তিন দিন নির্জলা রেখে বিকেলে এল জল

টানা আড়াই দিন পুরবাসীকে নির্জলা রাখল ঝালদা পুরসভা। বুধবার সকালেও বালতি, কলসি নিয়ে বাসিন্দারা টাইমকলের সামনে তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষায় ছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝালদা শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৬ ০০:১৬
Share:

তখনও জল আসেনি। ঝালদায় বুধবার সকালে তোলা নিজস্ব চিত্র।

টানা আড়াই দিন পুরবাসীকে নির্জলা রাখল ঝালদা পুরসভা।

Advertisement

বুধবার সকালেও বালতি, কলসি নিয়ে বাসিন্দারা টাইমকলের সামনে তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু জল আসে বিকেলে। তাও অল্প সময়ের জন্য। সেই জল নিতে কোথাও কাড়াকাড়ি পড়ে যায়। কোথাও তা বচসাতেও গড়ায়। যদিও ওই জল পরিষ্কার ছিল না। বাসিন্দাদের অভিযোগ, মিনিট কুড়ি-পঁচিশের জন্য জল এলেও তা নোংরা ছিল। পানের অযোগ্য। তবুও সেই জল পরে ছেঁকে ব্যবহার করা যাবে ভেবে তা সংগ্রহ করতে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। পুরশহরের বাসিন্দা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘বিকেলে জল এলেও তা নোংরা। খাওয়া যাবে না।’’ ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কাঙালচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘আমাদের ওয়ার্ডে মোটে ১৫ মিনিট জল দিয়েছে। সেই জলও নোংরা। কী হবে ওই জলে?’’

ঝালদার উপপুরপ্রধান কাঞ্চন পাঠক বলেন, ‘‘জল সরবরাহের ব্যবস্থা অনেকদিনের পুরনো হয়ে গিয়েছে। তাই সমস্যা দেখা দিয়েছিল। মেরামত করে এ দিন বিকেলেই জল সরবরাহ ফের চালু করা হয়।’’ তিনি জানান, মেরামতির পরে কম পরিমাণে জল সরবরাহ করা হয়েছে। তাই জলে কিছু নোংরা থাকতে পারে। তবে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে। জলও আগের মতোই পরিষ্কার পাওয়া যাবে।

Advertisement

এমনিতেই ঝালদা পুরশহরে পানীয় জলের অভাব রয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন সকালে পুরসভার নলবাহিত পানীয় জলের সরবরাহ চালু থাকায় বাসিন্দাদের পানীয় জলের সংস্থান হয়ে যায়। কিন্তু টানা তিনদিন সরবরাহ না হওয়ায় সমস্যায় পড়তে হয় বাসিন্দাদের। মানুষজনের বক্তব্য, সোমবার থেকে জল আসেনি। এই ক’দিন এক বালতি বা এক জারিকেন পানীয় জলের জন্য দেড়-দু’কিলোমিটার দূরে তাঁদের ছুটতে হচ্ছে। খাবার দোকান থেকে বিভিন্ন অফিসেও জলের সমস্যা চলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ষাটের দশেকের শেষের দিকে গভীর নলকূপ খুঁড়ে এই পুরশহরের বাসিন্দাদের জন্য পানীয় জলের ব্যবস্থা করে প্রশাসন। প্রাক্তন পুরপ্রধান মধুসূদন কয়াল জানান, কিন্তু দিন দিন শহরের জনসংখ্যা বাড়ছে। এর ফলে মসিনাতে যে গভীর নলকূপ থেকে পানীয় জলের যে ব্যবস্থা আছে, তাতে কুলোচ্ছে না। নতুন করে জলের সংস্থান করতে ২০০৯ সালের মার্চ মাসে অযোধ্যা পাহাড়তলির মুরগুমা জলাধারের উৎস থেকে ঝালদায় পানীয় জল নিয়ে আসা হয়। এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এই প্রকল্পের জলেও ঝালদাবাসীর পানীয় জলের চাহিদা পুরোপুরি মেটেনি। তবে সমস্যার খানিকটা সুরাহা হয়।

ওই প্রাক্তন পুরপ্রধানের ক্ষোভ, ‘‘আমরা ক্ষমতায় এসেই সুবর্ণরেখা নদী থেকে ঝালদা পুরশহরে পানীয় জল নিয়ে আসার যে প্রকল্প নিয়েছিলাম, তা ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে। বারবার পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে গিয়েছি। কিন্তু কেউ নজর দেয়নি।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘এখন তো তৃণমূলেরই পুরবোর্ড হয়েছে। বর্তমান পুরসভাই এ বার ওই প্রকল্প বাস্তবায়িত করুক। তবে আমরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন