যে সামান্য বিরোধিতা হয়েছে জেলায়, তার পরিসরও দখল করে নিয়েছে গেরুয়া শিবির। এই অবস্থায় বীরভূমে সংগঠন মজবুত করতে সিপিএমের হাতিয়ার ‘লং মার্চ’।

Advertisement

আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর সিপিএমের ছাত্র, যুব, শ্রমিক, কৃষক ও মহিলা সংগঠন মিলিত ভাবে জেলার চারটি এলাকা থেকে লং-মার্চ শুরু করবে। রাজ্য জুড়ে ‘অধিকার যাত্রা’র অঙ্গ হিসাবেই এই কর্মসূচি। দেওয়ালে দেওয়ালে তো বটেই, পাল্লা দিয়ে প্রচার চলছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। বীরভূমে ‘জাগো-জাগাও-এগোও’ স্লোগান দিয়ে এই পদযাত্রা কর্মসূচির প্রচারে কেন্দ্রীয় সরকারের নোটবন্দি এবং জিএসটি নিয়ে কটাক্ষ যেমন রয়েছে, তেমনই প্রচার স্টিকারে লেখা থাকছে ‘শত্রু যখন সাম্প্রদায়িকতা, স্বৈরাচার, প্রতারণা, ভ্রষ্টাচার, প্রতিবাদ না করাটাই অপরাধ।’ কোথাও লেখা ‘পড়াশোনার খরচ কমাও, জাত ধর্মের হিংসা থামাও’। প্রচারপত্রে অভিযোগ করা হয়েছে, কর্মসংস্থান ও শিল্প বাড়াতে রাজ্য সরকার ব্যর্থ। সোশ্যাল মিডিয়ার কোনও কোনও পোস্টে আবার জেলার মাটি, বালি পাথর ও কয়লা সহ প্রকৃতিক সম্পদ ‘লুট’-এর অভিযোগ তুলে তার বিরুদ্ধে সরব হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় চারটি প্রান্ত থেকে পদযাত্রা শুরু হবে। মিছিল হবে লোহাপুর থেকে সিউড়ি, দুবরাজপুর থেকে সিউড়ি, রাজনগর থেকে সিউড়ি এবং কোটাসুর থেকে সিউড়ির দিকে। ওই কর্মসূচির পরে ২ অক্টোবর সিউড়ি জেলা স্কুল মাঠে প্রকাশ্য সমাবেশে বক্তব্য পেশ করবেন দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। জেলা সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, রাজ্যে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে শাসক দল বীরভূম জেলাকে ‘মডেল’ হিসেবে তৈরি করেছে। সঙ্গে জুড়েছে স্বৈরাচার, প্রতারণা ও দুর্নীতি। প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতিতে নেমেছে তৃণমূল, বিজেপি দু’দলই। এর প্রতিবাদ করা খুবই প্রয়োজন। সেই জন্যই ‘লং-মার্চ’ কর্মসূচি।

Advertisement

সোশ্যাল মিডিয়ায় পদযাত্রার প্রচারে এগিয়ে রয়েছে সিপিএমের ছাত্র-যুব সংগঠন। তাদের নিজস্ব ফেসবুক পেজ, হোয়্যাটস অ্যাপ গ্রুপে প্রচার চলছেই। ‘লং-মার্চ’ কর্মসূচি সফল করতে এ বার ইউটিউবেও প্রচার শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা। দলের যুব সংগঠন ডিআইএফের জেলা সম্পাদক মতিউর রহমানের কথায়, ‘‘বর্তমানে ছাত্র ও যুবরা স্মার্টফোন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ। আমরা চাইছি, তাঁদের কাছে পৌঁছতে। ছাত্র ও যুব সংগঠন ছাড়াও ঘোষিত কর্মসূচিতে শামিল হবে কৃষক, শ্রমিক ও মহিলা সংগঠন।’’ সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, প্রতিটি পরিবারেই যেহেতু ছাত্র ও যুব রয়েছেন, পদযাত্রায় তাঁদের শামিল করানো দলের লক্ষ্য।

যে দাবিগুলি নিয়ে সিপিএম ওই কর্মসূচির ডাক দিয়েছে, সেগুলির মধ্যে রয়েছে বোলপুরের শিবপুর মৌজায়, দুবরাজপুরের চিনপাইয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া বারুদ কারখানায়, বন্ধ হয়ে যাওয়া রাজনগরে সিসলফার্ম, আমোদপুর চিনিকলের সরকার অধিগৃহীত জমিতে শিল্পতালুক গড়ে তোলা। এ ছাড়া আছে পাথর শিল্পের জট কাটানো, মহম্মদবাজার ও লোবায় কয়লা শিল্পের জন্য সরকারকে সদর্থক পদক্ষেপ করার দাবিও।

সিপিএমের এক নেতার বক্তব্য, কৃষকদের ‘লং মার্চ’-এর শক্তির কাছে মাথা নুইয়েছিল মহারাষ্ট্র সরকার। বীরভূমেও করে দেখা যাক, সংগঠন চাঙ্গা হয় কিনা। দলের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা বলছেন, “অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি। এটা যাতে সফল হয়, তার জন্য বুথে বুথে বৈঠক, পদযাত্রা, বাড়ি বাড়ি প্রচার,

দেওয়াল লিখন ও হ্যান্ডবিল ছাপিয়ে বিলি করা সবই চলছে। তবু বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই সেখানে প্রচারেও জোর দেওয়া হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন