দুই যন্ত্র কাজে লাগিয়ে জটিল অস্ত্রোপচার

রোগিণীর পিত্তনালিতে জমে থাকা পাথর মাইক্রোসার্জারি করে বার করলেন বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের শল্য চিকিৎসকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৪০
Share:

রোগিণীর সঙ্গে উৎপলবাবু। নিজস্ব চিত্র

রোগিণীর পিত্তনালিতে জমে থাকা পাথর মাইক্রোসার্জারি করে বার করলেন বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের শল্য চিকিৎসকেরা। উপযুক্ত যন্ত্র না থাকায় চিকিৎসকেরা নিজেরাই উদ্ভাবনী ক্ষমতায় দু’টি যন্ত্র কাজে লাগিয়ে জটিল ওই অস্ত্রোপচার করেছেন বলে দাবি করলেন বাঁকুড়া মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান ও হাসপাতালের শল্য বিভাগের প্রধান উৎপল দে।

Advertisement

বুধবার দুর্গাপুরের নীলডাঙার বাসিন্দা ছায়া আঙুরের পিত্তনালিতে স্বল্পক্ষত অস্ত্রোপচার করেন উৎপলবাবু। তাঁর সঙ্গে ছিলেন চিকিৎসক শিবশঙ্কর কুইরি, অমিতকুমার দাস প্রমুখ। পরে, মেডিক্যালের অধ্যক্ষ ও শল্যর বিভাগীয় প্রধান দাবি করেন, মাইক্রোসার্জারি করে পিত্তনালি থেকে পাথর বার করার জন্য প্রয়োজনীয় কোলেডোকোস্কোপ যন্ত্র বাঁকুড়া মেডিক্যালে নেই। তাই এত দিন পিত্তনালি থেকে পাথর বার করতে রোগীর পেট কাটতে হত। এতে রোগীর কষ্ট যেমন ছিল, তেমনই সুস্থ হতেও সময় লাগত অনেক। সেই সমস্যা এড়াতেই এই অভিনব পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।

কী ভাবে অস্ত্রোপচার হয়েছে?

Advertisement

উৎপলবাবু বলেন, ‘‘পিত্তনালিতে অস্ত্রোপচার চালানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কোলেডোকোস্কোপ যন্ত্রে ক্যামেরা ও আলোর সাহায্যে পাথর বার করার ব্যবস্থা রয়েছে। সেই যন্ত্রের দাম অনেক। তা আমাদের কাছে নেই। তবে, ফাইবার অপটিক ব্রঙ্কোস্কোপ মেশিন ও ল্যাপ্রোস্কোপ যন্ত্রে রয়েছে। ফাইবার অপটিক ব্রঙ্কোস্কোপ যন্ত্রে ক্যামেরা ও আলো রয়েছে।’’

তিনি জানান, ওই যন্ত্রের সাহায্যে সাধারণত শ্বাসনালীতে আটকে থাকা বস্তু বার করা এবং রোগীকে অজ্ঞান করা হয়। তবে, পিত্তনালি থেকে পাথর বার করতে পারে না ওই যন্ত্র। তাই ফাইবার অপটিক ব্রঙ্কোস্কোপের সঙ্গে ও ল্যাপ্রোস্কোপ যন্ত্র কাজে লাগিয়ে পিত্তনালি থেকে সফল ভাবে তিনটি পাথর বার করা গিয়েছে।

অধ্যক্ষ বলেন, “পিত্তনালিতে মাইক্রোসার্জারি রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে সাধারণত হয় বলে শোনা যায় না। কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে কোলেডোকোস্কোপের সাহায্যে অস্ত্রোপচার করে। সেক্ষেত্রে খরচ অনেক। তবে, এ বার থেকে আমরাও ওই দুই যন্ত্রের সাহায্যে নিখরচায় এখানে অস্ত্রোপচার করব।’’

ছায়াদেবীর স্বামী পেশায় রাজমিস্ত্রি সাধন আঙুর বলেন, “স্ত্রীকে নিয়ে দেড় বছর ধরে ভুগছি। পেটে যন্ত্রণা, বমি ও তার সঙ্গে জন্ডিসে কষ্ট পাচ্ছিল। কেউ রোগ ধরতে পারছিলেন না। আমার পক্ষেও খুব দূরে গিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব ছিল না। বাঁকুড়া মেডিক্যালের চিকিৎসকদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।”

কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক সঞ্জয় মণ্ডল বলেন, ‘‘পেট কেটে পিত্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা যেমন জটিল, তেমনই সংক্রমণেরও ভয় রয়েছে। বাঁকুড়া মেডিক্যাল ওই যন্ত্র দু’টির সমন্বয়ে যে অস্ত্রোপচার করেছে, তাতে ওই সব ঝুঁকি নেই। এ ভাবে চিকিৎসা পরিষেবার উন্নতি হলে গ্রামাঞ্চলের মানুষ উপকৃত হবেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement