রামপুরহাটে নেতায়-নেতায় হাতাহাতি

ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে তাঁর দল তৃণমূলেরই শহর সভাপতির হাতাহাতি বাধল সাতসকালে। সোমবার সকালে রামপুরহাট পুরসভার মুক্ত মঞ্চ সংলগ্ন এলাকায় এই দৃশ্য দেখে অনেকেই হকচকিয়ে যান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৫ ০০:২৪
Share:

ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে তাঁর দল তৃণমূলেরই শহর সভাপতির হাতাহাতি বাধল সাতসকালে। সোমবার সকালে রামপুরহাট পুরসভার মুক্ত মঞ্চ সংলগ্ন এলাকায় এই দৃশ্য দেখে অনেকেই হকচকিয়ে যান। তবে বেশিদূর এগোতে দেননি দলের কর্মীরা। দুই নেতাকে ছাড়িয়ে দিয়ে তাঁরা নিরস্ত করেন। এই ঘটনার পরে এ দিন শহর জুড়ে দলের কিছু কর্মীকেই বলতে শোনা গেল, ‘‘দলের নেত্রী এবং দলের জেলা সভাপতি গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে কর্মী-সমর্থকদের যত কড়াই বার্তা দিক তা যে অনেকে কানে তুলছেন না, এ দিন ফের তা প্রমাণিত হল।’’ তাঁদের মতে, নিজেদের মধ্যে যা নিয়েই ক্ষোভ থাক, নেতারা প্রকাশ্যে এমন কাণ্ড ঘটানোয় আখেরে সেই দলেরই মুখ পুড়ল। তবে এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই দুই নেতাই আশিসবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তবে তিনি শুধু বলেন, ‘‘এ নিয়ে কী বলব? দলের ব্যপার।’’ এই বলেই তিনি ব্যস্ত রয়েছেন জানিয়ে ফোন ছেড়ে দেন।

Advertisement

কী হয়েছিল এ দিন?

উপ-পুরপ্রধান সুকান্ত সরকারের দাবি, ‘‘আমি সকালে চুল কাটতে গিয়েছিলাম। সেলুনে বসে থাকতে থাকতেই শুনতে পাই দলীয় কাউন্সিলরদের নামে শহর সভাপতি গালিগালাজ করছেন। আমি শহর সভাপতিকে ডেকে বলি, যাঁদের নামে গালিগালাজ করছেন, তাঁরা তো নিজেদের ওয়ার্ড থেকে জিতে এসে জন প্রতিনিধি হয়েছেন। এ কথা বলতেই শহর সভাপতি আমাকে ধাক্কাধাক্কি করতে শুরু করেন।’’ যদিও বিষয়টিকে অতটা হাল্কা ভাবে নিতে নারাজ তৃণমূলের রামপুরহাট শহর সভাপতি সুশান্ত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘হাতাহাতি বা ধাক্কাধাক্কি হবে কেন? গায়ে হাত দেওয়া হয়েছে। ও (সুকান্ত) অনেক বেড়েছিল। তাই একটু শিক্ষা দেওয়া হল।’’ তবে ফুঁসতে ফুঁসতে সুকান্তবাবু বলছেন, ‘‘আমি দলটা করি। তাই কিছু করিনি। তবে এ ব্যপারে যা বলার আশিসদাকে বলেছি।’’

Advertisement

তবে দলেরই কিছু কর্মীর কটাক্ষ, ‘‘সুকান্তদার কথা সুশান্তদার মনে আঘাত দিতেই পারে। কারণ তিনি দলের শহর সভাপতি হলেও তৃণমূলের ভরা জোয়ারেও ১ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেস প্রার্থীর কাছে তিনি হেরে যান।’’ তবে থেমে যাননি। দল সূত্রেই জানা যায়, দলের বর্তমান পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারির কাছের লোক হিসাবে পরিচিত সুশান্ত মুখোপাধ্যায়কে পুরসভার ২২ জন অস্থায়ী পুরকর্মীকে ছাঁটাইয়ের তালিকা তৈরি করা থেকে নানা কাজে নাক গলাতে দেখা গিয়েছে। তাতে বিধায়কের ঘনিষ্ঠ সুকান্ত সরকার থেকে তাঁর অনুগামী আট তৃণমূল কাউন্সিলর আপত্তি জানাতে থাকেন। সম্প্রতি রামপুরহাট শহর যুব সভাপতি ওয়াসিম আলি ভিক্টরকে করা হয়। সে ক্ষেত্রেও সুশান্ত মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকা ছিল। এই সব কারণে শনিবার রামপুরহাট শহরে এক জায়গায় সুকান্ত সরকার ও তৃণমূলের স্থানীয় কিছু নেতা বৈঠক করেন। সেখানে রামপুরহাট শহর সভাপতি সুশান্ত মুখোপাধ্যায় দলের নামে তোলাবাজি করছে, হাসপাতালে রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনায় রোগী সহায়তা প্রকল্পে কর্মী নিয়োগ করছে, পুরসভার কাজে হস্তক্ষেপ করছে বলে অভিযোগ ওঠে। এতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে তাঁরা সুশান্তবাবুকে শহর সভাপতি পদ থেকে বাদ দেওয়ার দাবি তোলেন। তাঁরা একটি কাগজে তা লিখিত ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রশান্তবাবুর ছেলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্বাক্ষর করেন। পুরসভার উপপুরপ্রধান-সহ আট কাউন্সিলরও স্বাক্ষর করেছেন। স্বাক্ষর করা চিঠিটি তাঁরা মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে জমাও দিয়েছেন। তাতেই আরও চটেছেন সুশান্তবাবু। এবং সে সবের জেরেই এ দিনের ঘটনা বলে দলের একাংশের দাবি। যদিও ও সব অভিযোগ নিয়ে সুশান্তবাবুর দাবি, ‘‘আমার বিরুদ্ধে যদি কোনও অভিযোগ থাকে তার জবাব দলকে দেব। বাইরে নয়।’’

ঘটনাচক্রে এ দিন দুই নেতার হাতাহাতির সময়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারি। তবে তিনি এ সব নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল দাবি করেছেন, ‘‘এটা ওঁদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। দলের কোনও ব্যাপার নেই।’’ তবে দলীয় সূত্রে খবর, ওই দুই নেতা আশিসবাবুর অনুগামী হলেও তিনি বিষয়টি নিষ্পত্তির দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেননি। বরং তা দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের কোর্টে চালান করেছেন। অনুব্রতবাবু এ নিয়ে মিটমাট করতে আগামী শনিবার রামপুরে বৈঠকে আসছেন বলে খবর। যদিও অনুব্রতবাবু এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন