Girl

Barjora: পূজার হাতে শববাহী গাড়ির স্টিয়ারিং

সমাজসেবার নানা কাজে অনেক দিন ধরেই যুক্ত তিনি। খেয়াল করেছিলেন, এলাকার শববাহী গাড়ির জন্য চালক পেতে মাঝেমধ্যেই সমস্যা হয়।

Advertisement

তারাশঙ্কর গুপ্ত

বড়জোড়া শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২২ ০৭:২৩
Share:

বাঁকুড়া থেকে বড়জোড়ার পথে পূজা মণ্ডল। শনিবার। নিজস্ব চিত্র।

সমাজসেবার নানা কাজে অনেক দিন ধরেই যুক্ত তিনি। খেয়াল করেছিলেন, এলাকার শববাহী গাড়ির জন্য চালক পেতে মাঝেমধ্যেই সমস্যা হয়। বছরখানেক আগে, তাই গাড়ি চালানো শেখা শুরু করেন। ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে, শববাহী গাড়ির স্টিয়ারিং ধরেছেন বাঁকুড়ার বড়জোড়ার কলেজছাত্রী পূজা মণ্ডল। শনিবার বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে বড়জোড়ায় চালক হিসাবে প্রথম বার দেহ নিয়ে গিয়েছেন। শুধু শববাহী গাড়ি চালানোই নয়, স্ট্রেচারে শব তোলা-নামানোতেও হাত লাগিয়েছেন।

Advertisement

আসানসোলের বিবি কলেজে প্রাণিবিদ্যায় অনার্স নিয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন পূজা। সাত বছর ধরে তিনি ‘বড়জোড়া ব্লক ব্লাড ডোনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সঙ্গে যুক্ত। তিনি জানান, করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে একাধিক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জীবাণুনাশের কাজ করেছেন। পূজা বলেন, ‘‘আমাদের সংগঠনের একটি শববাহী গাড়ি আছে। দীর্ঘদিন ধরে দেখছি, চালকের সমস্যায় ভুগতে হয়। সহজে কেউ এই গাড়ি চালাতে চান না। এই গাড়ি চালালে, না কি অন্য গাড়িতে কাজ পাওয়া মুশকিল হয়! আবার অনেক জায়গায় এই গাড়ি ধুতে দেওয়া হয় না। তখন থেকেই স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে এই গাড়ি চালানোর ভাবনা মাথায় আসে।’’

বড়জোড়ার ওই রক্তদাতা সংগঠনের সম্পাদক কাঞ্চন বিদ বলেন, ‘‘পূজা এক বছর ধরে গাড়ি চালানো শিখেছে। লাইসেন্স করিয়েছে। লার্নার অবস্থায় শববাহী গাড়ি স্বল্প দূরত্বে চালিয়ে হাত পাকিয়েছে।’’ তিনি জানান, তাঁদের সংগঠনের শববাহী গাড়ির নিয়মিত চালক নেই। কখনও কাউকে ডেকে বা বেশিরভাগ সময়ে ওই গাড়ি চালান তিনি নিজেই। গত দু’তিন মাস ধরে তাঁর সঙ্গী হয়েছেন পূজা। এ দিন দেহ আনার ডাক পেয়ে, পূজা চালকের দায়িত্ব নেন। বাঁকুড়া থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে বড়জোড়ায় দেহ পৌঁছে দেন।

Advertisement

পরিজন হারানো পরিবারটির তরফে মানস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শববাহী গাড়ির চালকের আসনে মেয়েটিকে দেখে অবাক হই। কিন্তু ও নিখুঁত গাড়ি চালিয়েছে। আমাদের সাহায্য করেছে। ওর মঙ্গল হোক।’’ কাঞ্চন জানান, শববাহী গাড়ির চালক নেন ৩০০ টাকা। তার সঙ্গে, জ্বালানির খরচ পরিবারকে জানানো হয়। তাঁরা যা দিতে পারেন, সেটাই নেন তাঁরা। তবে পূজা কোনও টাকা নিচ্ছেন না। গোটা কাজটাই করছেন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে।

পূজা জানান, ছোট থেকে অনেককে শববাহী গাড়ির ছোঁয়া এড়ানোর চেষ্টা করতে দেখেছেন। কিন্তু তাঁর মা টুম্পা মণ্ডল ছোট থেকে তাঁকে শিখিয়েছেন, শববাহী গাড়ি অস্পৃশ্য নয়। টুম্পা বলেন, ‘‘ছোটবেলায় পূজার এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলাম, মানুষের শেষযাত্রায় পাশে থাকা বড় কাজ। ও সমাজসেবা হিসাবে শববাহী গাড়ি চালাতে চেয়েছিল। উৎসাহ দিয়েছি।’’ মেয়ের কাজে গর্বিত বাবা সাধনকুমার মণ্ডলও। বড় হয়ে সমাজসেবার পাশাপাশি, শিক্ষকতা করতে চান পূজা। বলেন, ‘‘মেয়েরা সব পারে, সেটা করে দেখাতে চাই। মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন।’’

বড়জোড়ার বিধায়ক অলক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সম্ভবত বাঁকুড়ায় এই প্রথম কোনও তরুণী এমন কাজ করছেন। আমরা গর্বিত। ওঁকে আরও উৎসাহ দিতে চাই। তরুণ প্রজন্ম এ ভাবে এগিয়ে এলে, সমাজের মঙ্গল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন