বন্দুক ঠেকিয়ে বাড়ি লুট

রাতের সদরে দুষ্কৃতী-হানা

উঠোনে শৌচাগার। বুধবার ভোরে সিউড়ির সুভাষপল্লির বাড়িতে ঘরের দরজা খুলে শৌচাগারে গিয়েছিলেন গৃহকর্ত্রী। পুলিশ জানায়, সুযোগের অপেক্ষায় ছিল মুখঢাকা দুই দুষ্কৃতী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:২৫
Share:

বিবরণ: অস্ত্র দেখিয়ে লুটের তদন্তে পুলিশ। বুধবার সিউড়ির সুভাষপল্লিতে। নিজস্ব চিত্র

মহিলার কপালে রিভলবার ঠেকিয়ে লুটের অভিযোগ উঠল জেলাসদরে।

Advertisement

উঠোনে শৌচাগার। বুধবার ভোরে সিউড়ির সুভাষপল্লির বাড়িতে ঘরের দরজা খুলে শৌচাগারে গিয়েছিলেন গৃহকর্ত্রী। পুলিশ জানায়, সুযোগের অপেক্ষায় ছিল মুখঢাকা দুই দুষ্কৃতী। মহিলার মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকায় তারা। অভিযোগ, ঘরে ঢুকে আলমারি খুলিয়ে নগদ টাকা ও গয়না হাতিয়ে চম্পট দেয় দু’জন। সিউড়ির ব্যস্ত রাস্তা লাগোয়া বাড়িতে এ ভাবে লুটপাটের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সিউড়ি-দুবরাজপুর সড়ক ঘেঁষে সুভাষপল্লিতে বাড়ি সুনীল চৌধুরীর। পাঁচিল নেই, বাড়ির সীমানা গাছগাছালিতে ঘেরা। কাছেই একটি গাড়ি মেরামতের গ্যারাজ রয়েছে তাঁর। ২৭ জানুয়ারি সুনীলবাবুর ছেলের বিয়ে। তার আগে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। টাকা, গয়না রেখেছিলেন বাড়িতে। তাঁর ছেলে বাইরে কর্মরত। মঙ্গলবার রাতে ঘরে ছিলেন স্বামী-স্ত্রী । ভোরে ঘরের বাইরে বেরোতেই দুষ্কৃতীরা সুনীলবাবুর স্ত্রী সীমাদেবীকে নিশানা করে। ওই দম্পতির অভিযোগ, টাকা-গয়না মিলিয়ে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে চম্পট দেয় দু্ষ্কৃতীরা।

Advertisement

ঠিক কী ঘটেছিল?

সীমাদেবী জানান, তাঁর বাড়ির উঠোনে কুয়োতলার পাশে শৌচাগার। এ দিন ভোর ৩টে নাগাদ ঘুম থেকে উঠে শৌচাগারে গিয়েছিলেন। শৌচাগার থেকে বেরিয়ে দেখেন, মুখঢাকা দু’জন লোক উঠোনে দাঁড়িয়ে। সীমাদেবী ছুটে পালাতে যান। কিন্তু তাঁকে ধরে ফেলে দুষ্কৃতীরা। তাঁর মুখ চেপে, কপালে রিভলবার ঠেকিয়ে ঘরে ঢুকিয়ে নিয়ে যায়। যে ঘরে সুনীলবাবু শুয়েছিলেন, সেই ঘরে তাঁকে ঢুকতে না দিয়ে আলমারি থাকা ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় সীমাদেবীকে। তার পরে চাবি দিয়ে আলমারি খুলতে বলে। ওই মহিলা বলেন, ‘‘ওই দুষ্কৃতীরা বলে, কথা না শুনলে তুমি আর তোমার স্বামী— দু’জনেই মরবে। বাধ্য হয়েই আলমারি খুলে ছেলের বিয়ের জন্য রাখা টাকা, গয়না ওদের হাতে তুলে দিই। ওরা সে সব নিয়ে পালায়।’’ সুনীলবাবুকে ঘুম থেকে তুলে সব কথা জানান সীমাদেবী। তাঁরা কান্নাকাটি করতে থাকেন। টের পেয়ে ভিড় জমান পড়শিরা। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, দ্রুত ওই ঘটনার কিনারা করার চেষ্টা করা হবে।

শহরবাসীর একাংশের বক্তব্য, সিউড়ির বিভিন্ন এলাকায় গৃহস্থের অনুপস্থিতির সুযোগে বাড়িতে চুরির একের পর এক ঘটনা ঘটেছে। অস্ত্র দেখিয়ে লুটপাটও ঘটেছে। তা আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছরও জানুয়ারি মাসে সিউড়ির সাজানোপল্লির একটি বাড়িতে মাঝরাতে আগ্নেয়াস্ত্র সহ ঢুকেছিল দুষ্কৃতীরা। গৃহকর্ত্রীর উপস্থিতবুদ্ধির জেরে তা রোখা গেলেও , বাধা দিতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের আক্রমণে গুরুত্বর জখম হন তাঁর দুই আত্মীয়। ওই ঘটনার দিন কয়েক পরেই সিউড়ি শহর লাগয়ো তিলপাড়া পঞ্চায়েতের নতুনপল্লিতে দুষ্কৃতীরা বাড়িতে ঢুকে দুই ভাইকে পিটিয়ে গিয়েছিল। ক্ষোভ ছড়িয়েছিল এলাকায়। তার কিছু দিনের মধ্যে পাঁচ জন দুষ্কৃতীকে ধরে পুলিশ দাবি করে, সিউড়ি শহর ও থানা এলাকায় একাধিক চুরির ঘটনায় জড়িত ওই দুষ্কৃতীরাই। বেশ কিছু জিনিসও উদ্ধার করে পুলিশ। কিন্তু শহরবাসীর একাংশের অভিযোগ, তার পরেও চুরির ঘটনায় লাগাম দেওয়া যায়নি। গত বছর আরও অন্তত পাঁচটি বাড়িতে গৃহস্থের অনুপস্থিতিতে চুরি হয়েছে।

এ বছরের শুরুতেই ফের লুটপাট হল সিউড়ি শহরে। তা নিয়ে রীতিমত উদ্বেগে শহরবাসী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন