বাতিল নোটে ধূপ, নতুন নোটের জন্মদিন

সর্বত্র পুজো মরসুম শেষ। কিন্তু সোনামুখীর মানুষ এখনও উৎসবেই মেতে। কারণ দুর্গাপুজো, কালীপুজোর থেকে কোনও অংশে কম নয় এই শহরে দেব সেনাপতি কার্তিকের পুজোর জৌলুস। সে কারণেই সোনামুখীর অন্য নাম ‘কালী-কার্তিকের’ শহর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সোনামুখী শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৬ ০২:০৩
Share:

সোনামুখীর বড়কার্তিকের মণ্ডপ সেজে উঠছে রেল স্টেশনের আদলে। —নিজস্ব চিত্র।

সর্বত্র পুজো মরসুম শেষ। কিন্তু সোনামুখীর মানুষ এখনও উৎসবেই মেতে। কারণ দুর্গাপুজো, কালীপুজোর থেকে কোনও অংশে কম নয় এই শহরে দেব সেনাপতি কার্তিকের পুজোর জৌলুস। সে কারণেই সোনামুখীর অন্য নাম ‘কালী-কার্তিকের’ শহর।

Advertisement

বুধবার থেকেই কার্তিক পুজোয় মেতেছেন সোনামুখীর মানুষ। শহরের কার্তিক পুজোর থিমে এ বার উঠে এসেছে এলাকার হাতি-সমস্যা থেকে উরি হামলা ও সার্জিক্যাল স্ট্রাইক— সবই। কেন্দ্রের নোট বদলের সিদ্ধান্ত নিয়ে রসিকতাও দেখা যাচ্ছে মণ্ডপে। ঠাকুর দেখতে মণ্ডপে ভিড় জমানো দর্শনার্থীরা বেশ তারিয়ে উপভোগ করছেন সেই রস।

সোনামুখীর বড়কার্তিক পুজো বেশ প্রাচীন বলেই জানাচ্ছেন আয়োজকরা। তাঁদের মণ্ডপের থিম সোনামুখীর বিডিআর রেল স্টেশন। পাশাপাশি ৫০০ ও হাজার টাকার বাতিল হওয়া নোটে ধূপ ও মালা দিয়ে শোকজ্ঞাপন করার দৃশ্য দেখেও অনেকে বেশ আমোদ পাচ্ছেন। আবার নতুন চালু হওয়া ২০০০ টাকার নোটের জন্মদিন উপলক্ষে ওই নোটের সামনে কেক সাজিয়ে রাখা হয়েছে। পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য তথা সোনামুখী পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দোলন দত্তের কথায়, “থিমের পাশাপাশি নোট বাতিল নিয়ে রসিকতাও সাধারণ মানুষের নজর কাড়ছে। অনেকেরই পছন্দ হয়েছে পুরো ভাবনা।’’

Advertisement

নোট বাতিল নিয়ে আরও চমক নিয়ে আসতে চলেছে সোনামুখীর বকুলতলা কার্তিক পুজো কমিটি। ওই পুজো কমিটির সম্পাদক অভিজিৎ পাল জানান, কার্তিক ভাসানে তাঁরা নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে একটি থিম করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর কথায়, “আগে শ্রমিকেরা মালিক পক্ষের কাছে প্রয়োজনে বাড়তি টাকা চাইতে গেলে, মালিকরা দিতে চাইতেন না। কিন্তু বড় নোট বাতিল হওয়ার পরে মালিকরাই শ্রমিকদের হাতে-পায়ে ধরে কিছু বাড়তি বাতিল নোট তাঁদের হাতে গুঁজে দিয়ে তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করতে অনুরোধ করছেন।” তিনি জানান, ভাসানের ট্যাবলোতে মাটির মডেলের মাধ্যমে এই ভাবনা তাঁরা তুলে ধরবেন।

নীলবাড়ি কার্তিক পুজোর এ বারের থিম, ভারতীয় সেনার বীরত্ব। এই পুজো কমিটির মণ্ডপে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ঘটে যাওয়া নানা যুদ্ধের ছবি তুলে ধরা হয়েছে। পুজো কমিটির সম্পাদক মনোজিৎ ঘোষের কথায়, “দেশের বীর সেনাদের আমরা এ বারের পুজোয় স্মরণ করছি। সেনাদের যাবতীয় সাফল্য আমরা পুজোর মণ্ডপে ছবির আকারে তুলে ধরেছি।”

সোনামুখীর একটি বাস্তব সমস্যা হল দলমার হাতির উপদ্রব। শহরের শিখা কার্তিক পুজো কমিটির এ বারের থিমই হল দলমার হাতি। পুজো কমিটির সম্পাদক উদয় দত্ত জানাচ্ছেন, হাতির দল জঙ্গল থেকে বের হয়ে নদী পার হচ্ছে, এই দৃশ্য মণ্ডপে তুলে ধরা হয়েছে।

সোনামুখীর অন্যতম বড় কার্তিক পুজো হল মধ্যম কার্তিক পুজো। এখানে মণ্ডপের সামনে পাঁচদিন ধরে মেলা চলছে। প্রতিমা দর্শনের সঙ্গেই মেলায় বিকিকিনি বাড়তি পাওয়া দর্শনার্থীদের কাছে। মেলা কমিটির সদস্য বাসরি ঘর জানান, পুজোর প্রতিদিনই প্রচুর ভক্তসমাগম হচ্ছে।

সোনামুখীর আরও একটি প্রাচীন কার্তিক পুজো হল ঘুর্ণি কার্তিক। একই আকৃতির চারটি কার্তিক একসঙ্গে মণ্ডপে রাখা হয়। মোটরের সাহায্যে সেই মণ্ডপ ঘুরতে থাকে। পুজো কমিটির সম্পাদক অক্ষয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই প্রথা প্রথম থেকেই চলে আসছে। কার্তিক চারিদিকে ঘুরতে থাকেন বলেই এই অভিনব নামকরণ।’’

রবিবার রাত থেকে সোনামুখীর কার্তিক ভাসান শুরু হবে। কালী ভাসানের মতোই এই শহরের কার্তিক ভাসানও বেশ আড়ম্বরপূর্ণ। সেই প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছে বিভিন্ন পুজো কমিটি। সোনামুখীর পুরপ্রধান সুরজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ভাসান-পর্ব যাতে শান্তিপূর্ণ ভাবে শেষ হয়, সে জন্য পুরসভা যাবতীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন