বীরভূম কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক

তছরুপের নালিশ, গ্রেফতার ফব নেতা

বীরভূম কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলছেন, ‘‘বাম আমলে কোনও বোর্ড ছিল না ব্যাঙ্কের। সর্বময় কর্তা ছিলেন রেবতীবাবুই। পদে থাকার সময়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যাঙ্কের নলহাটি শাখা থেকে ২০০৪ সালে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীকে ৬৬ লক্ষ ৮৪ হাজার ৯৩৫ টাকা ঋণ পাইয়ে দিয়েছিলেন রেবতীবাবু।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৮ ০৩:০৯
Share:

ধৃত: রেবতীচরণ। নিজস্ব চিত্র

ফের খবরে বীরভূম কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক। বিশ্বাসভঙ্গ, টাকা তছরুপ ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেফতার হলেন ব্যাঙ্কের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা ফরওয়ার্ড ব্লকের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রেবতীচরণ ভট্টাচার্য। ব্যাঙ্কের সিইও বেনজির হোসেনের সাম্প্রতিক অভিযোগের ভিত্তিতে রেবতীবাবুকে মহম্মদবাজারের বাড়ি থেকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করে পুলিশ। বুধবার সিউড়ি সিজেএম আদালতে হাজির করানো হলে অভিযুক্তের দু’দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ হয়।

Advertisement

বীরভূম কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলছেন, ‘‘বাম আমলে কোনও বোর্ড ছিল না ব্যাঙ্কের। সর্বময় কর্তা ছিলেন রেবতীবাবুই। পদে থাকার সময়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যাঙ্কের নলহাটি শাখা থেকে ২০০৪ সালে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীকে ৬৬ লক্ষ ৮৪ হাজার ৯৩৫ টাকা ঋণ পাইয়ে দিয়েছিলেন রেবতীবাবু। এই নিয়ে আপত্তি ছিল তৎকালীন সিইও ও ডেপুটি ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের। সে কথা শোনেননি তিনি। সেই ঋণ অনাদায়ে সুদে-আসলে বেড়ে ১ কোটি ৫৪ লক্ষ ৮৫ হাজার ৫২৪ টাকা হয়েছে।’’ যদিও রেবতীবাবুর দাবি, বিপক্ষ রাজনৈতিক দল করায় চক্রান্ত করে এত বছর পরে এমন অভিযোগ এনেছেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। তাঁর যুক্তি, ‘‘ঋণ দেওয়া আমার কাজ নয়। খুঁটিনাটি অনেক পদ্ধতি মেনেই ঋণ দেওয়া হয়েছিল।’’ তৎকালীন সিইও ও ডেপুটি ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের আপত্তির কথাও মানতে চাননি ফব-র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রেবতীবাবু।

বিপুল খেলাপি-ঋণ অনাদায়ী থাকায় গত ২০১৫ সালে মে মাসের ১৫ তারিখ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের লাইসেন্স বাতিল করার পর থেকেই জেলার ১৭টি শাখা বন্ধ ছিল। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ম হল, কোনও ঋণ তথা অনুৎপাদক সম্পদের (এনপিএ) পরিমাণ ৫ শতাংশের বেশি হওয়া চলবে না। কিন্তু, বীরভূম জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক যে পরিমাণ ঋণ দিয়েছিল, তার ৫২ শতাংশ খেলাপি বা অনুৎপাদক সম্পদে পরিণত হয়েছিল। তার পরেই চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। জেলা জুড়ে সমবায় ব্যাঙ্কের সব ক’টি শাখা বন্ধ হওয়ায় সমস্যায় পড়ে যান ২ লক্ষ ৬১ হাজার ৪৭৪ জন আমানতকারী। ব্যাঙ্কে গচ্ছিত ৩৫০ কোটি ১২ লক্ষ ৫২ হাজার টাকার ভবিষ্যৎ কী হবে, এটা নিয়ে অজানা আশঙ্কায় ভুগতে শুরু করেন গ্রাহকেরা।

Advertisement

শুধু গ্রাহক নন, বিপদে পড়ে সমবায় ব্যাঙ্কের উপরে নির্ভরশীল জেলার ৩৩১টি সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি। তার পর থেকেই ব্যাঙ্ক খোলার দাবিতে বহু আন্দোলন হয়েছে। বর্তমানে ক্ষমতাসীন তৃণমূল বোর্ড বরাবরই দাবি করেছে ব্যাঙ্কের এমন অবস্থার জন্য দায়ী বাম আমলের চেয়ারম্যান ও ব্যাঙ্ককর্মীদের একটা অংশের নিয়ম বহির্ভূত কার্যকলাপ। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার, নাবার্ড ও রাজ্য সরকার মিলিত ভাবে ১০০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ সাহায্য এবং নানা শর্তপূরণ করে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরের লাইসেন্স ফিরে পায় সমবায় ব্যাঙ্ক।

নুরুল ইসলাম বলছেন, ‘‘ব্যাঙ্ক এখন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে। অনাদায়ী ঋণ আদায়ের চেষ্টা চলেছে। বহু গরমিল রয়েছে। এখনও এমন ২০০০ ঋণ গ্রহীতা রয়েছেন, যাঁদের ব্যাঙ্কে দেওয়া নথিপত্র ভুয়ো। মিলিত ভাবে এঁরা ১৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন।’’ চেয়ারম্যানের দাবি, সে সবের তদন্ত করতে করতেই নলহাটির ওই ব্যবসায়ীর ক্যাস ক্রেডিট ঋণ নেওয়ার বিষয়টি সামনে আসে। তার পরেই অভিযোগ হয়েছে। নুরুলবাবুর কথায়, ‘‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কোনও বিষয় নেই।’’ নুরুলবাবুর দাবি মানতে নারাজ ফরওয়ার্ড ব্লক। ফব-র জেলা সম্পাদক দীপক চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘রেবতীবাবু চেয়ারম্যান ছিলেন। কিন্তু, ঋণ তো তিনি দেননি। তা ছাড়া এত দিন পরে অভিযোগের পিছনে কোনও অভিসন্ধি রয়েছে।’’

অভিযুক্তের জামিনের আবেদন করে আদালতে একই সাওয়াল করেন রেবতীবাবুর আইনজীবী সোমনাথ মুখোপাধ্যায়। তাঁর যুক্তি ছিল: নলহাটির ওই ব্যবসায়ীকে ঋণ দিয়েছে ব্যাঙ্ক। অনেকগুলো ধাপের পরে ঋণ দেওয়া হয়েছ। কোথাও বলা নেই রেবতীবাবুই ঋণ পাইয়ে দিয়েছেন। সেখানে ব্যাঙ্কের কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে রেবতীবাবুকে অভিযুক্ত করার অর্থই হল এর পিছনে অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে। পাল্টা বলতে উঠে সরকারি আইনজীবী কেশব দেওয়াসী বলেন, ‘‘২০০৪ থেকে মাত্র ৯ মাসের মধ্যে ৫ লক্ষ টাকার ঋণ চার ধাপে ৬৬ লক্ষ করার অনুমোদন দিয়েছিলেন রেবতীবাবুই।’’ তার পরেই ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সৌম্য চট্টোপাধ্যায় জামিন না মঞ্জুর করে অভিযুক্তকে দু’দিনের পুলিশে হেফাজতে পাঠান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন