গেট আটকে ফের বিক্ষোভ ডিভিসি-র তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে। আর তার জেরে আবারও ব্যাহত হল পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়া।
স্থানীয়দের বঞ্চিত করে বাইরে থেকে শ্রমিক এনে কাজ করানো হচ্ছে, এই অভিযোগে ডিভিসি-র প্রকল্পের মূল গেটের সামনে সোমবার বিক্ষোভ দেখান জমিহারা কমিটির সদস্যেরা। ‘ল্যান্ডলুজারস অ্যাসোসিয়েশন’ নামে ওই কমিটির অবস্থানের জেরে এ দিন কর্মীরা ঢুকতে না পারায় প্রকল্পের নির্মাণকাজ এবং পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরুর প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় বলে দাবি ডিভিসি কর্তৃপক্ষের।
বস্তুত, পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র এই নির্মীয়মাণ বিদ্যুৎ প্রকল্পের মূল গেট আটকে বিক্ষোভ-অবস্থান যেন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। কখনও ওয়াটার বা রেল করিডর নিয়ে, কখনও বা অন্য কোনও অজুহাতে বারবার এমন বিক্ষোভে পিছিয়ে যাচ্ছে প্রকল্পের কাজ। গত মাসেও প্রকল্পের একটি ছোট গেট বন্ধ করে দেওয়ার মতো সামান্য ঘটনাতেও টানা দু’দিন ধরে মূল গেট আটকে বিক্ষোভ হওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা নিয়ে আসা গাড়ি ঢুকতে পারেনি। তখনও কাজ বন্ধ ছিল।
এ দিনের বিক্ষোভের কারণ অবশ্য অন্য। জমিহারা কমিটির নেতা চিন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “প্রকল্পে কয়লা বাছাইয়ের কাজে একটি বেসরকারি ঠিকাদার সংস্থা সম্প্রতি বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটি থেকে ৩৬ জন অদক্ষ শ্রমিককে নিয়ে এসে কাজ করাচ্ছে। অথচ ইতিমধ্যে স্থানীয় জমিহারা পরিবারগুলির প্রায় ১৯০ জন সদস্য (যাঁরা ঠিকা শ্রমিকও) কাজ না থাকার অজুহাত দিয়ে ছাঁটাই করা হয়েছে।” তাঁদের বক্তব্য, গত বছর ৯ অক্টোবর রঘুনাথপুরে মহকুমাশাসকের দফতরে প্রশাসন ও ডিভিসি-র উপস্থিতিতে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, অদক্ষ শ্রমিক প্রয়োজন হলে স্থানীয় ও জমিহারাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না। চিন্ময়বাবু বলেন, “আমরা ডিভিসি কর্তৃপক্ষকে কয়েক বার এটা বন্ধ করার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু, তাঁরা কিছু করেননি। তাই এ দিন আমরা শুধুই বহিরাগত শ্রমিকদের কাজে ঢুকতে বাধা দিয়েছি, অন্যদের নয়।”
ডিভিসি-র পাল্টা দাবি, গঙ্গাজলঘাটি থেকে মাত্র দশ দিনের জন্য ওই শ্রমিকদের কাজ করাতে এনেছে ঠিকাদার সংস্থাটি। স্থানীয়রা এত কম দিনের জন্য কাজ করতে রাজি হবেন না বলেই তাঁদের আনা হয়েছে। এই প্রকল্পে ডিভিসি-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই বিষয়টি আমরা জমিহারা কমিটি এবং জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটিকে বুঝিয়েছি। তা সত্ত্বেও হঠাৎ আগাম নোটিস না দিয়ে জমিহারারা অবস্থানে বসে পড়ায় কিছু সংখ্যক কর্মী-শ্রমিক প্রকল্পে ঢুকতে পারেননি। যার ফলে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরুর প্রক্রিয়া আবার পিছিয়েছে।” দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হলে জমিহারারা ফের কাজ পাবেন বলে আশ্বাস হিরন্ময়বাবুর।
এ বছর ৩১ মার্চ এই প্রকল্পের প্রথম ইউনিট থেকে কয়লার বদলে তেল ব্যবহার করে দু’দিনের জন্য পরীক্ষামূলক উৎপাদন করেছিল ডিভিসি। এ বার কয়লা ব্যবহার করে উৎপাদনের প্রক্রিয়া রবিবার থেকে শুরু হয়েছে। হিরন্ময়বাবু জানান, ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন খনি থেকে কয়লা আসছে। স্থানীয় সালঞ্চি চেক ড্যাম থেকে জলও আনা হচ্ছে। এ বার কয়লা ব্যাবহার করে প্রথম ইউনিট থেকে পরীক্ষামূলক উৎপাদন দ্রুত শুরু করে পরের ধাপে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করতে চাইছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। তাঁর আক্ষেপ, “কিন্তু সোমবারের বিক্ষোভে সেই প্রক্রিয়া যথেষ্টই ধাক্কা খেয়েছে। ফলে, উৎপাদন শুরু করায় আরও কয়েক ধাপ পিছিয়ে গেলাম।”
ডিভিসি কর্তৃপক্ষ ইতিবাচক পদক্ষেপ না করলে অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে জমিহারা কমিটি। ফলে উৎপাদন পর্ব বিশবাঁও জলে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছে এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমাধানসূত্র খোঁজা হবে।”