ভেসে গিয়েছে হিংলো নদীর কজওয়ে। পাহারায় পুলিশ-প্রশাসন। বুধবার ছবিটি তুলেছেন দয়াল সেনগুপ্ত।
এ বার জেলায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে বোলপুর মহকুমা এলাকায়। বুধবার পর্যন্ত সেই ধারা বজায় থাকল। কৃষি দফতর সূত্রের খবর, জেলার অন্য দু’টি মহকুমা সিউড়ি ও রামপুরহাটে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যেখানে ১০.৪ ও ৫.২ মিলিমিটার, সেখানে বোলপুরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৬৬.৫ মিলিমিটার। উদ্বেগ বাড়িয়ে লাভপুর ব্লকে গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলার যে তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত জলমগ্ন হয়েছিল, তার মধ্যে লাভপুরের থীবা ও লাভপুরের-১ পঞ্চায়েত এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রাম রয়েছে। পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক নয়। সেখানে ভারী বৃষ্টি সমস্যা তৈরি করতে পারে।
সিউড়ি মহকুমায় তেমন বৃষ্টি না হলেও ঝাড়খণ্ডে অতি বৃষ্টিপাতের কারণে এই মহকুমায় থাকা খয়রাশোলের হিংলো জলাধার থেকে মঙ্গলবার রাতে ১৭,৫০০ কিউসেক জল ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল সেচ দফতর। পরিণতিতে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার দিনভর বন্ধ থাকল রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে থাকা খয়রাশোলের হিংলো নদীর কজওয়ে। ব্যাহত হল আসালসোল থেকে সিউড়ি, খয়রাশোল ও রাজনগর রুটের বাস চলাচল। এত বেশি পরিমাণ জল ছাড়তে হয়েছিল বলে নদীর ধার ঘেঁষা খয়রাশোলের গ্রামগুলিকে সতর্ক করেছিল ব্লক প্রশাসন। খয়াশোলের চাপলা, পারুলবোনা, বালিতা, বাহাদুরপুর-সহ একাধিক গ্রামের মানুষ সারা রাত উদ্বিগ্ন ছিলেন। কারণ হিংলো নদীর জল ওই গ্রামগুলিকে প্লাবিত করতে পারে, এমন আশঙ্কা ছিল। যদিও তেমনটা ঘটেনি। রাত ১টার পর থেকে নদীর জল কমতে থাকে। সতর্ক ছিল প্রশাসনও। ঝুঁকি নিয়ে জলের নীচে থাকা হিংলো কজওয়ে দিয়ে কেউ যাতে যাতায়াত না করেন, সে ব্যবস্থা করেছিল পুলিশ।
এ দিকে, জেলার ভারপ্রাপ্ত উপ কৃষি অধিকর্তা তথা সহ কৃষি অধিকর্তা (তথ্য) অমর মণ্ডল জানিয়েছেন, সোমবার পর্যন্ত যে তথ্য দফতরে এসেছে তাতে ১০১টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৭৩৯টি মৌজায় ১৯৮৯৩ হেক্টর জমি ও ডুবেছে ৪৯৯০ হেক্টর বীজতলা জলে ডুবেছে। তার পর থেকে নতুন কোনও তথ্য হাতে আসেনি। বুধবারের মধ্যে অনেক জায়গায় অবশ্য জমি থেকে জল নেমেছে। অমরবাবু বলেন, ‘‘কৃষি দফতরে পাঠানো উদ্যান পালন দফতরের যে রিপোর্ট এসেছে, তাতে ধানের পাশাপাশি সব্জি চাষেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে অতিবৃষ্টি। সব্জি চাষে জেলার মোট ৪২০৩ হেক্টর জমির মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৭০৫ হেক্টর। লাভপুর, সাঁইথিয়া, মহম্মদবাজার, সিউড়ি ২, রামপুরহাট, ময়ূরেশ্বর ১, মুরারই ২ খয়রাশোল ও দুবরাজপুরের মতো ১১টি ব্লকে সব্জি চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’’