অনুব্রত মন্ডল।
মঞ্চে হাজির নেতা, মন্ত্রী, বিধায়ক। কিন্তু বেশিরভাগ বক্তাই ছিলেন পুরোহিত। সোমবার বোলপুরে পুরোহিত সম্মেলনে দেখা গেল এমনই ছবি।
সম্মেলনে সামিল ছিলেন বীরভূমের ২৫টি টোলের ৩৮ জন টোল অধ্যাপক, প্রায় ১৫ হাজার পুরোহিত। ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের শান্তি মহারাজ জানান, ৮ মাস আগে তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহকে তিনি বলেছিলেন, ৫০ জন করে পুরোহিত নিয়ে ১৫ দিনের পুরোহিত প্রশিক্ষণ শুরু করলে ভালো হয়। তার যে এমন প্রয়াস হবে ভাবতেই পারছেন না। আমনাহার কৃষ্ণকালী চতুষ্পাঠীর প্রধান অধ্যাপক স্বপন কুমার স্মৃতিতীর্থ দাবি করেন, ভারত স্বাধীন হওয়ার পর কোথাও এ রকম সম্মেলন হয়নি।
তারাপীঠের হংসানন্দ মহারাজ বলেন, ‘‘অতি প্রাচীন কালের পুঁথিতে এরকম সভার কথা পড়েছি। আজ চোখে দেখতে পেল সকলে। পুরোহিতবাদ প্রতিষ্ঠিত হোক।’’ পুরোহিত সত্যনারায়ণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এখানে যে সম্মান পেয়েছি, তা কোনওদিন পাইনি। তবে অনেক এরকম পুরোহিত রয়েছেন যাঁরা হা-হুতাশ করেন, দু’বেলা দুমুঠো খেতে পান না। তাঁদের যদি কিছু সুরাহা করা যায়, তা হলে খুব ভালো হয়।’’
বীরভূমের ২৫টি টোল থেকে এসেছিলেন কাব্যতীর্থ, ব্যাকরণতীর্থ, কাব্য-ব্যকরণতীর্থরা। প্রত্যেকের বক্তব্য, টোলের অধ্যাপকদের যে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হয়, তাতে আর্থিক সংকুলান হয় না। তাই অন্য কাজও করতে হয়। ফলে এই পেশায় অনীহা চলে আসছে। তা-ই পুরোহিতদের আর্থিক উন্নয়ন প্রয়োজন। টোল অধ্যাপক গোপাল ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘সরকারি তরফে পুরোহিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে বন্ধ টোলগুলি খুলবে।’’ তিনি জানান, বীরভূমে ৪০টির বেশি টোল ছিল। বর্তমানে ২৫টি টোল ভাতা পায়। ২০০৭ সাল থেকে টোলের পরীক্ষা বন্ধ। কোনো বিদ্যাগৃহ নেই। সেগুলির কোনও ব্যবস্থা করা হলে ভালো হবে। পুরোহিত পেশায় নিযুক্তদের ভাতা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পুরোহিতদের ভাতা দেওয়ার প্রসঙ্গে তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মন্ডল জানান, এটা জেলাস্তরীয় সম্মেলন। পুরোহিতদের ভাতার ব্যাপারে পদক্ষেপ রাজ্য করতে পারে। দলের জেলা সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহ জানান, পুরোহিতদের অনেক সমস্যা রয়েছে। তাঁরাই জানিয়েছেন সে কথা। সম্মেলনে তা নিয়ে আলোচনা করা হবে। ধর্ম ও রাজনীতিকে মিশিয়ে দিচ্ছে কিছু দল। যাঁরা ধর্মকে বিশ্বাস করে তাঁরা মানুষে মানুষে বিভেদ লাগান না। কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সমাজকে কলুষমুক্ত করতে পুরোহিতদের দরকার। ধর্মে সীমারেখা টানলে চলবে না। সমস্ত ধর্মের মধ্যে সমন্বয় সাধনই আসল ধর্ম।’’ এ দিন আয়োজকদের তরফে বোলপুরের পুরোহিত সম্মেলনে হাজির অতিথিদের হাতে উপহার হিসেবে তুলে দেওয়া হয় নামাবলী, গীতা।