অভাবী ছাত্রছাত্রীর কথা ভেবে বাড়িতেই চালু গ্রন্থাগার ‘প্রচেষ্টা’

মানবাজারের চেপুয়া গ্রামের ওই গ্রন্থাগার ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই উদ্যোগের নেপথ্যে অন্যতম ভূমিকা রয়েছে দয়াময় মহান্তির। পেশায় গৃহশিক্ষক। কবিতা লেখেন।

Advertisement

সমীর দত্ত

মানবাজার শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:০২
Share:

চলছে বই দেওয়া নেওয়া। মানবাজারের চেপুয়া গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

স্কুলপাঠ্য বইপত্র যাতে অভাবী পড়ুয়ারা সহজে পেতে পারে, সেই লক্ষ্যে গ্রন্থাগার তৈরি করে ফেললেন এলাকার কিছু বাসিন্দা। একেবারে নিজেদের উদ্যোগে। নিজেদের খরচে। তাঁদের কেউ বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্র পড়ান। কেউ চাষের কাজ করেন। কেউ চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু নিজেদের লড়াই নিয়ে তাঁরা সর্বক্ষণ ভাবতে রাজি নন। বরং গ্রামের ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের লড়াই কী ভাবে সহজ হয়, সেই ভাবনাতেই মশগুল।

Advertisement

মানবাজারের চেপুয়া গ্রামের ওই গ্রন্থাগার ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই উদ্যোগের নেপথ্যে অন্যতম ভূমিকা রয়েছে দয়াময় মহান্তির। পেশায় গৃহশিক্ষক। কবিতা লেখেন। দয়াময় বলেন, ‘‘পড়াতে গিয়ে অভাব ব্যাপারটা খুব কাছ থেকে দেখেছি। অনেক টাকা খরচ করে বইপত্র কিনে দিয়ে, গৃহশিক্ষকের বন্দোবস্ত করে অভিভাবকেরা ছেলেমেয়ের ভবিষ্যত গড়তে চান। যাঁদের সেটা করার সঙ্গতি রয়েছে, তাঁরা পারেন। যাঁদের নেই, তাঁদের বাড়ির ছেলেমেয়েরা পিছিয়ে পড়ে। আমরা এই ফারাকটা ঘোচাতে চাই।’’

গ্রন্থাগারের নাম তাঁরা রেখেছেন ‘প্রচেষ্টা’। এই উদ্যোগে রয়েছেন পেশায় চাষি ইউসুফ, স্থানীয় যুবক প্রভাত মাহাতোর মতো কয়েক জন। প্রভাতের বাড়ির বাইরের ঘরে চালু হয়েছে গ্রন্থাগার। গ্রামের যুবকেরা সপ্তাহের একটি নির্দিষ্টি দিনে পালা করে সেখানে বসেন। বই দেওয়া নেওয়ার কাজ করেন। তাঁরা জানান, ইতিমধ্যেই এলাকার প্রায় একশো পড়ুয়া বই চেয়ে আবেদন করেছে। প্রয়োজন বিবেচনা করে তাঁরা বইপত্রের তালিকা বানিয়েছেন। তার মধ্যে থেকে বই পড়তে দেওয়া হচ্ছে আবেদনকারীদের। এর জন্য পুরোদস্তুর গ্রন্থাগারের মতো কার্ডের বন্দোবস্তও হয়েছে।

Advertisement

বইয়ের ব্যবস্থা হচ্ছে কী ভাবে?

ইউসুফ, প্রভাত, দয়াময়রা জানান, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং ব্যক্তি তাঁদের বই দিয়েছেন। আরও বই পাওয়ার প্রতিশ্রুতিও মিলেছে। এখন পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শতাধিক বই রয়েছে গ্রন্থাগারটিতে। টায়ার মেরামতির কাজ করেন মানবাজারের শেখ ইলিয়াস। মেয়ে কাশ্মীরা খাতুন দশম শ্রেণিতে উঠল। নবম শ্রেণিতে সহপাঠীর বই ধার করে পড়াশোনা করেছে। এ বারে ইলিয়াসের চিন্তা ঘুচিয়েছে এই লাইব্রেরি। দশম শ্রেণির সমর মাহাতোও বই পেয়েছে ওই গ্রন্থাগার থেকে। নিশ্চিন্ত হয়েছেন বাবা রঞ্জিত মাহাতো। এমন নজির আরও রয়েছে বলে দাবি প্রভাতদের।

ওই গ্রন্থাগারের কাছে কাশীডি সিআরসিজি বিদ্যাপীঠ। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক কৃত্তিবাস মাহাতো স্থানীয় যুবকদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান। পুঞ্চার লৌলাড়া রাধাচরণ অ্যাকাডেমির প্রধান শিক্ষক অমিয় চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট সময়ে বই পাওয়ার ব্যাপারে অনেক সময়ে পড়ুয়াদের সমস্যা হয়। এই লাইব্রেরি হওয়ায় তাদের খুবই সুবিধা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন