ভিড়: রাইপুরের হলুদকানালিতে অভিষেকের জনসভায়। নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে জঙ্গলমহলে এসে রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের বার্তা দিয়ে এবং দলের কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে প্রচারে নামার নির্দেশ দিলেন তৃণমূলের দলীয় পর্যবেক্ষক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে কুড়মিদের তফসিলি উপজাতিভুক্ত করা নিয়ে রাজ্য সরকার যে কতটা সক্রিয়, তাও বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন তিনি।
রাইপুরের হলুদকানালির স্কুল মাঠে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের ঠাসা ভিড় ছিল। যা দেখে তালড্যাংরা বিধায়ক সমীর চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘এই ভিড়ই বুঝিয়ে দিয়েছে, পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলই গ্রামে গ্রামে ফিরছে।’’ জেলা নেতৃত্বকে বলতে শোনা যায়, এ দিন মাঠে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ এসেছেন। তবে পুলিশের হিসেবে, ৫০ হাজারের কম নয়।
কুড়মিদের তফসিলি উপজাতিভুক্ত করার দাবি দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে আদিবাসী কুড়মি সমাজ পথে নেমে আন্দোলনও চালিয়ে যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাসখানেক আগে পুরুলিয়ায় এসে জানিয়েছিলেন, কুড়মিদের ওই দাবি স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব রাজ্য কেন্দ্র সরকারের কাছে পাঠিয়েছে। যদিও বিরোধীদের কেউ কেউ রাজ্য সরকারের সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। পঞ্চায়েত ভোটের আগে তা নিয়ে যাতে জলঘোলা না হয়, সে জন্য এ দিন কুড়মিদের তফসিলি উপজাতির স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব রাজ্য যে কেন্দ্রকে দু’-দু’বার চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, তা তুলে ধরতে একটি চিঠির প্রতিলিপি দেখান অভিষেক। মঞ্চে তিনি বলেন, ‘‘কুড়মি সমাজ নিয়ে যাঁরা মিথ্যা কথা বলছেন, আমি স্পষ্ট ভাবে বলে যাই, ২০১৭ সালে মুখ্যমন্ত্রী চিঠি দেন কুড়মিদের এসটি তালিকাভুক্ত করার জন্য। (হাতে একটি চিঠি তুলে নিয়ে) দু’দিন আগেও এই চিঠি দিয়ে কুড়মিদের এসটি তালিকাভুক্ত করার আবেদন জানানো হয়েছে রাজ্যের তরফে। আমরা এ নিয়ে দু’বার চিঠি দিয়েছি কেন্দ্রকে। যারা মিটিং, মিছিল, বন্ধ করে দাবি আদায়ের চেষ্টা করছেন, তাঁরা মুর্খের স্বর্গে বাস করছেন।’’
আদিবাসী কুড়মি সমাজের নেতৃত্ব সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখেন, রাজ্য সরকারের ওই চিঠি সেখানে পৌঁছেছে। তারপর রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে তাঁরা সন্তোষপ্রকাশ করেন। অভিষেক যুক্ত করেন, ‘‘আন্দোলন করার থাকলে সকলে মিলে দিল্লিতে গিয়ে আন্দোলন করুন। যদি সহযোগিতার দরকার হয় আমরা সহযোগিতা করব।’’ তিনি দাবি করেন, মুখ্যমন্ত্রী অলচিকি ভাষায় শিক্ষক নিয়োগ করেছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাস্তা, শিল্প— সব ক্ষেত্রেই উন্নয়ন হয়েছে।
বৃহস্পতিবারই ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়িতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পঞ্চায়েত ভোটের আগে মাওবাদীরা যাতে অশান্তি পাকাতে না পারে। সে জন্য সতর্ক করে যান। এ দিন অভিষেকের কথাতেও সেই সুর শোনা গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘মাওবাদীরা যাতে ঢুকতে না পারে, সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদের। শান্তি যাতে ভঙ্গ না হয়, তা দেখার দায়িত্বও আমাদের। কেউ কেউ বাংলার মানুষকে ভুল বুঝিয়ে অশান্তির চেষ্টা করছে। ওদের এক ছটাক জায়গাও দেবেন না। ওদের ভোট দেওয়া মানে মাওবাদী শাসানিকে আবার ফিরিয়ে আনা।’’
তিনি মনে করান, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন মাওবাদীদের আমাদের মুছতে হবে। জঙ্গলমহলের যুবক যুবতীদের পুলিশে চাকরি দিয়েছেন তিনি। সিপিএম নেতা কর্মীরা জঙ্গলমহলে এসে রাত্রি যাপন করতে ভয় পেতেন। অথচ আমাদের নেত্রী মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে এখনও পর্যন্ত অন্তত ৮০ বারের বেশি জঙ্গলমহলে এসেছেন।’’ তিনি জানান, জঙ্গলমহলের শান্তি বজায় রাখতে বাড়তি দায়বদ্ধতা আছে।
এ দিন ছাতনার বিধায়ক ধীরেন্দ্রনাথ লায়েকের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘গত বিধানসভা ভোটে বাঁকুড়ায় ভাল ফল হয়নি। তখন যাঁরা বিরোধিতা করেছিলেন, এখন তাঁদের মুখ থুবড়ে পড়েছে।’’
ধীরেন্দ্রনাথবাবু মঞ্চে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ ও অভিষেকের তারুণ্যে অনুপ্রাণিত হয়েই তৃণমূলে যোগ দিলাম।’’ যদিও আরএসপি-র বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক গঙ্গা গোস্বামী বলেন, ‘‘দলকে না জানিয়েই ধীরেন্দ্রনাথবাবু তৃণমূলে যোগ দিয়ে মানুষকে ঠকালেন। ক্ষমতা থাকলে পদত্যাগ করে ফের ভোটে লড়ুন।’’
দলে নব্য ও পুরনো তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাননি অভিষেক। তিনি বলেই, ‘‘অনেকে বলছেন, নতুনদের নেওয়া যাবে না? কেন নেওয়া যাবে না? আদর্শ দেখে যাঁরা আসছেন, তাঁদের স্বাগত জানাব। তবে ব্যক্তি স্বার্থপূরণ করতে আসছেন, তাঁদের জন্য দরজা বন্ধ।’’
তিনি সতর্ক করে দেন, দলের ঝান্ডা নিয়ে কেউ দাদাগিরি করলে বরদাস্ত করা হবে না। অভিযোগ পেলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।