জালিয়াতি রুখতে চালু হবে ই-চালান

প্রশাসন জানাচ্ছে, কোনও বালি বহনের গাড়িতে থাকা চালান বৈধ না অবৈধ সেটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমেই যাচাই সম্ভব। চালানের কপিতে থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করলেই বোঝা যাবে আসল নকলের ফারাক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৪৪
Share:

নথি: এমনই হবে বালিঘাটের ই-চালান। নিজস্ব চিত্র

অবৈধ ঘাট তো আছেই। অভিযোগ, জাল চালান ব্যবহার করে বৈধ ঘাট থেকেও চুরি হচ্ছে বালি। এ বার সেই বালি চুরি আটকাতে ই-চালান ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিল জেলা প্রশাসন।

Advertisement

নতুন পদ্ধতিতে কী ভাবে স্বচ্ছতা আনতে চায় প্রশাসন, বালিঘাটের লিজপ্রাপ্তদের শুক্রবার তা বোঝানো হয়েছে। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, নতুন পদ্ধতিতে চালান নিতে আগামী ১৪ তারিখের মধ্যেই প্রত্যেককে রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে।

প্রশাসন জানাচ্ছে, কোনও বালি বহনের গাড়িতে থাকা চালান বৈধ না অবৈধ সেটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমেই যাচাই সম্ভব। চালানের কপিতে থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করলেই বোঝা যাবে আসল নকলের ফারাক।

Advertisement

জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘জাল চালান ব্যবহার করে বালিচুরির বিষয়টি সামনে এসেছে। বালি চুরিতে কেউ যাতে জাল চালানের আশ্রয় নিতে না পারে, সেই জন্যই এই ব্যবস্থা। চালান স্ক্যান করলেই আসল না নকল, বোঝা যাবে। অ্যাপ্লিকেশনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বীরভূম ই-নজরদারি’। যিনি দেখছেন, তাঁর স্মার্টফোনে গুগল প্লে-স্টোর থেকে ওই অ্যাপ্লিকেশেনটি ডাউনলোড করে নিলেই হবে।’’

জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশে নদী থেকে ইচ্ছে মতো বালি তোলায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে বহু আগে। বর্তমানে বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে বালি তোলার অধিকার অর্জন করেন ই-অকশনের মাধ্যমে লিজপ্রাপ্তরাই। বালি তোলার অনুমতি দেওয়ার সময় নদীর নামের সঙ্গে মৌজা ও দাগ নম্বর-সহ নানা তথ্য উল্লেখ থাকে। ডিড চূড়ান্ত হওয়ার পরেই একজন লিজপ্রাপ্ত বা লেসি তিনি চালানের জন্য ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে আবেদন করেন। আবেদন গ্রাহ্য হলে যে পরিমাণ বালি তিনি তুলবেন সেই হারে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা করে চালান পেতে হয়। যে বিক্রেতা (এখানে যিনি বহন করছেন সেই গাড়ির মালিক) বালি নিচ্ছেন তাঁকে চালান দেন লিজপ্রাপ্তরা।

অভিযোগ এখানেই খেলার শুরু। অনুমতি পাওয়ার পরে ঘাট মালিকদের কেউ বাড়তি লাভের আশায় পাশাপাশি ঘাটগুলি থেকেও বালি তুলতে শুরু করেন। বালি যে গাড়িতে বহন হচ্ছে, সেই গাড়িতে জাল চালান ইস্যু করেন— এমন অভিযোগও রয়েছে। একই পথ নেয় অবৈধ বালি কারবারিরাও। ধরা পড়লেও সেই চালান বৈধ না অবৈধ সেটা বুঝতেই অনেক সময় পেরিয়ে যায়।

অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) পূর্ণেন্দু মাজি বলছেন, ‘‘প্রথমত, বালি চুরি রোখা। দুই, বৈধ ও অবৈধ চালান পরীক্ষার জন্য সময় নষ্ট কমাতেই এমন ভাবনা নেওয়া হল। আমরা চাইব দ্রুত সকল এলটিএমএল-রা (লং টার্ম মাইনিং লিজ) এই ব্যবস্থার মধ্যে চলে আসবেন।’’ এই মুহূর্তে জেলায় ১১৬ জন লিজ প্রাপ্ত রয়েছেন। এডিএম মনে করাচ্ছেন, এখন প্রতিনিয়ত পরিবহণ পুলিশ ও ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর অভিযান চালাচ্ছে। ই-চালান ব্যবস্থা চালু হওয়ার পরে সেটা যাচাইয়ের সুবিধা হবে।

কী কী জানা যাবে ই-চালান থেকে?

প্রশাসন জানাচ্ছে, কোন মৌজা ও দাগ নম্বর, লিজপ্রাপ্তের নাম, বিক্রেতার নাম, কোন যানবাহনে লোড করা হয়েছে। কবে, কখন সেটা লোড হয়েছে সবটাই কিউআর কোড স্ক্যান করলেই জানা যাবে। নজরদারি চালানো যাবে কোনও লিজপ্রাপ্ত চালান নিয়ে গিয়ে কতগুলি চালান ইস্যু করছেন তার উপরেও। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর বলছে, ‘‘আরও ১৫০টি স্যান্ড ব্লক চিহ্নিত করা হয়েছে। অবৈধ বালি চুরি আটকাতে দিন কয়েকের মধ্যেই ২৩টি বালিঘাটের হাঁক হবে।’’

কী বলছেন লিজপ্রাপ্তেরা?

জেলা বালি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অরিন্দম সেন বলছেন, ‘‘ই-চালান ব্যবস্থা চালু করা নিয়ে কোনও আপত্তি নেই আমাদের। প্রশাসনের কাছে শুধু একটাই চাওয়া, নতুন পদ্ধতি চালু করার সময় বেশ কিছু অসুবিধা উঠে আসে। সেগুলিও যেন যথাযথ ভাবে মেটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন