দূরের কিসান মান্ডিতে ধান বিক্রিতে অনীহা

প্রশাসনিক হিসেবে, তিন মহকুমা মিলে মোট কেনা হয়েছে ২২ হাজার ২৭৩ মেট্রিক টন ধান।

Advertisement

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৪১
Share:

কিসান মান্ডিতে চলছে বেচাকেনা। —ফাইল ছবি

নভেম্বরের শুরুতে কৃষকদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত সহায়ক মূল্যে ধান কেনা শুরু হলেও এখনও পর্যন্ত ধান বিক্রির ক্ষেত্রে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না কৃষকেরা— সরকারি পরিসংখ্যানে মিলেছে এমনই তথ্য।

Advertisement

জেলা খাদ্য দফতর সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২ ডিসেম্বর, রবিবার পর্যন্ত সিউড়ি মহকুমার কিসান মান্ডিতে ২ হাজার ৯১৭ মেট্রিক টন, রামপুরহাটে ১ হাজার ৭৮১ মেট্রিক টন, বোলপুর মহকুমায় ৮০৪ মেট্রিক টন ধান কেনা হয়েছে। তা ছাড়া বেনফেড, নাফেড সহ অন্য সংস্থা থেকে কেনা হয়েছে ১৬ হাজার ৭৬৯ মেট্রিক টন। প্রশাসনিক হিসেবে, তিন মহকুমা মিলে মোট কেনা হয়েছে ২২ হাজার ২৭৩ মেট্রিক টন ধান।

খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় ২০১৮-১৯ সালের খারিফ মরসুমে সরকারি সহায়ক মূল্যে ৩ লক্ষ ৮২ হাজার মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। তার মধ্যে কিসান মান্ডির মাধ্যমে ১ লক্ষ ২০ হাজার মেট্রিক টন, অত্যাবশকীয় পণ্য নিগম দফতরের মাধ্যমে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন, বেনফেডের তরফে ২৫ হাজার মেট্রিক টন, নাফেড-এর ২০ হাজার মেট্রিক টন, এনসিএফএস-এর মাধ্যমে ১০ হাজার মেট্রিক টন, এফসিআই-এর মাধ্যমে ৩২ হাজার মেট্রিক টন ধান কেনা হবে। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এ বছর ধানের সহায়ক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে কুইন্টাল পিছু ১ হাজার ৭৫০ টাকা। কিসান মান্ডিতে ধান নিয়ে যাওয়ার জন্য কুইন্টাল প্রতি ২০ টাকা করে উৎকর্ষ ভাতা দেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

এ দিকে সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রির ক্ষেত্রে আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় সম্প্রতি তারাপীঠে রামপুরহাট মহকুমার ৬৫টি পঞ্চায়েতের প্রধান, পঞ্চায়েত সদস্য, ৮টি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সহ জেলা পরিষদের সদস্যদের জেলা প্রশাসনের তরফে বার্তা দেওয়া হয়। কৃষকেরা যাতে সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করতে এগোন, সে জন্যে তাঁদেরও সচেষ্ট হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, কিসান মান্ডিগুলি বিভিন্ন এলাকার গ্রাম থেকে প্রায় ৫-১২ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় চাষিরা অনেকেই সেখানে গিয়ে ধান বিক্রি আগ্রহ হারাচ্ছেন। নলহাটির বুজুং গ্রামের এক চাষি জানান, কিসান মান্ডি তাঁর গ্রাম থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে। সেখানে ১ কুইন্টাল ধান বিক্রি করতে যেতে ৫০-৬০ টাকা খরচ হয়। এ ছাড়া এক দিনে গিয়ে ধান বিক্রি হয় না। অনেক ক্ষেত্রে ধান বিক্রির জন্য আগে নাম লেখানোর পরে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের নির্ধারণ করা তারিখ অনুযায়ী ধান বিক্রি করতে হয়। এ ছাড়া ধান বিক্রি করে সঙ্গে সঙ্গে টাকা পাওয়া যায় না। সে জন্যে গ্রামে ধানের অভাবী বিক্রি করতে বাধ্য হন অনেক চাষি। ওই কৃষিজীবি আরও জানান, গ্রামে গ্রামে এখন ফড়েরা ১ হাজার ৩৫০ টাকা প্রতি কুইন্টাল দরে ধান কিনলেও, ওই টাকা সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যায়। গ্রামের অনেক চাষিই ফড়েদের কাছে ধান বিক্রি করতে বেশি আগ্রহী।

খাদ্য দফতরের রামপুরহাট মহকুমা নিয়ামক বাবলু ভক্ত জানান, আগামী বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত কৃষকেরা সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রির সুযোগ পাবেন। এখন ধান কাটার মরসুম শুরু হয়েছে। কৃষকেরা যাতে সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করেন, সে জন্যে গ্রামে গ্রামে পঞ্চায়েত থেকে প্রচার করা হচ্ছে। চলছে লিফলেট বিলি, মাইকিং।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন