বালুচরীর কুর্তি, পা়ঞ্জাবি। বিষ্ণুপুর মেলায় শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।
বিষ্ণুপুরে র্যাম্প ওয়ার্ক। তাও আবার বালুচরীতে!
যদুভট্ট মঞ্চে রংবাহারি আলোর মাঝে বালুচরীর নানা পোশাকের প্রদর্শনের পরে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত বালুচরী শিল্পী ও ব্যবসায়ীরা। মেলা দেখতে আসা পর্যটকেরাও মঞ্চে বালুচরীর নজরকাড়া নানারকমের পোশাক দেখে তাজ্জব। এমন সাড়া পেয়ে উদ্যোক্তারাও এ বার বিষ্ণুপুর ছাড়িয়ে কল্লোলিনী কলকাতাতেও বালুচরীর প্রসারে র্যাম্প ওয়ার্ক করানোর কথা ভাবছেন।
বিষ্ণুপুর মেলা বলতে এতদিন হস্তশিল্পের বিকিকিনি আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বোঝাত। কিন্তু জাতীয় মেলার স্বীকৃতি পাওয়া এই মেলা এ বার আরও সাবালক হয়ে উঠেছে। মেলার অনুষ্ঠান সূচিতে ছিল, সোমবার যদুভট্ট মঞ্চে বালুচরী, স্বর্ণচরী ও স্থানীয় লোক অলঙ্কারে হাঁটা প্রদর্শনী। কিন্তু তা যে এমন মনমাতানো, চোখ ধাঁধানো অনুষ্ঠান হয়ে উঠবে অনেকেই ভাবতে পারেননি।
কলেজ পড়ুয়া শুভ্রা মণ্ডল, দেবী ভরত, আল্পনা হেমব্রম, রাজীব মুর্মুদের বালুচরী-স্বর্ণচরীর পোশাকে যদুভট্ট মঞ্চের র্যাম্পে হাঁটতে দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে ছিলেন ষাটোর্ধ্ব বালুচরি শিল্পী অজিত চন্দ্র। মঙ্গলবারও ঘোরলাগা চোখে তিনি বলেন, ‘‘আমরা তো বালুচরীর প্রসারে বহু রকমের পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছি। তবে তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এমন উৎসাহে প্রচারে নামলে তা ব্যর্থ হবে না।’’
মেলার মাঠে কারিগরের হাটে বালুচরী থান কেটে তৈরি করা জামা, কুর্তা, কুর্তি, পাঞ্জাবির পসরা সাজাতে সাজাতে রাজু পাল বলেন,‘‘বালুচরী বলতে শুধু শাড়ি নয়। বালুচরীর যে নানা রকমের পোশাক হতে পারে, তা তুলে ধরছি। এতে সাড়াও পাচ্ছি।’’
মেলায় ঘুরতে আসা কলকাতার ঠাকুরপুকুরের বাসিন্দার মধুছন্দা সেন বলেন, ‘‘যদুভট্ট মঞ্চে বালুচরীর পোশাকে স্থানীয় কলেজ পড়ুয়াদের হাঁটতে দেখে অভিভূত হয়ে গিয়েছি। তারপরেই এ দিন মেলায় এসে বালুচরীর এতো রকমের পোশাক দেখে লোভ সামলাতে পারলাম না। বন্ধুদের উপহার দিয়ে অবাক করে দেব।’’ হাওড়া থেকে আসা গার্গী বন্দ্যোপাধ্যায় কুর্তা কেনার ফাঁকে বলেন, ‘‘টেরাকোটার হাতি-ঘোড়ার সঙ্গে এ বার বিষ্ণুপুর এলে বালুচরীর জামা-কাপড়ও কিনব।’’
র্যাম্পে হাঁটা রামানন্দ কলেজের পড়ুয়া ঈশাণী নাগ, দেবী ভরত বলেন, ‘‘প্রথম প্রথম খুব ভয় হয়েছিল। তবে অধ্যক্ষার উৎসাহ আর দর্শকদের হাততালিতে সব ভয় উড়ে গেল। আমাদের শহরের তৈরি বালুচরীর পোশাক পরে হাঁটার অনুভুতিই আলাদা। বালুচরি যদি প্রাণ খুঁজে পায়, সব থেকে খুশি হব আমরাই।’’ ওই কলেজের অধ্যক্ষা স্বপ্না ঘোড়ুই বলেন, ‘‘আমন্ত্রণ পেয়ে অল্প সময়ের মধ্যে ছেলেমেয়েগুলোকে নিজের হাতে তৈরি করেছি। আমাদের শহরের শিল্প আমাদের কলেজের ছেলেমেয়েদের মাধ্যমে যদি প্রচার পায় ক্ষতি কী?’’
বিষ্ণুপুর মেলা কমিটির সভাপতি তথা বাঁকুড়ার সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমাদের প্রথম থেকে উদ্দেশ্য ছিল নতুনের হাত ধরে বালুচরীকে নতুন ভাবে তুলে ধরা। সফল হয়েছি। এ বার চেষ্টা করছি কলকাতা বইমেলাতেও এদের নিয়ে গিয়ে র্যাম্পে হাঁটাব।’’