উড়ছে টাকা, নজরে সিপিএমের স্পাইক্যাম

পুরভোটের বাজারে নাকি টাকা উড়ছে ঝালদায়! ১২ ওয়ার্ডের এই শহরের ক্ষমতা পেতে এ বার সব দলই মরিয়া। আর ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই সরগরম হচ্ছে ঝালদা। তৃণমূল, কংগ্রেস, বিজেপি থেকে সিপিএম প্রত্যেকেই একে অন্যের বিরুদ্ধে ভোট কেনাবেচার খেলা চলছে বলে অভিযোগ তুলছেন। প্রচারেও গলার শিরা ফুলিয়ে এমনই তোপ দাগছেন বিভিন্ন দলের নেতারা।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

ঝালদা শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৫৬
Share:

পেনেই লুকনো ক্যামেরা। —নিজস্ব চিত্র।

পুরভোটের বাজারে নাকি টাকা উড়ছে ঝালদায়!

Advertisement

১২ ওয়ার্ডের এই শহরের ক্ষমতা পেতে এ বার সব দলই মরিয়া। আর ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই সরগরম হচ্ছে ঝালদা। তৃণমূল, কংগ্রেস, বিজেপি থেকে সিপিএম প্রত্যেকেই একে অন্যের বিরুদ্ধে ভোট কেনাবেচার খেলা চলছে বলে অভিযোগ তুলছেন। প্রচারেও গলার শিরা ফুলিয়ে এমনই তোপ দাগছেন বিভিন্ন দলের নেতারা। আর এরই মধ্যে ভোট কেনাবেচার ছবি তুলতে সিপিএম গোপন ক্যামেরা আমদানি করেছে বলে এই খবর চাউর হতেই ঝালদার ভোট-রঙ্গ নতুন মাত্রা পেয়ে গিয়েছে। বামবিরোধী সব দলই সুর মিলিয়ে প্রশ্ন, ছুঁড়েছেন— সিপিএমের টাকা ছড়ানোর ছবি তা হলে কে তুলবে?

ঝাড়খণ্ড ঘেঁষা এই পুরশহরে গত পাঁচ বছরে দু’দফায় অনাস্থায় পুরপ্রধানরা সরেছেন। কিন্ত পুরশহরের হালের পরিবর্তন বিশেষ কিছু হয়নি। জল সঙ্কট থেকে রাস্তাঘাট, নিকাশি, সাফাই— সব কিছু নিয়েই বাসিন্দাদের অভিযোগ রয়েছে। এ বার তাদের একটাই ইচ্ছা, ক্ষমতায় যেই আসুক, আর যেন অনাস্থা না আসে। টানা পাঁচ বছর এ বার বোর্ড যেন শুধু উন্নয়নের কাজই করে।

Advertisement

কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে ঝালদার বাতাসে শুধু এ পাড়ায় অমুকের লোকেরা, অন্য পাড়ায় তমুকের লোকেরা টাকা বিলিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করছে বলে খবর ছুটছে। এই খেলার মোকাবিলায় অন্যদের টেক্কা দিতে ভোটের ময়দানে ‘গোয়েন্দা’ নামিয়ে দিয়েছে সিপিএম। তাদের হাতিয়ার এ বার স্পাইক্যাম বা গোপন ক্যামেরা। সিপিএমের ঝালদা জোনাল সম্পাদক উজ্জ্বল চট্টরাজের দাবি, ‘‘ঝালদার ভোট অন্যরকম ভাবে হয়। এখানে ভোটের বাজারে টাকার খেলা চলে। ইতিমধ্যেই আমাদের কাছে খবর আসছে বিভিন্ন জায়গায় ভোটারের দর ওঠানামা করছে। এই খেলায় নজরদারির জন্যই আমরা এ বার ভোটে স্পাইক্যাম আমদানি করেছি। এই পুরশহরের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে আমাদের লোকজন ওই ক্যামেরা নিয়ে ঘুরছেন। ছবি পেলেই তা নির্বাচন আধিকারিকের হাতে তুলে দেব।’’

বস্তুত ভোটের ময়দানে পেন বা শাড়ির ক্লিপে রাখা গোপন ক্যামেরার আমদানি এই প্রথম নয়। গত পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে দলের কর্মীদেরও এই ধরনের গোপন ক্যামেরা নিয়ে ঘোরাঘুরি করার পরামর্শ দিয়েছিলেন সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেব। দিল্লিতে আম আদমি পার্টিও (আপ) দলের কর্মীদের একই ভাবে গোপন ক্যামেরা নিয়ে নামিয়েছিল। ঝালদার দায়িত্ব প্রাপ্ত জেলা সিপিএমের সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্যা মহম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ‘‘এখানে টাকার খেলা চলছে। তাই ক্যামেরার সাহায্যে কোনও ছবি পাওয়া গেলে তা প্রমাণ হিসেবে আরও জোরদার হবে।’’ তিনি জানান, ১২টি ওয়ার্ডের জন্য তাঁরা ১২টি ক্যামেরা কিনেছেন। প্রতিটি ওয়ার্ডে একেক দিন একেক জন ওই ক্যামেরা নিয়ে ঘুরছেন। সেই ব্যক্তি সিপিএমের দলীয় কর্মী হতে পারেন, আবার নাও হতে পারেন। এখনও কি তেমন কোনও ছবি পেয়েছেন? ভাঙতে চাননি সিপিএমের ঝালদার জোনাল সম্পাদক। তিনি দাবি করতে থাকেন, ‘‘চারপাশে টাকার খেলা চলছে। এই খেলায় কংগ্রেস থেকে তৃণমূল কেউই পিছিয়ে নেই।’’

সিপিএম গোপন ক্যামেরা নিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরছে শুনে চটে উঠেছে বামবিরোধী প্রায় সব দলই। কংগ্রেসের প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা এ বারের প্রার্থী প্রদীপ কর্মকার বলেন, ‘‘যদি প্রকৃত ভাবেই টাকার খেলা আটকানোর জন্য এ রকম ক্যামেরা আমদানি করে থাকে তাহলে স্বাগত। আমরাও চাই ভোটে টাকার খেলা বন্ধ হোক। কিন্তু সিপিএম যদি কোথাও টাকা দেয় সেই ছবি কে ধরবে ক্যামেরায়?’’ তৃণমূলের ঝালদার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজন ঘোষ বলেন, ‘‘সবাই তো জানে কোথায় টাকার খেলা চলছে। দেখি সেই ছবি ধরা পড়ে কি না। কোথাও নির্দল প্রার্থীর সঙ্গে সিপিএমের সহাবস্থান চলছে, আর নির্দল প্রার্থীদের কেউ কেউ টাকা ছড়াচ্ছেন এমন অভিযোগও তো উঠছে। দেখা যাক কী ছবি ওরা পায়।’’ বিজেপির ঝালদার মণ্ডলের সভাপতি সমীর কান্দু বলেন, ‘‘আমি নিজে ১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী। আগে এই ওয়ার্ডে অন্তত টাকার খেলা চলত না। এ বার সেই অভিযোগ উঠেছে। ভোটের ঢের আগে থেকেই দু-তিন দিন ছাড়া রাজনৈতিক নেতার মদতে ভূরিভোজের আয়োজন চলছে। এ তো ভোট কেনারই সামিল।’’ তাঁরও প্রশ্ন, সিপিএম টাকা ছড়ালে সেই ছবি কে তুলবে? সিপিএমের মহম্মদ ইব্রাহিম বলছেন, ‘‘পারলে ওঁরাও আমাদের ছবি তুলুক। প্রমাণ করুন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন