বীরভূম কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক

প্রতীক্ষার অবসান, মিলল লাইসেন্স

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। ফের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের লাইসেন্স পেল বীরভূমের কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক। বুধবারই লাইসেন্স দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। গত অক্টোবরে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ওই ব্যাঙ্কের ১৭টি শাখা খুললেও নতুন করে লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে একগুচ্ছ শর্ত আরোপ করেছিল আরবিআই। বহু চেষ্টায় সেই সব শর্ত পূরণ করলেও মিলছিল না ছাড়পত্র।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:২৫
Share:

সিউড়িতে কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের মূল শাখা। — নিজস্ব চিত্র

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। ফের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের লাইসেন্স পেল বীরভূমের কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক। বুধবারই লাইসেন্স দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।

Advertisement

গত অক্টোবরে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ওই ব্যাঙ্কের ১৭টি শাখা খুললেও নতুন করে লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে একগুচ্ছ শর্ত আরোপ করেছিল আরবিআই। বহু চেষ্টায় সেই সব শর্ত পূরণ করলেও মিলছিল না ছাড়পত্র। অবশেষে ছাড়পত্র মেলায় হাঁফ ছেড়ে বাঁচল গ্রাহক, ব্যাঙ্কের উপর নির্ভরশীল সমবায় সমিতি, কর্মী সকলেই। প্রত্যেকেই ভীষণ খুশি। আনন্দের সুর ব্যাঙ্কের সিইও অজয় গিরির গলাতেও। তিনি বলেন, ‘‘বুধবার সকালেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের লাইসেন্স হাতে পেয়েছি। একটা লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান এবং লাইসেন্স না থাকা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বড় তফাত— গ্রাহকদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের ক্ষেত্র। এ বার সেই বিশ্বাস অর্জন করতে গিয়ে আত্মবিশ্বাসের অভাব হবে না।’’

প্রসঙ্গত, বিপুল খেলাপি ঋণ অনাদায়ী থাকায় ২০১৫ সালের ১৫ মে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের লাইসেন্স বাতিল করার পর থেকেই জেলার ১৭টি শাখা বন্ধ ছিল। জেলা জুড়ে সমবায় ব্যাঙ্কের সব ক’টি শাখা বন্ধ হওয়ায় সমস্যায় পড়ে যান ২ লক্ষ ৬১ হাজার ৪৭৪ জন আমানতকারী। ব্যাঙ্কে গচ্ছিত ৩৫০ কোটি ১২ লক্ষ ৫২ হাজার টাকার ভবিষ্যত কী হবে, তা নিয়ে অজানা আশঙ্কায় ভুগতে শুরু করেন গ্রাহকেরা। কিন্তু মাসের পর মাস ব্যাঙ্ক খোলার কোনও আশা-ভরসা না পেয়ে শুধু ব্যাঙ্কের গ্রাহকেরাই নন, অথৈ জলে পড়ে যান সমবায় ব্যাঙ্কের উপর নির্ভরশীল জেলার ৩৩১টি সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতিও। বন্ধ হয়ে যায় চাষিদের কৃষিঋণ পাওয়া। সব চেয়ে সমস্যায় পড়ে ১০০টির মতো সমবায় সমিতি (যেগুলিতে ব্যাঙ্কিং সিস্টেম চালু ছিল)। যেহেতু সমবায় সমিতিতে গচ্ছিত আমানতের একটা বড় অংশই সমবায় ব্যাঙ্কে রাখার নির্দেশ ছিল। তাই সমিতিগুলিও তাঁদের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে না পেরে চূড়ান্ত সমস্যায় পড়ে বন্ধের মুখে। তার পর থেকেই ব্যাঙ্ক খোলার দাবিতে বহু আন্দোলনও হয়েছে।

Advertisement

ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ম হল, কোনও ঋণ তথা অনুৎপাদক সম্পদের (এনপিএ) পরিমাণ ৫ শতাংশের বেশি হওয়া চলবে না। কিন্তু বীরভূম জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক যে পরিমাণ ঋণ দিয়েছিল, তার ৫২ শতাংশ খেলাপি বা অনুৎপাদক সম্পদে পরিণত হয়। পথ ছিল একটাই, রাজ্য সরকার ব্যাঙ্ক বাঁচাতে তখন যদি সেই পরিমাণ টাকা দিয়ে দিত। কিন্তু তেমন কোনও উদ্যোগ না নেওয়ায় চরম পদক্ষেপ করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। মামলা হয় আদালতে।

এর পর ব্যাঙ্ক বাঁচাতে কেন্দ্র রাজ্য এবং নাবার্ডের তরফে মিলিত ভাবে ৮৮ কোটি টাকা দেওয়া হলেও লাইসেন্স দিচ্ছিল না রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। বরং তারা নানা আপত্তি তোলে। ব্যাঙ্ক না খোলা থাকলে যে ঋণ আদায়ও সম্ভব নয় বুঝেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আপত্তি শর্তেও গত ১৫ জুলাই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় সমবায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন। গত ১ অক্টোবর ব্যাঙ্ক খোলে। কিন্তু তখনও লাইসেন্স ফিরিয়ে না দিয়ে উল্টে খেলাপি ঋণ আদায়, ব্যাঙ্কের পরিকাঠোমেো উন্নয়ন ও কোর ব্যাঙ্কিং সিস্টেম চালু করা-সহ একাধিক শর্ত আরোপ করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ফলে ব্যাঙ্ক খুললেও স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হতে থাকে। নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা গেলেও আমানতকারীদের টাকা ফেরানো যাচ্ছিল না। এতে ক্রমশ ক্ষোভ জমতে থাকে গ্রাহকদের মধ্যে। আবার ঋণ আদায় থেকে পরিকাঠামো উন্নয়ন— কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কর কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। তবুও যেন হচ্ছিল না। ব্যাঙ্ক বাঁচাতে রাজ্য সরকারকে আরও টাকা দিতে হয়।

এর পরে গ্রাহকদের কাছে ব্যাঙ্কের ভাবমূর্তি বাঁচাতে গত মার্চ থেকে একটু একটু করে টাকা ফেরানো শুরু হয়। গত জুনে পরিমাণ কিছুটা বাড়ে। কিন্তু লাইসেন্স না মেলায় তাল সামলানো যাচ্ছিল না। হতাশ হয়ে পড়ছিলেন ব্যাঙ্কের কর্মী থেকে সকলেই। আর কী করলে লাইসেন্স মিলবে, নতুন সরকারে দায়িত্ব নেওয়া সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়কে সে কথা শুনতেও হয়েছে। শেষপর্যন্ত শিকে ছিড়ল। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, এ বার ব্যাঙ্কের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা পেতে এবং কাজকর্ম স্বাভাবিক হতে আমানতকারীদের টাকা ফেরতের ক্ষেত্রেও বাধা থাকল না। সিইও বলছেন, ‘‘ব্যাঙ্কের আর্থিক স্বাস্থ্য বিবেচনা করেই আমরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব। সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতগুলিও বাঁচবে।’’

ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলছেন, ‘‘আমাদের চেষ্টা ও বিশ্বাস দুই-ই ছিল। আমরা বিশেষ ভাবে প্রচার চালাতে চাই। সঙ্গে আরবিআই-এর কাছে আবেদন থাকবে। যে ভাবে ব্যাঙ্ক বন্ধের নোটিস জনসমক্ষে ঝুলিয়েছিল, এ বার লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টাও তাঁরা যেন জনসমক্ষে জানান।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন