Birdless Lanbandh

লালবাঁধ পাখি শূন্য, সপ্তাহ জুড়ে সমীক্ষায় জুটল হতাশা

কেন এই অবস্থা? তাঁর মতে, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও বাঁধের এলাকা জনবহুল হয়ে পড়ায় পাখিরা অন্যত্র জলাশয় বেছে নিয়েছে। লালবাঁধের চার পাশে তৈরি হয়েছে বড় রাস্তা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

 বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:৩১
Share:

লালবাঁধে চলছে ইঞ্জিনচালিত নৌকা। শনিবার। ছবি:অভিজিৎ অধিকারী

শীতকালে বিষ্ণুপুরের লালবাঁধের আকর্ষণ পরিযায়ী পাখিরা পথ ভুলেছে। পক্ষীপ্রেমীদের এ অভিযোগ ছিলই। এ বার সপ্তাহব্যাপী পাখি গণনার কাজ শেষে শনিবার আরও হতাশার কথা জানালেন পাখিপ্রেমী দুই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরাও। গত ১২ জানুয়ারি থেকে লালবাঁধে সমীক্ষা করতে এসে, একটিও পরিযায়ী পাখির দেখা পাননি বলে তাঁরা জানালেন। এ জন্য যন্ত্রচালিত নৌকোর ব্যবহার এবং বাঁধের কাছে লোকজনের কোলাহলকেই দায়ি করলেন তাঁরা। তবে বিষ্ণুপুরের যমুনাবাঁধ, কালিন্দীবাঁধ ও জয়পুরের সমুদ্রবাঁধে সপ্তাহভর সমীক্ষায় বেশ কিছু পরিযায়ী পাখির খোঁজ পেয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

পাখি গণনার দায়িত্বে ছিল ‘বিষ্ণুপুর নেচার ক্লাব’ এবং ‘বার্ড ওয়াচিং সোসাইটি’। নেচার ক্লাবের সম্পাদক দেবার্ণব সেন বলেন, “এক সময় বিষ্ণুপুরের লালবাঁধ ছিল পরিযায়ী পাখিদের প্রিয় জায়গা। ঝাঁকে ঝাঁকে ঘুরে বেড়াত পিংহাঁস, সরাল, রেড ক্রিস্টেড পোচার্ডের মতো বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। এ বার এক সপ্তাহ ধরে পাখি গণনা করতে এসে, এখানে একটিও পরিযায়ী পাখির দেখা আমরা পাইনি।’’

কেন এই অবস্থা? তাঁর মতে, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও বাঁধের এলাকা জনবহুল হয়ে পড়ায় পাখিরা অন্যত্র জলাশয় বেছে নিয়েছে। লালবাঁধের চার পাশে তৈরি হয়েছে বড় রাস্তা। সেখান দিয়ে দিনরাত গাড়ি যাচ্ছে। বাঁধের জলে চলছে যন্ত্রচালিত নৌকা। ভোর-রাতে জলে মাছ ধরা হচ্ছে। পাড়ে আলো জ্বলছে। কাছেপিঠে মাইক বাজছে দিনরাত। এ সব পাখিদের পক্ষে অত্যাচার।

Advertisement

শনিবার লালবাঁধে পাখি গণনার কাজ দেখতে এসে আশ্বাস দেন বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক প্রসেনজিৎ ঘোষ। তিনি বলেন, “লালবাঁধে যন্ত্রচালিত নৌকার পরিবর্তে বিকল্প কিছু ভাবা যায় কি না, আমরা আলোচনা করব। লালবাঁধকে ঘিরে যাতে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়ে এবং সেই সঙ্গে পরিযায়ী পাখিদের বাসস্থানও রক্ষা পায়, সে চেষ্টা করা হবে।’’ পক্ষীপ্রেমীদের মতে, রাতে আলো, শব্দ ও দূষণ কমাতে পারলেই আগামী বছরে ধীরে ধীরে পাখির সংখ্যা বাড়তে পারে।

বিষ্ণুপুরের পাঞ্চেত বন বিভাগের ডিএফও অঞ্জন গুহ জানান, পাখি গণনা সবে শেষ হল। পরে বিভিন্ন জলাশয়ের তথ্য মিলিয়ে চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি করা হবে। তিনি বলেন, ‘‘চলতি বছরে তুলনামূলক ভাবে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমেছে ঠিকই। তবে একেবারেই যে আসেনি, তা নয়। গ্রে লেগ গুজ, গ্রেট ক্রেস্টেড, স্মল ক্রেস্টেড ইত্যাদি পাখিরা এসেছে, শিকার করেছে, এলাকা দেখে চলে গিয়েছে পছন্দমতো কোনও জলাশয়ে। আগামী দিনে যাতে বেশি সংখ্যায় পাখি আসে, তার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তাই পাখি গণনার সঙ্গে আমরা স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোরও চেষ্টা করছি। বন দফতর ও স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে বিষ্ণুপুরের বিভিন্ন বাঁধ, জয়পুরের সমুদ্রবাঁধ ও দ্বারকেশ্বর নদে কোন কোন প্রজাতির পাখি আসে তার ছবি-সহ একটি পুস্তিকা
প্রকাশিত হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন