কয়লাখনি গড়তে কোপ জঙ্গলে, শঙ্কায় আদিবাসীরা

এলাকাবাসীর বক্তব্য, এখনই হয়তো তাঁদের বসতে হাত পড়বে না, কিন্তু যে ভাবে জঙ্গল কেটে কয়লাখনি তৈরির কাজ চলছে, তাতে ঘুরিয়ে তাঁদের উচ্ছেদের পরিকল্পনাই করা হয়েছে। অথচ এ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে কোনও আলোচনাই করা হয়নি।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

খয়রাশোল শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৯ ০০:৪৬
Share:

সমূলে: খনি গড়তে কাটা হচ্ছে জঙ্গল। গঙ্গারামচকে। নিজস্ব চিত্র

কয়লাখনি তৈরির জন্য কাটা হচ্ছে বিস্তীর্ণ বনভূমি— তার প্রতিবাদে বিডিও-র দ্বারস্থ হলেন বনভূমি সংলগ্ন এলাকার কয়েকটি আদিবাসী গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, এতে পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ নষ্ট হচ্ছে, তাতে আঁচ পড়তে পারে স্থানীয় মানুষের জীবন-জীবিকায়। খয়রাশোলের গঙ্গারামচকে।

Advertisement

ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, খয়রাশোল ব্লকের গঙ্গারামচক মৌজায় পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম খোলামুখ কয়লাখনি তৈরির জন্য ১০১ হেক্টর বনভূমি সাফাইয়ের কাজে হাত দিয়েছে। প্রস্তাবিত খনিএলাকা সংলগ্ন বাস্তবপুর, সগড়ভাঙ্গা, বেলডাঙা, ভাদুলিয়া গঙ্গারামচক, দেবগঞ্জ এলাকার আদিবাসীরা মঙ্গলবার বিডিও-র কাছে লিখিত ভাবে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

এলাকাবাসীর বক্তব্য, এখনই হয়তো তাঁদের বসতে হাত পড়বে না, কিন্তু যে ভাবে জঙ্গল কেটে কয়লাখনি তৈরির কাজ চলছে, তাতে ঘুরিয়ে তাঁদের উচ্ছেদের পরিকল্পনাই করা হয়েছে। অথচ এ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে কোনও আলোচনাই করা হয়নি।

Advertisement

খয়রাশোলের বিডিও সঞ্জয় দাস প্রতিবাদপত্র পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলছেন, ‘‘কয়লা খনি তৈরির জন্য কারও বসতে হাত পড়ছে না। তবে কয়লা খনি লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের যাতে সমস্যা না হয়, তা নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কথা বলা হবে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও।’’

প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালে কয়লার ব্লক-বণ্টন বাতিল হওয়ার আগে খয়রাশোলের কৃষ্ণপুর-বড়জোড় ও গঙ্গারামচক মৌজার মাটির নীচে কয়লা উত্তোলনের বরাত পায় ‘এমটা’। সেই কয়লা বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহ করার পরিকল্পনা ছিল ওই সংস্থার। ২০১১ সালের পর থেকে কৃষ্ণপুর-বড়জোড় অঞ্চল এবং তার পরে গঙ্গরামচকে কিছু অংশে খোলামুখ খনি গড়ে কয়লা উত্তোলন শুরু করেছিল তারা। কিন্তু ২০১৪ সালে সারা দেশে ২০৪টি কোল-ব্লক বাতিলের তালিকায় ছিল খয়রাশোলের দু’টি ব্লক-ও।

২০১৫ সালে নয়া কয়লা ব্লক বণ্টন আইনের আওতায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুত উন্নয়ন নিগম রাজ্যে যে পাঁচটি কোল ব্লক থেকে কয়লা উত্তোলনের দায়িত্ব পায়, সেই তালিকায় নাম ওঠে খয়রাশোলের বড়জোড় ও গঙ্গারামচক মৌজার। কিন্তু পরিবেশ ও বন মন্ত্রকের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন না মেলায় ২০১৭ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত সেখানে কয়লা উত্তোলন করা যায়নি। জট কাটিয়ে ২০১৭ সালের শেষ দিকে খয়রাশোলের কৃষ্ণপুর-বড়জোড় মৌজা থেকে কয়লা উত্তোলনের প্রস্ততি শুরু করলেও জটিলতা ছিল গঙ্গারাপুর নিয়েই। কারণ এই মৌজার একটি বড় অংশে ছিল বিশাল জঙ্গল। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়ম মেনে ১০১ হেক্টর জায়গা নিজেদের নামে নিয়ে সেখানে জঙ্গল কাটাচ্ছে নিগম।

তা নিয়েই আপত্তি তুলছেন প্রস্তাবিত কয়লাখনি লাগোয়া এলাকার আদিবাসীরা। বাবুরাম পাঁউরিয়া, সুমিতা সরেন, তাপস মারান্ডি, মলিন্দ টুটু, সোমনাথ হেমব্রমের মতো এলাকাবাসীর অভিযোগ, বনভূমি কেটে ফেলায় তাঁদের জীবন-জীবিকায় আঘাত আসবে। জ্বালানি কাঠ, শালপাতা, কেন্দু পাতা, খেজুর, মধু, পিয়াল ফল— সবই তাঁরা সংগ্রহ করেন জঙ্গল থেকে। জঙ্গল না থাকলে সেই পথ বন্ধ হবে। পাশাপাশি থাকবে না প্রচুর বন্যপ্রাণ।

তাঁদের আরও আশঙ্কা, কয়লাখনি থেকে তাঁদের বসতের দূরত্ব ২-৩ কিলোমিটার। আগামী দিনে কয়লা উত্তোলন শুরু হওয়ার পরে বিস্ফোরণ ঘটালে ফাটল ধরতে পারে তাঁদের মাটির বাড়িতে। দূষিত হবে পরিবেশও।

বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জিএম অমরকুমার পাল বলছেন, ‘‘এ বিষয়ে আমার কানে কিছু আসেনি।’’ বন দফতর জানিয়েছে, বনভূমি নষ্ট হয়েছে, তাই ‘কমপেনসেটারি অ্যাফোরেস্টেশন ফান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড প্ল্যানিং অথরিটি’ কর্মসূচির আওতায় সম-পরিমাণ এলাকায় নতুন করে গাছ লাগানো হবে। তবে এটাও ঠিক, সেখানে ঘন জঙ্গল তৈরি হতে কয়েক বছর সময় লাগবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন