চেক বিলি শুরু।—নিজস্ব চিত্র।
প্রয়োজনীয় জমির প্রায় পুরোটাই অধিগ্রহণ করে ডিভিসি-কে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। কিন্তু, রঘুনাথপুরের তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে পুরমোত্রায় উৎপাদন চালু করতে সামান্য কিছু জমি এখনও প্রয়োজন ওই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার। কিন্তু, রাজ্যে পালাবদলের পরে জমি অধিগ্রহণ বন্ধ। তাই বাকি জমি কেনার কাজ নিজেরাই শুরু করল ডিভিসি।
মূলত রেললাইন ও রাস্তার জন্য এই জমি কেনা হচ্ছে। বুধবার রঘুনাথপুরের রেজিষ্ট্রি অফিসে ছোট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্থানীয় সালঞ্চি মৌজার চার জমি মালিকের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে জমি কেনার কাজ শুরু করল ডিভিসি। ছিলেন রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি, ডিভিসি-র রঘুনাথপুরের প্রকল্পের চিফ ইঞ্জিনিয়ার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক দেবময় চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। জমি মালিকদের হাতে চেক তুলে দেওয়ার পরে বিধায়ক বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রঘুনাথপুরে শিল্প স্থাপনে উদ্যোগী হয়েছেন। এই এলাকায় জমির সমস্যা হবে না। স্থানীয় মানুষ শিল্প স্থাপনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই আছেন বলে নির্বিঘ্নে জমি কিনতে শুরু করেছে ডিভিসি।” জমি কেনার আগে এলাকার বাসিন্দাদের নিয়ে একাধিক বার বৈঠক করে তাঁদের বোঝানোয় উদ্যোগী হয়েছিলেন বিধায়ক। এ দিন ডিভিসি-র চিফ ইঞ্জিনিয়ারও বলেন, ‘‘সরাসরি মালিকদের কাছ থেকে জমি কেনার কাজটা কোনও সংস্থার পক্ষেই সহজ নয়। কিন্তু বিধায়ক ও জেলা প্রশাসনের সদর্থক ভূমিকার জন্যই আমরা জমি কিনতে পারছি।”
রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে বরাবরই বাধা হয়েছে জমির সমস্যা। বিশেষ করে ওয়াটার করিডর (জলের পাইপলাইন পাতা) নিয়ে স্থানীয় জমি মালিকদের একাংশের সক্রিয় বিরোধিতায় কাজই থমকে গিয়েছিল। সেখানেও শাসকদল হস্তক্ষেপ করায় সমস্যা মিটেছে। ভুগছেন। ডিভিসি সূত্রের খবর, এখন রঘুনাথপুরের এই প্রকল্পে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উতপাদন হচ্ছে। অথচ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১২০০ মেগাওয়াট। পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন শুরু করার ক্ষেত্রে জরুরি যে কয়লার মসৃণ জোগান, তা না হওয়ায় ডিভিসি কর্তৃপক্ষ ভুগছেন। রেললাইন পাতার কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় এখন ডাম্পারের মাধ্যমে কয়লা আসছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় কম।
বস্তুত, রেল ও রোড করিডরের জন্যই দ্রুত বাকি জমি নেওয়াটা প্রয়োজন। আশিসবাবু জানান, পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনের জন্য রেলের মাধ্যমে কয়লা আনতে হবে। ফলে রেল করিডরের কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য আরও প্রায় ২১ একর জমি কিনতে হবে। ১৫ একর লাগবে রেললাইনের জন্য। বাকি পাঁচ একরে রেললাইনের পাশে রাস্তা তৈরি হবে। আশিসবাবু বলেন, ‘‘দুই-তিন মাসের মধ্যে সমস্ত জমি কেনা হয়ে যাবে বলে আমরা আশাবাদী। জমি হাতে পেলেই রেললাইনের কাজ সম্পূর্ণ করা হবে।’’
ডিভিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, রঘুনাথপুর ১ ও ২ ব্লকের সালঞ্চি, জামতোড়িয়া, সেনেড়া, বুন্দলা ও নীলডি—এই পাঁচটি মৌজা থেকে ২১ একর জমি কেনা হবে। এ দিন সালঞ্চি মৌজার চার জন জমিমালিকের কাছ থেকে এক ডেসিম্যালের কিছু বেশি জমি কেনা হয়েছে। ওই জমি মালিকদের কথায়, ‘‘এলাকায় শিল্প হলে উন্নয়ন হবে। তা ছাড়া, ডিভিসি ভাল দাম দিচ্ছে বলেই জমি দিয়েছি।” ডিভিসির এক আধিকারিকের দাবি, ওই মৌজাগুলিতে সরকারি হারে জমির দাম একর প্রতি সর্বোচ্চ ১৮ লক্ষ টাকা। কিন্তু গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনার পরে একর পিছু ৩৫ লক্ষ টাকা দাম দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছে।
বিধায়কের কথায়, ‘‘জমি কেনার কাজটা বুধবার থেকে প্রাথমিক ভাবে শুরু করল ডিভিসি। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দশ রয়েছে, রঘুনাথপুরে ডিভিসিকে যাতে জমির সমস্যায় পড়তে না হয়। সেটা আমরা দেখব।’’