‘না পারলে ছেড়ে দিন’, কড়া ডিএম  

ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পুরসভার নির্বাহী আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ সরকার-সহ দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা। কিন্তু পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায় ছিলেন না। জেলাশাসক তাঁকে খবর পাঠিয়ে ডেকে নেন। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৯ ০০:২৫
Share:

সরেজমিন: রসিকগঞ্জে নির্মীয়মাণ দোকানঘর পরিদর্শন। নিজস্ব চিত্র

রসিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের অসমাপ্ত দোকানগুলি নির্মাণ পুরসভা করতে পারবে কি না, পুরপ্রধানকে ডেকে তা স্পষ্ট করে জানাতে নির্দেশ দিলেন জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস। সেই সঙ্গে তিনি এ-ও জানিয়ে দিলেন, দোকান নির্মাণের জন্য পুরসভা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোনও টাকা নিতে পারবে না। বুধবার বিকেলে বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসকের অফিসে এই বৈঠকের পরে উচ্ছ্বসিত বাসস্ট্যান্ডের দোকানদারেরা। বাসস্ট্যান্ড চালু হওয়ায় আশায় স্বস্তিতে যাত্রীরাও।

Advertisement

এ দিন বৈঠকে পূর্ত দফতর, ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পুরসভার নির্বাহী আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ সরকার-সহ দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা। কিন্তু পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায় ছিলেন না। জেলাশাসক তাঁকে খবর পাঠিয়ে ডেকে নেন।

ঘণ্টা দুয়েকের বৈঠকের পরে জেলাশাসক বলেন, ‘‘বিষ্ণুপুর পুরসভা কাজ করতে না পারলে বলে দিক। জেলা প্রশাসনই পুরনো ওয়ার্ক অর্ডার বাতিল করে দোকানঘর নির্মাণ করে উপভোক্তাদের দেবে। তাতে খুব তাড়াতাড়ি এখান থেকে যাত্রী পরিষেবা চালু করা যাবে। ওই কাজের জন্য যে টাকা অবশিষ্ট রয়েছে, সেই টাকায় কাজ শেষ করে পুরসভা জেলা প্রশাসনের হাতে তুলে দেবে।’’ তিনি জানান, জেলা প্রশাসন বাকি কাজের জন্য নতুন করে বাজেট তৈরি করে দফতরের কাছ থেকে টাকা চেয়ে শেষ করবে।

Advertisement

বৈঠক থেকে বেরিয়ে পুরপ্রধান অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে সূত্রের খবর, তিনি বৈঠকে জানিয়েছেন, বোর্ড অব কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলোচনা করে মঙ্গলবার জেলাপ্রশাসনকে সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন।

গত বছরের অক্টোবর মাসে পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী রসিকগঞ্জের নবনির্মিত বাসস্ট্যান্ডের উদ্বোধন করেন। কিন্তু বাসস্ট্যান্ডের চত্বরের ১৩৮টি দোকান তৈরির কাজ থমকে যায়। তার জেরে বাসস্ট্যান্ডও এখনও পর্যন্ত চালু হয়নি। দোকানদারদের মতোই সমস্যায় পড়েছেন বাসকর্মী থেকে যাত্রীরাও।

প্রশাসন সূত্রের খবর, পরিবহণ দফতর বাসস্ট্যান্ড তৈরি করার পরে ওই দোকান নির্মাণের জন্য বিষ্ণুপুর পুরসভাকে দায়িত্ব দেয়। পুরসভা দাবি করে, ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা দোকানগুলি নির্মাণের জন্য বরাদ্দ হয়েছে। তার মধ্যে পুরসভার হাতে আসে ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। সেই টাকায় দোকান তৈরি কিছুটা এগোলেও বাকি রয়ে গিয়েছে অনেকখানি কাজ। সেই কাজ শেষ করার জন্য পুরসভা দোকানদারদের কাছ থেকে টাকা দাবি করছে। যা নিয়ে দোকানদারদের সংগঠন ‘রসিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি’ ও বিষ্ণপুর পুরসভার দ্বন্দ্ব চরম আকার নিয়েছে। শ্যামবাবু বারবার জানাচ্ছিলেন, দোকানদারদেরই বাকি টাকা দিতে হবে। শেষে অবিলম্বে সরকারি টাকাতেই দোকানগুলি নির্মাণের কাজ শেষ করার দাবিতে মঙ্গলবার সংগঠন রসিকগঞ্জে রাস্তা অবরোধ করে। তার জেরে এ দিন জেলাশাসক বিষ্ণুপুর পুরসভা, নিয়ে এ দিন বৈঠকে বসেন।

বৈঠকের পরে জেলাশাসক বলেন, ‘‘দোকানদারদের সঙ্গে আগে যে রেজোলিউশন হয়েছিল, তাতে কোথাও তাঁদের দোকান তৈরির জন্য টাকা দিতে হবে বলে এমন কোনও কথা লেখা ছিল না। সুতরাং দোকানদারদের টাকা দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।’’ বৈঠকের পরে ‘রসিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি’ স্বস্তি প্রকাশ করেছে। সমিতির সম্পাদক অরুণ দে বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসনের উপরে আমাদের পূর্ণ আস্থা ছিল। এ দিনের বৈঠকে জেলাশাসক শীঘ্রই দোকান তৈরি করে আমাদের হাতে তুলে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়ায় আমরা খুশি।’’

তবে এখনও পর্যন্ত পুরসভা দোকান তৈরির যে কাজ করেছে, তার মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন জেলাশাসক। বৈঠকের পরে জেলাশাসক বাসস্ট্যান্ড পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি দোকান নির্মাণের কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। জেলাশাসক পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারদের প্রশ্ন করেন, ‘‘দোকানগুলি যখন তৈরি হচ্ছিল, তখন কি আপনারা নিয়মিত পরিদর্শন করেছিলেন?’’

পুরসভার নির্বাহী আধিকারিক ‘‘হ্যাঁ’’ বলে ঘাড় নাড়েন।

তাতে অবশ্য পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদেরও সন্তুষ্ট হতে দেখা যায়নি। তাঁরা পুরসভার ইঞ্জনিয়ারদের ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে নানা টেকনিক্যাল প্রশ্ন করেন। পুরসভার নির্বাহী আধিকারিক বলেন, ‘‘বাসস্ট্যান্ডের বিষয়টি পুরোপুরি আমি জানি না। ইঞ্জিনিয়ারিং দফতর বিষয়টি দেখেছে। বাকি যা কিছু বলার পুরপ্রধান বলবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন