এ ভাবেই চলছে স্কুল। সোমবার কড়িধ্যায় তোলা নিজস্ব চিত্র।
চারপাশে জনবসতি। তার ফলে নিকাশি ব্যবস্থাটাই ভেঙে পড়েছে স্কুলের। সামান্য বৃষ্টি হলেই হাঁটুজল জমে স্কুল চত্বরে। কাপড় ভিজিয়েই স্কুলে আসতে হয় পড়ুয়া থেকে শিক্ষকদের। দিনের পর দিন জল জমে থাকায় বাড়ছে মশার উপদ্রবও। নিকাশি সমস্যার জন্য জল ভেঙে যাতায়াতের দুর্ভোগ তো রয়েইছে, স্কুলের শৌচালয়গুলিও ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। রাজ্যের বর্তমান এই ডেঙ্গি পরিস্থিতিতে তাই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে সিউড়ি ১ ব্লকে অবস্থিত কড়িধ্যা বিদ্যানিকেতন।
গত পাঁচ বছর ধরে বর্ষার সময় এমন দুর্ভোগে নাজেহাল স্কুল। পরিস্থিতি বদলাতে এক বছর আগে স্কুলের তরফে প্রধান থেকে বিডিও, স্কুল পরিদর্শক থেকে জেলাশাসক— প্রশাসনের সব স্তরে দরবার করা হয়েছে। কিন্তু ফল মেলেনি, অভিযোগ স্কুলের প্রধান শিক্ষক বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ঠাকুরের। তাই এ বারও বদলায়নি জল-যন্ত্রণার ছবি।
স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকেরা বলছেন, ‘‘পরিস্থিতি না বদলালে জলবাহিত রোগ বা ডেঙ্গির মতো যে কোনও পতঙ্গবাহিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে যে কেউ। কিন্তু প্রশাসনের সদিচ্ছা না থাকলে সমস্যার সমাধান কঠিন।’’ এ বারও স্কুলের অভিযোগ পেয়ে শনিবারই স্কুলে এসে পরিস্থিতি দেখে গিয়েছেন সিউড়ি ১ বিডিও মহম্মদ বদরুজ্জোহা। কিন্তু সমস্যা মিটবে এমন কোনও ইঙ্গিত মেলেনি, দাবি স্কুল কর্তৃপক্ষের।
স্কুল সূত্রের খবর, ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৫২০। শিক্ষকের সংখ্যা ১৪। রাজনগর-সিউড়ি রাস্তার ধার ঘেঁষে রয়েছে ওই স্কুল। বছর কয়েক আগেও অবশ্য স্কুলে নিকাশি নিয়ে কোনও সমস্যা ছিল না। বৃষ্টি হলেই স্কুলের সীমানা প্রাচীরে থাকা গর্ত দিয়ে দিব্যি বেরিয়ে যেত জল। স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, বছর সাতেক আগে থেকেই স্কুলের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে ঘরবাড়ি তৈরি হওয়া শুরু হয়েছে। যদিও সব ঘরবাড়ি যে ব্যক্তিগত জমিতে হয়েছে, তা নয়। কিছু নির্মাণ সরকারি জমির উপরেও তৈরি হয়েছে বলে স্কুলের অভিযোগ। তার পর থেকেই জল নিকাশি নিয়ে সমস্যার শুরু। বর্ষায় স্কুল চত্বরে জমা জল বের করতে গেলেই নাকি আপত্তি আসে পড়শিদের কাছে থেকে। এমনকী, স্কুলের পড়ায়াদের কয়েক জন অভিভাবকও (যাঁদের বাড়িগুলি স্কুলের গা ঘেঁষে) ছেলেমেয়েদের কষ্ট মেটাতে এগিয়ে আসছেন না বলে দাবি শিক্ষকদের। অথচ জল জমে পরিস্থিতি হাতের নাগালে চলে যাওয়ায় মাঝে মধ্যেই পড়ুয়াদের ছুটি দিয়ে দিতে হয়।
স্কুলের বাংলার শিক্ষিকা সুজাতা সাহা-দাস বলছেন, ‘‘স্কুল চত্বরে জল জমে থাকলে মেয়েরা কীভাবে শাড়ি ভিজিয়ে ক্লাসে আসবে বলুন তো? জল বেরোতে না পারায় টয়লেটগুলির অবস্থা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। দেখলে গা গুলিয়ে আসে। তেমনই রয়েছে মশার উপদ্রব। সর্বত্র একটা অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি।’’ স্থায়ী সমাধান না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলেই তাঁর মত। একই অভিজ্ঞতা স্কুলের পডুয়াদেরও। নবম শ্রেণির প্রিয়ঙ্কা ব্যাপারী, দিশা বৈদ্য, রাহুল কর্মকার বা দশম শ্রেণির হিরণ্ময় ও কল্পনা মণ্ডলদের কথায়, ‘‘বর্ষায় অত্যন্ত খারাপ হাল আমাদের স্কুলের। নোংরা জলে স্কুলের পোশাক ভিজে আর মশার মধ্যে ক্লাসে বসে অস্থির হয়ে যাই।’’
সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন সিউড়ি ১ বিডিও মহম্মদ বদরুজ্জোহা। তাঁর আশ্বাস, ‘‘মেয়েদের ও ছেলেদের শৌচালয়গুলি দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা করছি। আর নিকাশি সমস্যা মেটাতে হলে প্রয়োজন নিকাশি নালার। স্কুলের সীমানা প্রাচীরের বাইরে সরকারি খাসজমি ও ব্যক্তিগত মালিকানার জমি কতটা, তা সমীক্ষার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ করব।’’