পুজোর মুখে বাড়ছে ক্ষোভ

আট মাসেও বাকি ধান বিক্রির টাকা

বর্ষার ধান সমবায়ের হাতে তুলে দেওয়ার পরে চলে চলেছে আর একটা বর্ষাকাল। কেটে গিয়েছে নয় নয় করে আটটা মাস। এরপরেও মেলেনি ধান বিক্রির টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ৩৩ লক্ষ টাকা বাকি টাকায় আতান্তরে পড়েছেন প্রায় শ’দেড়েক চাষি। মাটি হতে বসেছে পুজোর আনন্দ!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৩৬
Share:

বর্ষার ধান সমবায়ের হাতে তুলে দেওয়ার পরে চলে চলেছে আর একটা বর্ষাকাল। কেটে গিয়েছে নয় নয় করে আটটা মাস। এরপরেও মেলেনি ধান বিক্রির টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ৩৩ লক্ষ টাকা বাকি টাকায় আতান্তরে পড়েছেন প্রায় শ’দেড়েক চাষি। মাটি হতে বসেছে পুজোর আনন্দ!

Advertisement

সরকার নির্ধারিত মূল্যে, ১৪১০ টাকায় সাঁইথিয়া দেরিয়াপুর এলাকার ওই চাষিরা বর্ষার স্বর্ণ-ধান দিয়েছিলেন দেরিয়াপুর অঞ্চল কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতিকে। এখনও মেটানো সেই টাকাই। চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, কারও বাকি দশ হাজার টাকা তো কারও দেড় লক্ষ! পুনুর গ্রামের বাসিন্দা কমলাপতি আচার্যের বাকি রয়েছে ২৪ হাজার, রায়হাটের বাহা সোরেনের প্রায় ৩০ হাজার, বৈদ্যপুরের সুব্রত পালের ৪০ হাজার, দেরিয়াপুরের বরুণ সিংহের বাকি প্রায় ৬০ হাজার। এঁরা জানাচ্ছেন, যখন স্বর্ণ-ধান ওঠে তখন বাজারে দাম কম ছিল। কমলাপতির কথায়, ‘‘১০০০-১০৫০ টাকা মতো দাম ছিল খোলাবাজারে। সেই সময়ে সরকার নির্ধারিত মূল্য ছিল ১৪১০ টাকা। ফলে সমবায়ের মাধ্যমে সরকারকে ধান দিয়েছিলাম। তার পরে ভোগান্তি হবে কে জানত?’’

কেন দাম মেটানো গেল না?

Advertisement

ওই সমবায়ের সম্পাদক হরেকৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘‘গত ১১ জানুয়ারি থেকে ধান কেনা শুরু হয়। ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত যাঁদের ধান কেনা হয়েছে, তাঁদের ধানের দাম মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপর থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত যে ২৩৮৩ কুইন্টাল ধান কেনা হয়, তা দেওয়া যায়নি।’’ কেন? হরেকৃষ্ণবাবুর সাফাই, যে চালকলকে ধান দেওয়া হয়েছিল, সেই চালকল থেকে খাদ্য দফতর এখনও চাল নেয়নি। ফলে দফতর টাকা মেটানোর ছাড়পত্রও বেনফেডকে দেয়নি। গোল তৈরি হয়েছে সেখানেই।

বীরভূম জেলা খাদ্য দফতরের জেলা আধিকারিক (ডিসি) দীপেন্দু বড়ুয়া পরিস্কার জানিয়েছেন, চাষিদের ধানের দাম সমবায়েরই দিয়ে দেওয়ার কথা। দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সমবায় নিজস্ব তহবিল থেকে ধান কিনে পরে বেনফেড টাকা দিলে তা মিটমাট হয়ে যায়। দীপেন্দুবাবুও বলছেন, ‘‘এ রকম কোনও নিয়ম নেই যে, চালকল খাদ্য দফতরকে চাল দেবে তারপর কৃষকেরা তাঁদের ধানের দাম পাবেন। বরং নিয়ম হল, যে সমবায় ধান কিনবে, সেই সমবায় কৃষকদের ধানের টাকা মিটিয়ে দেবে। পরে খাদ্য দফতর চালকল থেকে চাল নেওয়ার পরে বেনফেড মাধ্যমে সমবায় টাকা পাবে।’’

তা হলে?

ওই সমবায়ের ম্যানেজার অরুণ সেন বলেন, ‘‘আসল কথাটি হল সমবায়ের নিজস্ব তহবিলে টাকা নেই। তার ফলেই মেটানো যাচ্ছে না টাকা।’’ তা হলে কি পুজোর মুখেও মিলবে না হকের টাকা? এ বার অবশ্য আশার কথা শুনিয়েছেন সমবায়ের ম্যানেজার। তাঁর আশ্বাস, ‘‘খুব চেষ্টা করছি যাতে পুজোর আগেই কৃষকদের ধানের দাম মিটিয়ে দেওয়া যায়।’’

এ দিকে, সময়ে ধানের দাম না পাওয়ায় চাষিদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অনেকেই কৃষি-ঋণ শোধ করতে পারেননি। ফলে মেলেনি এ বার কৃষি-লোনও। তার প্রভাব পড়েছে গত রবিশষ্য ও এ বারের বর্ষার চাষে। তারই মধ্যে এসে গিয়েছে উৎসবের দিন।

চাষিদের প্রশ্ন, ধান দেওয়ার পরেও টাকার জন্যে কেন হন্যে হয়ে ঘুরতে হবে? পরের চাষ যে মার খেল তার ক্ষতিপূরণইবা কে দেবে?

সদুত্তর দিতে পারছেন না কেউই। চাষিদের দুর্ভোগের কথা জেনে জেলা প্রশাসনের এক কর্তার আশ্বাস, ‘‘এখন যে কোনও মূল্যে বকেয়া টাকা মেটাতে হবে।’’ কেন এমনটা হল— তার কৈফিয়ত চাওয়া হতে পারে সমবায় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও।

শিক্ষককে সম্মান। চলতি বছরের ‘জেলা শিক্ষক সম্মান’ অনুষ্ঠান হল বোলপুরে। উদ্যোক্তা পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির বীরভূম জেলা শাখা। সংগঠনের জেলা সভাপতি প্রলয় নায়েক জানান, জেলার মোট ৪১ জন শিক্ষককে এই সম্মান দেওয়া হয়েছে। জেলার মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুলের ২৬ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা, তিন মহকুমার দু’টি করে মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের ছ’জন, তিনটি মাদ্রাসার তিন জনকে দেওয়া হয় ওই সম্মান ও সংবর্ধনা। জেলার শিক্ষারত্ন পাওয়া দুই শিক্ষক এবং বিদ্যালয় রত্ন পাওয়া ওই বিদ্যালয়কেও সংবর্ধনা জানানো হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন