জৈব চাষের দিকে ঝুঁকছেন লম্বোদরপুরের সব্জি চাষি

এমনিতে জৈব চাষে সরকার যতই উৎসাহ দিক, ‘নির্ভরশীল’ রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ছেড়ে চাষিরা চট করে জৈব চাষে আসতে চান না। সেখানে ‘ঝুঁকি’ নিয়ে ওই চাষির জৈব চাষে এগিয়ে আসাকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন কৃষি কর্তারা।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৭ ১৪:০০
Share:

পরিচর্যা: নিজের বাড়িতে তরল সুষম জৈব সার তৈরি করছেন বিনয় গড়াই। নিজস্ব চিত্র

‘মানুষকে আর বিষ খাওয়াব না’— স্রেফ এই অনুভব থেকে জৈব চাষের দিকে ঝুঁকেছেন সিউড়ির এক সব্জি চাষি।

Advertisement

সিউড়ি ১ ব্লকের লম্বোদরপুর গ্রামেই ওই চাষির নাম বিনয় গড়াই। এমনিতে জৈব চাষে সরকার যতই উৎসাহ দিক, ‘নির্ভরশীল’ রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ছেড়ে চাষিরা চট করে জৈব চাষে আসতে চান না। সেখানে ‘ঝুঁকি’ নিয়ে ওই চাষির জৈব চাষে এগিয়ে আসাকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন কৃষি কর্তারা।

সিউড়ি শহরের সব্জি বাজারে যে এলাকার সব্জি এসে পৌঁছয়, লম্বোদরপুর গ্রাম সেগুলির অন্যতম। গ্রীষ্ম বর্ষা থেকে শীত পটল, ঝিঙে, ঢ্যাঁড়শ, কুমড়ো, শসা, বড়বটি থেকে শীতকালীন ফুলকপি, বাঁধাকপি, ট্যামাট, ক্যাপসিকাম-সহ হরেক সব্জি চাষকেই জীবিকা করেছেন এলাকার বেশ কিছু চাষি। সেই তালিকায় পড়েন বিনয়বাবুও। কিন্তু প্রতিনিয়ত জমির রাসায়নিক সার ব্যবহারের কুফল এবং কীটনাশক ব্যবহার করেলে যে আদতে ক্ষতি সকলেরই , এটা অনুভব করেতে শুরু করেছিলেন বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই। যদিও কীভাবে এগোবেন সেটাই বুঝতে পারছিলেন না তিনি। কৃষি দফতরের ব্যবস্থাপনায় বছর দুই আগের বর্ধমান জেলায় জৈবচাষের একটি প্রশিক্ষণ-ই তাঁকে পথ দেখায়।

Advertisement

বিনয় গড়াই বলেন, ‘‘জৈব পদ্ধতিতে চাষ করা হলে মূল প্রাপ্তি দুটি, এক, এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত যে কোনও সব্জির স্বাদ অনন্য। দুই সব্জিকে রোগপোকার আক্রমণ থেকে বাঁচাতে কীটনাশক প্রযোগ করতেই হয়। এমনও হয়েছে, কীটনাশক প্রযোগের দিন কয়েকের মধ্যেই বাজারজাত করা হয়েছে সব্জি। তখন নিজেকে অপরাধী মানে হত। এখন সেই অপরাধবোধ আর নেই।’’ জেলা সহকৃষি অধিকর্তা(তথ্য) অমর মণ্ডল বলছেন, ‘‘ওই গ্রামে গিয়েছিলাম, দেখলাম যথেষ্ট ভালভাবেই জৈব চাষ শুরু করেছেন বিনয়। যা অন্যদের অনুপ্রেরণা যোগাবে।’’

রাসায়নিক সারের বহুল ব্যবহারে জমি একসময় বন্ধ্যা হয়ে যাবে, যখন আর কোনও কিছুই ফলবে না। কৃষি বিজ্ঞানীদের এমন সতর্ক বার্তা চাষিরদের উদ্দেশ্যই অনেক আগেই এসেছে। শুধু তাই নয়, ফসলে রোগপোকার আক্রমণ হলে, বা অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ হলে, সেই বিষ রন্নাকরা খাবারের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। কীটনাশক প্রয়োগে নির্বিচারে কীট পতঙ্গ ধ্বংস করা হলে নষ্ট হয় জীব বৈচিত্র্য। এমন অনেক পোকামাকড় মরে যায়, যেগুলি আদতে ফসলের উপকারই করত। সেই জন্য সরকারি ভাবেও উৎসাহ দেওয়া হয় জৈব চাষে ঝুঁকতে।

এর জন্য রয়েছে পরম্পরাগত কৃষি বিকাশ যোজনা বা জৈব ভিলেজ তৈরিতে উতসাহ দেওয়া। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দু’বছর ধরে দুটি প্রকল্পে জেলার মোট ৮টি গ্রামে ধান থেকে সব্জি সব ক্ষেত্রেই জৈব চাষ শুরু হয়েছে। কেঁচোসারের পিট তৈরি করে দেওয়া, এছাড়া প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও উপকরণ দিয়ে চাষিদের পাশে থাকছে কৃষি দফতর। চাষিদের কথায় সঠিক পরামর্শ অনুযায়ী না চললে জৈব চাষে লাভের থেকে ক্ষতি সম্ভবনা বেশি।

যদিও বিনয়ের লম্বোদরপুর সেই তালিকায় পড়ে না। জেলা কৃষি উপ-অধিকর্তা সমীর ঘোষ বলছেন, ‘‘উনি আমাদের একটি আবেদন করলেই কৃষি দফতর পাশে দাঁড়াতে পারে। সবচেয়ে বড়কথা উদ্যোগটা উনি নিজেই নিয়েছেন।’’

বিনয় জানাচ্ছেন, বর্ধমান থেকেই তিনি কেঁচো সার তৈরি শিখেছেন। শিখেছেন তরল সুষম সার, ও কীট নাশক বানাতে। গোমূত্র- নিম, বেড়া কল্মির পাতা, চিটে গুঁড়, সর্ষের খোল এর মত হাতের কাছে থাকা বেশ কয়েকটি উপাদান পচিয়েই সহজেই তৈরি করা যায় সবকিছু। যাতে কাজও হয় ভাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন