সাফাই: ঝাড়ু হাতে হড়কতোড় গ্রামের পথে মেয়েরা। নিজস্ব িচত্র
হড়কতোড় গ্রামে ঢোকার মুখে রাস্তার উপরে ছড়িয়ে রয়েছে আর্বজনা। গ্রাম থেকে পুকুর যাওয়ার রাস্তাও অপরিষ্কার। এমনকি স্কুলেও নিয়মিত সাফাই হয় না বলে অভিযোগ। টুকরো টুকরো এমন ছবিই ভাবিয়ে তুলেছিল গ্রামের কয়েকজন মেয়েকে।
তাদের মধ্যে কলেজ পড়ুয়াও যেমন রয়েছে, তেমনই চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীও আছে। কে কবে, সাফ করবে, সেই ভরসায় না থেকে আট জন নিজেরাই ঝাঁটা, ঝুড়ি নিয়ে ‘স্বচ্ছ গ্রাম মিশন’-এ নেমে পড়েছেন। নিজেরাই কার্ডবোর্ডের ডাস্টবিন তৈরি করে বসিয়ে দেন গ্রামের মুখের দোকানগুলির সামনে। সেখানে আর্বজনা ফেলতে নিয়মিত প্রচারও চালাচ্ছেন তাঁরা।
গত বছর গ্রামের ওই মেয়েরা তৈরি করেন ‘বীরাঙ্গনা’ নামের একটি দল। অবশ্য সে সময়ে দল তৈরির উদ্দেশ্য ছিল সংস্কৃতি চর্চা। নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল প্রমুখ মনীষীদের জন্মদিবস পালন শুরু করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে নাটকের চর্চা— সবই করছিলেন তাঁরা। ছাত্র-যুব উৎসবে ব্লকস্তরের নাটক প্রতিযোগিতায় সফল হয়ে জেলাস্তরে যোগ দেয় বীরাঙ্গনা।
সেখানেই থেমে না থেকে আরও কিছু গঠনমূলক কাজ করার তাগিদ তাড়িয়ে বেরাচ্ছিল তাঁদের। বীরাঙ্গনা দলের কর্ণধার পুরুলিয়ার নিস্তারিণী কলেজের পরিবেশ বিজ্ঞানের প্রথম বর্ষের ছাত্রী শিউলি মুখোপাধ্যায়ের মাথা থেকেই বেরিয়েছিল গ্রাম পরিচ্ছন্ন রাখার ভাবনা।
কলেজের এনএসএস ইউনিটের সদস্য শিউলি। সেই ইউনিট মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর কাজ ও সাফাইয়ের কাজ করেন তাঁরা। শিউলির কথায়, ‘‘এনএসএস থেকেই নিজেদের গ্রাম পরিচ্ছন্ন রাখার চিন্তা মাথায় এসেছিল।”
সে কথা পাড়তেই রাজি হয়ে যান বীরাঙ্গনার অন্য সদস্যেরাও। বাড়ি থেকেও উৎসাহ আসে। আর দেরি করেননি তাঁরা। প্রথমেই গ্রাম থেকে পুকুর যাওয়ার রাস্তা সাফাইয়ে নামের তাঁরা। পরের ধাপে হাত লাগান গ্রামের মুখে থাকা দোকানের সামনের এলাকা পরিষ্কারে।
ওই দলের সদস্য শিউলি মুখোপাধ্যায়, পায়েল মুখোপাধ্যায়রা বলেন, ‘‘গ্রামের মুখে তেলেভাজা, চা ও মুদিখানার দোকান রয়েছে। সেখানে আর্বজনা সাফ করার পরেও দেখি কিছু লোক নোংরা ফেলছেন। এ বার তাই নিজেরাই কার্ডবোর্ড দিয়ে ডাস্টবিন তৈরি করে সেখানে বসিয়ে দিয়েছি। এখন সবাইকে ওই ডাস্টবিনেই আবর্জনা ফেলতে বলছি।’’
গ্রামের প্রাইমারি স্কুলেও আর্বজনা সাফাই করেছেন তাঁরা। ওই স্কুলের শিক্ষক তথা পাড়া কেন্দ্রের বিধায়ক উমাপদ বাউরি বলেন, ‘‘গ্রামে সাংস্কৃতিক চর্চা থেকে শুরু করে এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখতে মেয়েরা যা করছেন, তা দৃষ্টান্ত।’’
বীরাঙ্গনারা অবশ্য অন্যদেরও সঙ্গে চাইছেন। তাঁরা বলেন, ‘‘এখনও অল্প কয়েকজন মাঠেঘাটে শৌচকর্মে যান। এটা বন্ধ করতে হবে। আমরা চাই সব দিক থেকেই আমাদের গ্রাম সুন্দর হয়ে উঠুক। সে জন্য সবাইকে আমরা সঙ্গে চাই।’’