District Magistrate

ফল চাষ নয় কেন, অসন্তুষ্ট জেলাশাসক 

লকডাউন পরবর্তী সময়ে জেলার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এই প্রকল্পকে পাখির চোখ করেছে জেলা প্রশাসন। প্রশাসন মনে করছে, আনাজ-সহ ফলের চাষ, প্রাণিপালনের মধ্যে দিয়েই ঘুরে দাঁড়াতে পারে পুরুলিয়া।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

পুরুলিয়া ও বোরো শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২০ ০৫:৩৩
Share:

চারাগাছের উপরে আচ্ছাদন দিচ্ছেন জেলাশাসক। ফুলবেড়িয়ায়। নিজস্ব চিত্র

আড়শার পরে এ বার মানবাজার ২ ব্লক। শনিবার ওই ব্লকের মাটির সৃষ্টি প্রকল্পের কাজকর্ম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার।

Advertisement

এ দিন মানবাজার ২ ব্লকের আঁকরো-বড়কদম পঞ্চায়েতের দুর্জয়পাড়া গ্রামে যান জেলাশাসক। জেলা প্রশাসন এই প্রকল্পে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্থানীয় মানুষজন যাতে বেশি লাভবান হন, সে জন্য ফলের গাছ ও অর্থকরী ফসলের চাষ করতে বলেছে। কিন্তু দুর্জয়পাড়া এলাকায় কিছু জমিতে ফলের গাছ লাগানো হলেও অন্যত্র সোনাঝুরি চারা লাগানো হয়েছে। সেখানে গাছের ফাঁকে ফাঁকে ঢেঁড়শ ও লাউ গাছ শুকিয়ে ছিল। সব দেখে জেলাশাসক অসন্তুষ্ট হন। ব্লক প্রশাসন ও কৃষি দফতরের আধিকারিকদের কাছে তিনি জানতে চান— ‘‘সোনাঝুরি গাছ মানুষকে কতটুকু রোজগার দিতে পারবে? এই জমিতে অন্য কোনও চাষ বা ফলের গাছ কিংবা অড়হর ডালের চাষ করা যেতে পারত।’’ তিনি ব্লক প্রশাসনকে নির্দেশ দেন, যে চাষ করে মানুষজন কয়েক মাস অন্তর হাতে টাকা পান, তেমন গাছ লাগাতে হবে। সে জন্য প্রয়োজনীয় সেচের পরিকাঠামো গড়ার নির্দেশ দেন তিনি।

ওই জমিতে কোথা থেকে সেচের জল মেলে তা জানতে চাইলে ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকেরা বলেন, ‘‘কিছুটা দূরে নিচু জমিতে জল জমে। সেখান থেকে জল আনা হয়।’’ সেখানে গিয়ে জেলাশাসক জানান, ওই জল সেচের জন্য যথেষ্ঠ নয়। দ্রুত সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। তত দিন বিকল্প আয়ের জন্য স্বনির্ভর দলকে মুরগির বাচ্চা দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

Advertisement

বিডিও (মানবাজার ২) তারাশঙ্কর প্রামাণিক বলেন, ‘‘ওই জমিতে উদ্যান পালন দফতর ফলের বাগান তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছিল। পাশের একটি জমিতে ফলের গাছ লাগানো হয়েছে। কিন্তু এই জমির জন্য সময় মতো ফলের চারা মেলেনি। তাই গ্রাম পঞ্চায়েত সামাজিক বনসৃজন প্রকল্পে সোনাঝুরি গাছ লাগিয়েছিল। তবে জেলাশাসক যা নির্দেশ দিয়েছেন, সেই মোতাবেক দ্রুত পরিকল্পনা নেওয়া হবে।’’

এই ব্লকেরই বড়গোড়িয়া-জামতোড়িয়া পঞ্চায়েতের ফুলবেড়িয়াতে ফলের বাগান দেখে সন্তোষ প্রকাশ করে ব্লক প্রশাসনকে সেখানে স্ট্রবেরি চাষের পরামর্শ দিয়েছেন জেলাশাসক। তাঁর যুক্তি, পাশে বান্দোয়ানে ভাল স্ট্রবেরি চাষ হচ্ছে। তা লাভজনকও।

গত বুধবার আড়শা ব্লক কৃষি দফতরও একই ভাবে জেলাশাসকের সমালোচনার মুখে পড়ে। সে দিন আড়শার বান্দুডির কাজকর্ম তিনি সন্তোষ প্রকাশ করলেও লছমনপুর ও হেঁটগুগুই গ্রামের চাষাবাদের কাজ দেখে তিনি মোটেই সন্তুষ্ট হননি। ব্লক প্রশাসনকে তিনি বকেয়া কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেন।

লকডাউন পরবর্তী সময়ে জেলার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এই প্রকল্পকে পাখির চোখ করেছে জেলা প্রশাসন। প্রশাসন মনে করছে, আনাজ-সহ ফলের চাষ, প্রাণিপালনের মধ্যে দিয়েই ঘুরে দাঁড়াতে পারে পুরুলিয়া। এতে শক্ত হবে গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে পুরুলিয়ার নানা প্রান্তে বয়ে চলে যাওয়া বৃষ্টির জল ধরে রাখার ব্যবস্থা-সহ বিভিন্ন দফতরকে এক ছাতার তলায় এনে শুরু হয়েছে চাষাবাদের পরিকাঠামো গঠনের কাজ। সেই সঙ্গে ওই কাজে যুক্ত মানুষজনের যাতে অর্থের সংস্থান হয়, সে দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এক একটি এলাকা ধরে কী ধরনের কাজ করতে হবে তা নিয়ে জেলাস্তরে বৈঠক হয়েছে। এ বার জেলাশাসক নিজে বিভিন্ন ব্লকে গিয়ে এই প্রকল্পের কাজ দেখাশোনা করছেন। কথা বলছেন প্রকল্পে যুক্ত মানুষজনের সঙ্গেও। জানতে চাইছেন তাঁদের অভিজ্ঞতা। সেই অনুযায়ী খসড়া পরিকল্পনার প্রয়োজনীয় রদবদলও করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন