(ইনসেটে) শ্রীনিকেতনে এলমহার্স্ট।—ফাইল চিত্র। চলছে প্রদর্শনী।—নিজস্ব চিত্র
কেউ তাঁকে বলেছেন ‘ভারত বন্ধু।’ কারও চোখে তিনি ‘শ্রীনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের পল্লি-পুনর্গঠন ভাবনার অন্যতম কারিগর।’ আবার কেউ কেউ তাঁর কর্মকাণ্ডের জন্য কৃষক, শিল্পী এবং কারিগরদের ‘বন্ধু’ হিসেবেই পরিচিত করিয়েছেন। কিন্তু তিনি নিজের পরিচয় দিতেন একজন ‘চাষা’ হিসেবে। তিনি লিওনার্ড নাইট এলমহার্স্ট। তাঁর ১২৩ তম জন্মদিন পালন করল বিশ্বভারতী। তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে, একটি আলোচনা সভা ও প্রদর্শনীর আয়োজন করে তারা।
বাবার জমিদারির কাজ দেখভালের সুবাদে এলমহার্স্ট কৃষকদের সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের স্নাতক প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে সদস্য হিসেবে ভারত ও মেসোপটেমিয়া ঘুরতে আসেন। ভারতের কৃষি এবং সংস্কৃতি সঙ্গে পরিচয় ঘটে তাঁর সেই তখনই। ইংল্যান্ডে ফিরে গিয়ে আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষিবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। ১৯২০ সালে আমেরিকার নিউইয়র্কে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। কবির সঙ্গে তাঁর সর্ম্পকের দিকটি নানাভাবে তুলে ধরেন এ দিনের বক্তারা।
কবির সঙ্গে এলমহার্স্টের পরিচয় করিয়ে দেন এলাহাবাদ কৃষিবিদ্যা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা বিখ্যাত কৃষিবিদ স্যাম হিগিনবোটম।
এর পরেই কবি তাঁকে শ্রীনিকেতনের সুরুলে পল্লি-পুনর্গঠন কাজের দেখভাল ও পরীক্ষা নিরীক্ষা কাজের জন্য ১৯২১ সালে ভারতে আমন্ত্রণ জানান। এলমহার্স্ট শুধু চলেই এলেন না, নিজেকে ‘চাষা’ বলে পরিচয় দিলেন। এবং শান্তিনিকেতনেই থাকতে শুরু করেন। সে সব কথাই ঘুরে ফিরে উঠে আসে এ দিন শান্তিনিকেতনে।
তিনি ১৯২২ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা দিয়েছিলেন শ্রীনিকেতনকে। তাছাড়াও বহু সরকারি, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নানা ভাবে সহায়তা করা এবং উন্নয়নে এগিয়ে আসার নজির রয়েছে তাঁর। বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী উদয়শংকরের আলমোরার প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা, শিল্পীর বিদেশ ভ্রমণে সহায়তা-সহ ভারতে নানান কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জুক্ত ছিলেন এই মানুষটি। বন সৃজন থেকে সেচ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন গঠনের সুপারিশও তিনি ছিলেন। কৃষি, অর্থনীতির ক্ষেত্রে ভুবনজোড়া তাঁর অবদানের কথা স্মরণ করে এ দিন বিশ্বভারতী।
বিশ্বভারতীর শ্রীনিকেতনের অধিকর্তা অধ্যাপিকা সবুজকলি সেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুজিত কুমার পাল জানান, এলমহার্স্টের স্ত্রী ডরোথীর আর্থিক সহায়তায় বেশ কিছু বছর চলে রবীন্দ্রনাথের পল্লি পুনর্গঠনের কাজ। তিন বছরের কিছু বেশি সময় রবীন্দ্রনাথকে কাছ থেকে দেখা এবং কবির সচিব হিসেবে বহু দেশে ভ্রমণ করেছেন তিনি।
১৯২১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি শ্রীনিকেতনে কৃষি বিভাগ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা থেকে শুরু করে তিন বছর নির্দেশক হিসেবে কাজও করেছিলেন তিনি। এ দিন সেই মানুষটিরই কর্মকাণ্ড নিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করে প্রতিষ্ঠান। এলাকার কৃষকদের নিয়ে ‘কৃষিজ দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং গ্রামোন্নয়ন’ শীর্ষক একটি আলোচনাও ছিল এ দিন।