চলছে বৈঠক। নিজস্ব চিত্র.
মন্দির-নগরী বিষ্ণুপুরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব—রাস। এক সঙ্গে অনেক বিগ্রহ দর্শনের সুযোগ হয়। তাই দূর-দূরান্ত থেকে প্রচুর মানুষ আসেন। কাল, রবিবার সেই উৎসব। এ বছর করোনা-পরিস্থিতি মাথায় রেখে সতর্কতামূলক বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছে বিষ্ণুপুর মহকুমা প্রশাসন। শুক্রবার মহকুমা দফতরে রাস উৎসব কমিটিগুলিকে নিয়ে একটি বৈঠক হয়। মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) অনুপকুমার দত্ত বলেন, “এই পরিস্থিতিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে না বলেই জানিয়েছেন কমিটির কর্মকর্তারা। বেশ কিছু সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’
বিষ্ণুপুর জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে রাধাকৃষ্ণের মন্দির। শাঁখারিবাজার, রাজদরবার, জোড়বাংলা, পাঁচচূড়া, কালাচাঁদ, জোড়শ্রেণি, নন্দলাল, রাধাগোবিন্দ, পাটপুর প্রভৃতি এলাকার মন্দিরগুলিতে এক সময়ে রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ দেখা যেত। এখন অধিকাংশ মন্দিরে নিরাপত্তার কারণে বিগ্রহ রাখা হয় না। শহরের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে রাসতলায় রয়েছে মল্লরাজ বীরহাম্বীর প্রতিষ্ঠিত মাকড়া পাথরের রাসমঞ্চ বর্তমানে শুধুই পর্যটকদের দর্শনীয় স্থান। তবে আলাদা আলাদা রাস হয় কৃষ্ণগঞ্জ আটপাড়া ষোলোআনা কমিটির রাধালাল জিউ, মাধবগঞ্জ এগারো পাড়া ষোলোআনা কমিটির রাধামদনগোপাল জিউ ও বাহাদুরগঞ্জে চৌধুরীদের পারিবারিক বিগ্রহের।
শুক্রবার মহকুমা দফতরের বৈঠকে ছিলেন এসডিও (বিষ্ণুপুর) অনুপকুমার দত্ত, এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) প্রিয়ব্রত বক্সী, বিষ্ণুপুর থানার আইসি শান্তনু মুখোপাধ্যায়, দমকল দফতরের আধিকারিক পঙ্কজ চৌধুরী ও তিনটি রাস কমিটির সদস্যেরা।
মহকুমাশাসক জানান, এ বছর দিনের বেলায় কুপন কেটে প্রসাদ বিতরণ করা হচ্ছে না। যাঁরা ভোগ রান্না করবেন ও সাজাবেন, করোনা পরীক্ষার জন্য তাঁদের নামের তালিকা জমা দিতে হবে দফতরে। কমিটির স্বেচ্ছাসেবকদের তালিকাও আগে থেকে পাঠাতে হবে। কমিটিগুলির কাছে পর্যাপ্ত মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার থাকবে। বিগ্রহ দর্শন এক সঙ্গে করা যাবে না। কয়েকজন করে যেতে পারবেন ভিতরে।
এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) জানান, প্রতিটি কমিটি তাঁদের বিগ্রহের তালিকা জমা দেবেন প্রশাসনের কাছে। বিগ্রহ ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। দূরত্ব ও স্বাস্থ্য-বিধি মেনে চলার জন্য পুলিশের সঙ্গে থাকবেন কমিটির স্বেচ্ছাসেবকেরাও। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মন্দির চত্বরে নজরদারি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে।
কৃষ্ণগঞ্জ আটপাড়া ষোলোআনা কমিটির সভাপতি রবিলোচন দে জানান, মন্দির প্রাঙ্গণে রাধালাল জিউ, কৃষ্ণরাই জিউ, গোবিন্দ জিউ, কৃষ্ণবিহারী জিউ, মুরলীমোহন জিউ, কেশবরাই জিউ, গিরিধারী জিউ, যুগলকিশোর জিউ-সহ মোট ১৫ জোড়া বিগ্রহ থাকবে। স্বাস্থ্য-বিধি মেনে আরতি দেখতে পাবেন ভক্তেরা। উৎসব উপলক্ষে চার দিন ধরে যে রাজভোগ দেওয়া হত, তা-ও বন্ধ থাকছে। তবে সন্ধ্যারতির দুধ ও লুচি দেওয়া হবে।
মাধবগঞ্জ এগারোপাড়া ষোলোআনা কার্যকরী কমিটির সম্পাদক গৌতম গোস্বামী বলেন, ‘‘সাবড়াকোন থেকে আসেন ডেঙ্গা রামকৃষ্ণ জিউ। এ ছাড়া, বিষ্ণুপুরের রাজ দরবার, শাঁখারিবাজার, মল্লেশ্বর, খড়বাংলা, পাটপুরের মতো নানা জায়গা থেকে বিভিন্ন বিগ্রহ নিয়ে আসা হয়।’’ তিনি জানান, রাধামদনগোপাল, রাধামদনমনোহর, রাধামুরলীমোহন, রাধাজীবন, রাধাগোবিন্দ, যুগলকিশোর, রাধাবিনোদ-সহ প্রায় ৩৫ জোড়া বিগ্রহের দর্শন মেলে রাধামদনগোপাল জিউয়ের রাস উৎসবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান না হলেও, স্বাস্থ্য-বিধি মেনে নাটমন্দিরে প্রতিদিন বসবে বাউল গান, কবিগান, ঝুমুর ও পালাকীর্তনের আসর।
বাহাদুরগঞ্জ চৌধুরী পরিবারের রাস উৎসবেও স্বাস্থ্য-বিধি মেনে শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান হবে বলে উদ্যোক্তাদের তরফে তুষার চৌধুরী জানান।