যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলছেন আদ্রার ডিআরএম। ছবি: সুজিত মাহাতো।
ট্রেন সবে আদ্রা স্টেশন ছেড়েছে। একটি কামরায় গিয়ে এক যাত্রীর কাছে জানতে চাইলেন মাথায় টুপি পরা এক ভদ্রলোক, ‘‘সব ঠিক আছে তো?’’ যাত্রী ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানানোর পরে ভদ্রলোক বললেন, ‘‘কোনও অসুবিধে থাকলে বলুন।’’
যে যাত্রীকে প্রশ্ন করা হচ্ছিল, তিনি প্রশ্নকর্তার পরিচয় জেনে বললেন, ‘‘স্যার, এটা সুপারফাস্ট ট্রেন। যদি পরিচ্ছন্নতার উপরে আরও জোর দেওয়া যায়। শৌচাগারের অবস্থা ভাল নয়।’’ পাশের এক তরুণীর কাছে গিয়ে জানতে চাইলেন, ‘‘আপনার কোনও অসুবিধা?’’ তরুণী ভদ্রলোককে কিছু বললেন। প্রয়োজনীয় নোটস নিয়ে পাশের কামরার দিকে এগিয়ে গেলেন প্রশ্নকর্তা। পরে মেদিনীপুর স্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠা ওই তরুণী সুস্মিতা কামিল্যা বললেন, ‘‘উনি ডিআরএম। আমাদের কাছে জানতে চাইছিলেন, যাতায়াতে অসুবিধা হচ্ছে কিনা। নিরাপত্তার কোনও সমস্যা রয়েছে কিনা। আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা তাঁকে বললাম।’’
ট্রেনে যাতায়াত করতে গিয়ে যাত্রীরা কী ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছেন বা যাত্রা নিয়ে তাঁদের কোনও প্রস্তাব রয়েছে কিনা, তা সরজমিনে খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার ট্রেনের বিভিন্ন কামরায় ঘুরে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বললেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আদ্রার ডিআরএম (ডিভিশনার রেলওয়ে ম্যানেজার) অনশুল গুপ্ত। এ দিন তিনি সাঁতরাগাছি-পুরুলিয়া ট্রেনে উঠে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে পুরুলিয়া স্টেশন অবধি আসেন। পুরুলিয়ার বাসিন্দা অজিত সারাওগির কাছে ডিআরএম জানতে চান, তাঁর কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা বা কোনও প্রস্তাব রয়েছে কিনা। অজিতবাবু বলেন, ‘‘আমি ডিআরএমকে জানিয়েছি, বর্তমানে ট্রেনটি সাঁতরাগাছি থেকে পুরুলিয়া যায়। তার বদলে হাওড়া থেকে ছাড়লে ভাল হয়।’’ টালিগঞ্জের বাসিন্দা পিনাকী চক্রবর্তী ডিআরএমকে বলেন, ‘‘ট্রেন সকাল ছ’টা পঁচিশে রওনা দেয়। এই ট্রেনে প্যান্ট্রি কার নেই। এটা দেখুন।’’ আরেক যাত্রী রেশমী সমাদ্দারের সঙ্গে কথা বলেন এই রেলকর্তা। পরে রেশমীদেবী বলেন, ‘‘আমি ওঁকে শৌচাগারের অবস্থা ততটা ভাল নয় সেটা জানানোর পাশাপাশি এই ট্রেনে বাতানুকূল কামরা আরও বাড়ানো যায় কিনা, তা দেখতে অনুরোধ করেছি।’’ বিশ্বজিৎ কর নামে এক যাত্রী আবার প্রস্তাব দিয়েছেন, ট্রেনে সিটের পাশে যাতে মোবাইল চার্জিং পয়েন্টের সুবিধা মেলে।
এ দিন পুরুলিয়া স্টেশনে পৌঁছে ডিআরএম পানীয় জলের বন্দোবস্ত দেখেন। টিকিট কাউন্টারে এসে দেখেন মাথার উপরে কোনও পাখাই ঘুরছে না। এক যাত্রী তাঁর কাছে এ নিয়ে অভিযোগও করেন। স্টেশন ম্যানেজারের কাছে ডিআরএম জানতে চান, কেন পাখা বন্ধ। এক আধিকারিক জানান, লাইনে কাজ চলছিল বলে বন্ধ। তবে কিছুক্ষণ পরেই পাখা চলতে শুরু করে। টিকিট সংরক্ষণের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনের কাছে ডিআরএম খোঁজ নেন, কতক্ষণ তাঁদের দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। কাউন্টারে থাকা রেলের কর্মীর খোঁজ নেন, কেন দেরি হচ্ছে। যাত্রীরা ডিআরএমের কাছে প্ল্যাটফর্মের বাইরে পানীয় জলের কোনও ব্যবস্থা না থাকার কথা বলেন। আদ্রা স্টেশনে দক্ষিণ দিকে কেবল মাত্র একটিই টিকিট কাউন্টার খোলা থাকে তাতে যাত্রীদের অসুবিধেয় পড়তে হয়, এমন অভিযোগও আসে তাঁর কাছে।
পরে ডিআরএম সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবার থেকেই ভারতীয় রেলের যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য সপ্তাহ চালু হয়েছে। সে কারণেই সরাসরি যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সুবিধা-অসুবিধার কথা জানার চেষ্টা হচ্ছে। পাশাপাশি কোন ট্রেন কোন সময়ে চলাচল করলে ভাল হয়, সে বিষয়েও রেল যাত্রীদের কাছ থেকে প্রস্তাব চাইছে। এ দিন ডিআরএমের সঙ্গে সঙ্গে এই সফরে রেলের অন্য পদস্থ আধিকারিকও ছিলেন। পুরুলিয়া থেকে ডিআরএম ফের যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে হাটিয়া-খড়গপুর লোকাল ধরে আদ্রার দিকে রওনা হন।