কুবিরপুর স্কুল। নিজস্ব চিত্র
একই দিনে চার ছাত্রী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হল। তাদের মধ্যে তিন জন নবম এবং এক জন অষ্টম শ্রেণির। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই একই উপসর্গ— বুকে ব্যথা এবং শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা। এই নিয়ে গত ছ’দিনে পাঁচ ছাত্রী হাসপাতালে ভর্তি হল। কিন্তু, কেন বার বার অসুস্থ হচ্ছে ছাত্রীরা সেই রহস্যের সমাধান হয়নি।
ঘটনাস্থল সিউড়ি ২ ব্লকের কুবিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়। বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি বলেন, ‘‘মোট পাঁচ জন অসুস্থ হয়েছে। প্রত্যেকের পরীক্ষা হয়েছে। সকলেই আপাতত সুস্থ। ঠিক কী কারণে এই ঘটনা ঘটছে, তা
জানতে আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা করা দরকার।’’ স্কুল হেলথের মেডিক্যাল অফিসার সৌমী গঙ্গোপাধ্যায় মনে করছেন, ‘‘শুধু ভয়ের কারণেও এই সমস্যা হতে পারে।’’ সেটা ঠিক কী, তা খুঁজে বের করতে তৎপরতাও শুরু হয়েছে প্রশাসনে।
ঘটনার সূত্রপাত শনিবার সকালে। স্কুলের প্রার্থনা চলাকালীন আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়ে নবম শ্রেণির এক ছাত্রী। তাকে সিউড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বুধবার নবম শ্রেণির আর এক ছাত্রী একই উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার আবার এক ধাক্কায় চার জন অসুস্থ হয়। তাদেরও সিউড়ি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা হয়। শিক্ষকদের থেকে জানা গিয়েছে, এ দিন চল্লিশ মিনিটের মধ্যে চার জন অসুস্থ হয়েছে।
খবর পেয়ে স্কুলে পৌঁছন সিউড়ি ২ ব্লকের বিডিও শেখ আব্দুল্লা, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির প্রেসিডেন্ট এবং দুই সদস্যের মেডিকেল টিম। তাঁরা পুরো এলাকা পরিদর্শন করেন। স্থানীয় পঞ্চায়েতে পতঙ্গবাহিত রোগের যে টিম আছে, তাদের স্কুল প্রাঙ্গণ পরিষ্কারের নির্দেশ দেন বিডিও। তাঁর কথায়, ‘‘স্কুলে কয়েক’টি জায়গা অপরিষ্কার রয়েছে। সেগুলি পরিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছি। তবে কী কারণে অসুস্থতা সেটা চিকিৎসকরা বলতে পারবেন। অসুস্থ ছাত্রীদের সঙ্গে দেখাও করেছি।’’
কী সমস্যা হচ্ছিল? অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীর কথায়, ‘‘নাকে কেমন একটা গন্ধ পেলাম। তার পরেই মাথা ঝিমঝিম করতে লাগল। নাক জ্বালা করছিল। নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। তার পরেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’’ বার বার পড়ুয়ারা একই উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ায় আতঙ্কিত স্কুলের শিক্ষকেরা। স্কুলের টিচার-ইন-চার্জ উত্তম দাস বলেন, ‘‘কী কারণে অসুস্থ হচ্ছে, বুঝতেই পারছি না। পড়ুয়ারা আমাদের সন্তানের মতো। এই ঘটনায় খুবই আতঙ্কিত। আমরাও এই অসুস্থার কারণ সন্ধান করছি।’’
সিউড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জিষ্ণু ভট্টাচার্য মনে করছেন, ‘‘যেটুকু বুঝলাম, তাতে মনে হয়েছে এক্ষেত্রে শারীরিক সমস্যার থেকেও মানসিক সমস্যা প্রভাব ফেলতে পারে। পরিভাষায় যাকে বলে ‘ডিসোসিয়েটিভ কনভার্সেশন ডিসঅর্ডার’। আসলে আমাদের অবচেতন মন অনবরত নানা চিন্তা করতে থাকে। কখনও সে আশেপাশের লোকের থেকে সহানুভূতি আদায়ের জন্য নানা জিনিস করতে থাকে। তার থেকেও খিঁচুনি, শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা হতে পারে।’’