খয়রাশোল পরিদর্শন

‘কাজটা ঠিক হয়নি’, বকুনি কর্তার

পিছিয়ে পড়া ব্লক। একাধিক প্রতিকূলতা। তার পরেও খোলা জায়গায় শৌচকর্ম আটকে ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযানে’র অন্তর্গত ‘নির্মল বাংলা অভিযানে’ রাজ্যের অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছে খয়রাশোল। গ্রামকে প্লাস্টিক-মুক্ত করা থেকে জলসঙ্কট মেটাতে শৌচাগারের সঙ্গে পলিফাইবারের ট্যাঙ্ক যুক্ত করে দেওয়া— একটি কর্মসূচিকে প্রায় আন্দোলনের চেহারা দিয়েছে এই ব্লক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খয়রাশোল শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৬ ০১:২৮
Share:

মানব পুতুল নাটক দেখছে প্রতিনিধি দল। সোমবার খয়রাশোলে ছবিটি তুলেছেন দয়াল সেনগুপ্ত।

পিছিয়ে পড়া ব্লক। একাধিক প্রতিকূলতা। তার পরেও খোলা জায়গায় শৌচকর্ম আটকে ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযানে’র অন্তর্গত ‘নির্মল বাংলা অভিযানে’ রাজ্যের অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছে খয়রাশোল। গ্রামকে প্লাস্টিক-মুক্ত করা থেকে জলসঙ্কট মেটাতে শৌচাগারের সঙ্গে পলিফাইবারের ট্যাঙ্ক যুক্ত করে দেওয়া— একটি কর্মসূচিকে প্রায় আন্দোলনের চেহারা দিয়েছে এই ব্লক। তা স্বচক্ষে দেখতে এই ব্লকে এসেছেন বিশ্বব্যাঙ্কের প্রতিনিধিদল থেকে শুরু করে খোদ কেন্দ্রীয় সরকারের ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযানে’র (গ্রামীণ) সচিব নিপুণ বিনায়কও। কাজকর্ম খতিয়ে দেখতে এ বার সোমবার খয়রাশোল ঘুরে গেলেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের কমিশনার দিব্যেন্দু সরকার। সঙ্গী ইউনিসেফের দুই প্রতিনিধি গ্যাব্রিয়েল রোজারিও এবং দেবকুমার চক্রবর্তী।
এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ তাঁরা এসে পৌঁছন খয়রাশোল ব্লকে। জেলার কর্তাদের সঙ্গে একটি দীর্ঘ বৈঠকের পরে দুপুর ২টো নাগাদ তাঁরা পৌঁছে যান নির্মল ঘোষিত খয়রাশোল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার যাদবপুর নামে একটি আদিবাসী গ্রামে। সেখানে প্রথমে শৌচাগার ও নারী পাচার বিষয়ক একটি পুতুল নাটক তাঁরা দেখেন। সেখান থেকে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের মধ্যে সুঅভ্যাস গড়ে তুলতে নির্মল বাংলা কর্মসূচি কতটা কার্যকর হয়েছে, তা খতিয়ে দেখেন। এর পরে বাড়ি বাড়ি ঘুরে তৈরি শৌচাগারের মান, ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়ি, একশো দিনের কাজ নিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে রওনা হয়ে যান ‘প্লাস্টিক-মুক্ত’ বাবুইজোড় পঞ্চায়েতের কদমডাঙা গ্রামে। পরে দিব্যেন্দুবাবু বলেন, ‘‘খয়রাশোল নির্মল বাংলা কর্মসূচিতে গুছিয়ে কাজ করছে। অভিনব কিছু উদ্যোগ নিয়েছে।’’

Advertisement

• সটান গ্রামে

Advertisement

বাড়িতে বাড়িতে শৌচাগার তৈরি হলেও খয়রাশোলের যাদবপুর আদিবাসী পাড়াটিতে জলসঙ্কট রয়েছে। বালতি করে জল বয়ে এনে শৌচাগার ব্যবহার করাটাও সমস্যার। তাই প্রতিটি শৌচাগারের বাইরে একটি লোহার রড দিয়ে তৈরি ফ্রেমের উপর পলিফাইবারের ১০০ লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন জলট্যাঙ্ক বসিয়ে দিয়েছে ব্লক প্রাশসন। অভিনব সেই উদ্যোগ দেখতেই ব্লক ও জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে সটান ওই গ্রামে পৌঁছে যান দিব্যেন্দুবাবুরা। শৌচাগারের গঠন ও জলের ব্যবস্থার অভিনবত্বের প্রশংসা করলেও ভজহরি হেমব্রম, মঙ্গলি মারান্ডিদের বাড়িতে গিয়েই ছন্দপতন ঘটে। শৌচাগারের জন্য মাটির তলায় তৈরি চেম্বারের মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন দিব্যেন্দুবাবু। দায়িত্বে থাকা ভদ্রলোককে সবার সামনেই কার্যত বকুনি দিয়ে বলেন, ‘‘কাজটা ঠিক হয়নি। ঠিক করে দেবেন।’’

• কার্ড যাচাই

গ্রামে ইন্দিরা আবাসের বাড়ি কেমন তৈরি হয়েছে, তা দেখতে খয়রাশোলের যাদবপুরের ফুলমণি মারান্ডির বাড়িতে হাজির রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নন দফতের কমিশনার। বাড়িটি পছন্দ হলেও কীভাবে টাকা ঢুকেছে ফুলমণির অ্যাকাউন্টে, তা খতিয়ে দেখেন তিনি। তাঁর পরেই হঠাৎ প্রশ্ন, ‘‘১০০ দিনের কাজ পান?’’ উত্তরে ফুলমণি সম্মতি দেন। কমিশনার তখন বলেন, ‘‘কই জব কার্ড নিয়ে আসুন তো।’’ একটি ছেলের, অন্যটি নিজের— ফুলমণি দু’টি জব কার্ডই তুলে দেন দিব্যেন্দুবাবুর হাতে। খতিয়ে দেখে বিডিও তারকনাথ চন্দ্রকে ডেকে দিব্যেন্দুবাবু বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের লোক কই? ২০১৩ সালের পরে কোনও এন্ট্রি নেই কেন?’’ কার্ডে এন্ট্রি দেখতে না পেয়ে ক্ষুব্ধ হলেও একটি বিষয়ের প্রশংসা না করে পারেননি ওই আমলা। দিব্যেন্দুবাবু বলেন, ‘‘এটা দেখে ভাল লাগল যে জবকার্ড উপভোক্তার কাছেই রয়েছে।’’ তখন সংবাদমাধ্যম তুলে ধরে সম্প্রতি ষাটপলশা পঞ্চায়েতে মজুরদের জবকার্ড হাতিয়ে দুর্নীতির প্রসঙ্গ। কমিশনার তখন বলেন, ‘‘জবকার্ড উপভোক্তার কাছ থেকে অন্য কেউ নিয়ে নিজের কাছে রাখলে, তা দণ্ডনীয় অপরাধ। আশা করি জেলা প্রশাসন এই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। তবে নির্দিষ্ট অভিযোগ এলে আমিও বিষয়টি দেখব।’’

• জল কই

নিজেদের উদ্যোগে তাঁরা গ্রামকে প্লাস্টিক-মুক্ত করেছেন। তাই উপহার হিসাবে খয়রাশোলের কদমডাঙা গ্রামের প্রতিটি পরিবারকে বালতি, মগ, হ্যান্ডওয়াশ, তোয়ালে এবং স্যানিটারি ন্যাপকিন দিল জেলা প্রশাসন। এ দিন রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের উপস্থিতিতে ৩১০টি পরিবার ও খয়রাশোলের যাদবপুর আদিবাসী পাড়ার ৭৪টি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হল ডায়েরিয়া-কিটও। উপহার পেলেও এলাকাবাসীর প্রশ্ন ছিল, জল সমস্যার স্থায়ী সমাধান কবে হবে? কনিশনার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘‘উপভোক্তা ৯০০ টাকা দেওয়ার পরে ভর্তুকি বাবদ ১০ হাজার টাকা সরকার দেয়। কিন্তু আদতে মঞ্জুর হয় ১২ হাজার টাকা। একটি গ্রাম পঞ্চায়েত সম্পূর্ণ নির্মল হলে, সেই বাড়তি টাকা দিয়ে জলের জোগান করা যেতেই পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন