Flute Artist

অভাবের তাড়নায় বাঁশির সুরও যেন ক্ষীণ

শিল্পীভাতা হিসেবে হাজার টাকা মিললেও তাতে দিন চলে না। তাঁর কথায়, ‘‘অভাবের সংসার। বড় কষ্টে দিন কাটছে। অর্থের অভাবে চিকিৎসাও করাতে পারছি না। প্রশাসন একটু পাশে দাঁড়ালে ভাল হয়।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঘমুণ্ডি শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২০ ০৭:১২
Share:

আকলু মাছোয়ার। ফাইল চিত্র

বয়স প্রায় আশি ছুঁই ছুঁই। বয়সের ভারে স্মৃতিও খানিক দুর্বল। কিন্তু ‘মৃগয়া’ সিনেমার কথা উঠলেই গর্বে, আনন্দে মুখখানা ঝলমল করে ওঠে পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডির আকলু মাছোয়ারের।

Advertisement

সিনেমায় ছৌ-পালার দৃশ্যে তাঁর বাঁশির সুর মুগ্ধ করেছিল সকলকে। তার পরে দেশ-বিদেশে নানা অনুষ্ঠানে সম্মান, পুরস্কার মিলেছে। আজ সেই বাঁশিশিল্পীর কষ্টেসৃষ্টে দিন কাটে মাটির জীর্ণ ঘরে।

শিল্পীভাতা হিসেবে হাজার টাকা মিললেও তাতে দিন চলে না। তাঁর কথায়, ‘‘অভাবের সংসার। বড় কষ্টে দিন কাটছে। অর্থের অভাবে চিকিৎসাও করাতে পারছি না। প্রশাসন একটু পাশে দাঁড়ালে ভাল হয়।’’

Advertisement

কয়েক দশক আগের কথা। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত, মিঠুন চক্রবর্তীর প্রথম সিনেমা, ‘মৃগয়া’-র জন্য পরিচালক মৃণাল সেনের তরফে চড়িদার গম্ভীর সিং মুড়ার ছৌ দলের ডাক পড়ে। সিনেমায় ব্যবহৃত ছৌ-পালাতে বাঁশি বাজান আকলু মাছোয়ার।

মাটির বারান্দায় বসে সেই স্মৃতি হাতড়াতে হাতড়াতে বললেন, ‘‘সেই ছৌ পালাতে আমার বাঁশির সুর সবার খুব ভাল লেগেছিল। সবাই পিঠ চাপড়ে বাহবা দিয়েছিলেন। পরে পুরুলিয়ার বিভিন্ন ছৌ দলের সঙ্গে লন্ডন, আমেরিকা, প্যারিসে গিয়ে বাঁশি বাজিয়েছে।’’

শুধু আড়বাঁশি বা সানাই নয়, বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র অনায়াস দক্ষতায় বাজাতে পারেন। মিলেছে বহু পুরস্কারও। তবে সে সব এখন শুধুই স্মৃতি। ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া কিছু স্মারক আঁকড়ে তাঁর আক্ষেপ, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেশিরভাগই নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচাতে পারেননি।

শিল্পীর তিন ছেলে। বড় ছেলে ভিন্ রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। মেজো ছেলে দিনমজুরি আর ছোট ছেলে বাজারে মুরগি বিক্রি করেন।

খাওয়ার ব্যবস্থা ছোট ছেলের তরফে হলেও শিল্পী তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন পুরনো মাটির বাড়িতে। একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে আগেই।

শিল্পীর স্ত্রী রাসেশ্বরীদেবীও কিছু দিন হল অসুস্থ। প্রতিবেশীরা জানালেন, এখনও মাঝে মধ্যে বাঁশি বাজানোর চেষ্টা করেন আকলু মাছোয়ার। তবে শরীরের যা অবস্থা, আর বিশেষ পেরে ওঠেন না। বড় কষ্টে দিন কাটছে।

শিল্পীর দুরবস্থার কথা মেনে নিয়েছেন স্থানীয় বাঘমুণ্ডি পঞ্চায়েতের প্রধান বীরবল মাছোয়ারও। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁর কৃতিত্বের কথা সে ভাবে না জানলেও পরিবারটির দুরবস্থার কথা জানি। শিল্পীর স্ত্রীর একটা বার্ধক্যভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’’

বিডিও (বাঘমুণ্ডি) উৎপল দাস মোহরী অবশ্য জানান, তিনি নিজে শিল্পীর বাড়ি গিয়ে সব কিছু খতিয়ে দেখে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবেন। বাঘমুণ্ডির বিধায়ক নেপাল মাহাতোও জানান, বিধানসভা শুরু হলে শিল্পীর দুরবস্থার কথা সেখানেও তুলবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন