মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও বাঁকুড়ায় অবৈধ খাদানের রমরমা চলছেই

যন্ত্র নামিয়ে উঠছে বালি

মেশিন নামিয়ে নদী থেকে বালি তোলা যাবে না। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এই স্পষ্ট নির্দেশ থাকলেও বাস্তবে সেটাই ভাঙা হচ্ছে। এতে নদী থেকে যথেচ্ছ ভাবে বালি তোলায় নদীর গতিপথ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখছেন অনেকে। তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ না করলে এটাই চলতে থাকবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৭ ০১:৩৫
Share:

অবাধ: নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে বিষ্ণুপুরের সারদা সেতুর কাছে মেশিনের বালি কাটা চলছে। ছবি: শুভ্র মিত্র

মেশিন নামিয়ে নদী থেকে বালি তোলা যাবে না। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এই স্পষ্ট নির্দেশ থাকলেও বাস্তবে সেটাই ভাঙা হচ্ছে। এতে নদী থেকে যথেচ্ছ ভাবে বালি তোলায় নদীর গতিপথ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখছেন অনেকে। তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ না করলে এটাই চলতে থাকবে।

Advertisement

দ্বারকেশ্বর নদে বিষ্ণুপুরের সারদা সেতুর কাছে দ্বারিকা গোঁসাইপুর গ্রাম পঞ্চায়তের দেউলি গ্রামের পাশে দিনে-রাতে মাটি কাটার মেশিন নামিয়ে নির্বিচারে বালি তোলা চলছে। শুধু তাই নয়, বালি যে ভাবে কাটা চলছে, তাতে সেতুরও ক্ষতির আশঙ্কা দেখছেন বাসিন্দারা।

সম্প্রতি ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, বিষ্ণুপুর-সোনামুখী রাস্তার উপরে সারদা সেতুর কাছে বালি কাটা চলছে। পাড়ের কাছেও বালি কাটার মেশিন থাবা বসিয়েছে তাও দেখা গিয়েছে। দেউলি গ্রামের সুনীল রায়, মদন রায়, মধুসূদন সিংহ ঠাকুর বলেন, ‘‘বেশ কয়েক মাস ধরে বন্ধ ছিল বালি তোলার কাজ। আমরা একটু শান্তিতে ছিলাম। কিন্তু আবার শুরু হয়ে গিয়েছে ব্যবসা। যে ভাবে মেসিন দিয়ে দানবের মত বালি কাটতে কাটতে গ্রামের দিকে এগিয়ে আসছে, তাতে গ্রামটাই না খেয়ে ফেলে!’’

Advertisement

গ্রামবাসীর দাবি, দিনের বেলা কম কাজ হলেও রাতে বেশ কয়েকশো গাড়ি বালি তুলে নিয়ে যাচ্ছে। নদের বুকে একটানা মেশিনের শব্দে অনেকের রাতের ঘুম ছুটে যাচ্ছে। বালি কাটার পদ্ধতি নিয়েও গ্রামবাসীর অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের দাবি, নদের বুকে যত্রতত্র বড় বড় গর্ত করে বালি তুলছে। তাতে ওই গর্তের জলে পরে স্নান করতে নামলে বিপদের সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। রাস্তার বালির গাড়ির দাপাদাপিতে পথ চলতেও তাঁরা আতঙ্কে থাকেন বলে জানিয়েছেন।

বিষ্ণুপুর মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক কিঙ্করনাথ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, ‘‘বিষ্ণুপুর ব্লকের ঠাকুরপুকুর মৌজায় ১২১৪ দাগে , জিএল নম্বর ৮৫ তে এক ব্যবসায়ী ৬ দশমিক ৭৯ একরে বালি তোলার অনুমতি পেয়েছেন সম্প্রতি। কিন্তু কোনও মতেই যন্ত্র নামিয়ে নদের বুক থেকে বালি তোলা যায় না। সেতুর কাছ থেকে বালি তোলাও অন্যায়। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ তাঁর দাবি, নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি বালি নিয়ে যাওয়া গাড়ি ধরপাকড় অভিযান চলছেই। জরিমানাও হচ্ছে।

তবে অনুমতিপ্রাপ্ত বালি ব্যবসায়ীর স্বামী সারদা সেতুর কাছ থেকে বালি তোলার অভিযোগ না মানলেও মেশিনে বালি তোলার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে মেশিন দিয়ে বালি তুলছি।’’ তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ভূমি দফতর থেকে বালি তোলার জায়গা চিহ্নিত করে দেয়নি। ফলে গ্রামবাসীরাও ভুল বুঝছেন।

দেউলি গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘প্রশাসন এগিয়ে না এলে আমাদের আশঙ্কা এ বার বর্ষায় গ্রামটা না বানভাসি হয়ে যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন