একটু দূর থেকে দেখলে মনে হয় মাঠে ঘাস জন্মেছে। কিন্তু কাছে গেলেই মালুম হয় ঘাস নয়, অনুচ্চ সবুজ খেত ভরে রয়েছে মুসুর গাছে। জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমিতে তাকালেই চোখে পড়বে অনেকটা ছোলা গাছের মত দেখতে মুসুরের খেত। ইতিমধ্যেই শুঁটি ধরেছে। স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা।
জেলায় ডাল চাষ বাড়ুক বেশ কয়েক বছর ধরে এটাই চাওয়া। অর্থকরি ফসল। শিকড়ে রাইজোবিয়াম থাকায় ডাল শষ্যের চাষ করলে মাটিতে নাইট্রোজেন ঘাটতি মিটিয়ে মাটিকে উর্বর করে। খুব কম খরচে চাষ করা যায়, চাষিদের এমন উৎসাহ দিলেও জেলায় যে পরিমাণ জমিতে ডাল চাষ হওয়ার কথা ততখানি জমিতে ডাল চাষে আগ্রহী ছিলেন না কৃষিকেরা। অধিকাংশ কৃষি জমি পড়েই থাকত।
এ বার ছবিটা কিছুটা বদলেছে। জেলা কৃষি দফতর জানাচ্ছে, এ বারই জেলাজুড়ে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর বেশি জমিতে মুসুর চাষ হয়েছে। এর পিছনে অবশ্য কারণ রয়েছে। চাষিরা যাতে জমি ফেলে না রেখে ডাল চাষ করেন সে বিষয়ে উৎসাহ দিতেই এই উদ্যোগ। কৃষি দফতরের উদ্যেগে জেলার সবকটি ব্লকে এ বার ধানের পর পতিত জমিতে ৬০টির বেশি মুসুর ডালের গুচ্ছ প্রদর্শনী হয়েছে। প্রতিটি প্রদর্শন ক্ষেত্র ৫০ হেক্টর।
জেলা সহ-কৃষি অধিকর্তা(তথ্য) অমর মণ্ডল বলছেন, ‘‘গতবারে মুসুর চাষ হয়েছিল ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে। এ বার সেটাই ১৫,৫২৫ হেক্টর। ধান পরবর্তী জমি পতিতজমি ব্যবহার করে এই জেলায় পাইলট প্রজেক্ট হিসাবে মুসুর ডালের গুচ্ছ প্রদর্শনক্ষেত্র গুলিই চাষিদের আগ্রহ বাড়ানোর মূলে।’’ দাবি, ওই কৃষি আধিকারিকদের। দাবি যে অমূলক নয় সেটা বলছেন, খয়রাশোলের চাষি কিংবা সিউড়ি ২ ব্লকের হরিশপুর গ্রামের শেখ কুরবান, ঊষাগ্রামের মোহিত কুমার পালেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, অন্যবারে মুসুর সেভাবে লাগানো না হলেও এবার প্রদর্শন ক্ষেত্র হচ্ছে বলে লাগিয়েছি। ভাল ফলন হবে আশা করি।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এমনিতে ডাল চাষ ভাল হয় রামপুরহাট মহকুমা এলাকায় এছাড়া বোলপুরের ইলামবাজারে। সাঁইথিয়া মহম্মদবাজার এলাকায় ডাল চাষ হয়েই থাকে। কিন্তু বাকি এলাকাগুলিতে মুসুর ডালের গুচ্ছ প্রদর্শনক্ষেত্র করার সঙ্গে চাষিদের বোঝানো হচ্ছে।
জেলা সহ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশিক্ষণ) অশ্বিনী কুম্ভকার জনান, প্রায় ১২ হাজার চাষি এতে উপকৃত হবেন। সরকারি সহায়তা বলতে পরামর্শের সঙ্গে হেক্টর প্রতি বীজ ৩০ কেজি, বীজশোধনের ওষুধ, অনুখাদ্য, জীবাণুসার দেওয়া হয়েছিল। মুগ ডালের জন্য অনুরূপ একটি সরকারি প্রকল্প আসছে।