ভবিষ্যতের পথ দেখাচ্ছেন ইতিহাসে স্নাতক

মানবাজার থেকে ধানাড়ার বাঁশকেটা গ্রামের দূরত্ব প্রায় ১৭ কিলোমিটার। বাসিন্দাদের মূল পেশা ধান চাষ। সেটাও হয় বছরে এক বার। বর্ষার জলে। অন্য সময়ে বাড়ির উঠোনে বা খামারে টুকিটাকি আনাজ ফলান কেউ কেউ। পেশাদার ভাবে করার কথা ভাবেননি। কাজের খোঁজে গ্রামের অনেক যুবক পাড়ি দিতেন ভিন্‌রাজ্যে। কয়েক বছর ধরে বিজয়কে দেখে অনেকেই মাঠে নামছেন। 

Advertisement

সমীর দত্ত 

মানবাজার শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৪৭
Share:

খেতে বিজয় গড়াই। নিজস্ব চিত্র

তিনি ইতিহাসে স্নাতক। স্নাতকোত্তরে ভর্তি হয়েছিলেন। খরচ সামলাতে না পেরে মাঝপথেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়েছেন। জমি নেই। পুঁজিও ছিল না। এখন আবাদ করে সোনা ফলান মানবাজার ১ ব্লকের বাঁশকেটার বিজয় গড়াই। মরসুমে শশা আর তরমুজ মিলিয়ে খেত থেকে তোলেন প্রায় ১০০ টন ফসল। বছর তিরিশের বিজয় এলাকার অন্যদেরও চাষের নিত্যনতুন পদ্ধতি সম্পর্কে দিশা দেখাচ্ছেন।

Advertisement

মানবাজার থেকে ধানাড়ার বাঁশকেটা গ্রামের দূরত্ব প্রায় ১৭ কিলোমিটার। বাসিন্দাদের মূল পেশা ধান চাষ। সেটাও হয় বছরে এক বার। বর্ষার জলে। অন্য সময়ে বাড়ির উঠোনে বা খামারে টুকিটাকি আনাজ ফলান কেউ কেউ। পেশাদার ভাবে করার কথা ভাবেননি। কাজের খোঁজে গ্রামের অনেক যুবক পাড়ি দিতেন ভিন্‌রাজ্যে। কয়েক বছর ধরে বিজয়কে দেখে অনেকেই মাঠে নামছেন।

২০১১ সালে মানবাজারের মানভূম কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতক হয়ে বিজয় ভর্তি হয়েছিলেন পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অভাবের চোটে মাঝপথে ছেড়ে দেন। চাষ যে করবেন, জমি নেই। ২০১২ সালে পড়শি চাষির জমি লিজ নিয়ে এক কিলোগ্রাম টোম্যাটোর বীজ বুনেছিলেন। আয় হয়েছিল কয়েক হাজার টাকা। সেটাই ক্রমশ বেড়েছে। আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি বিজয়কে। তিনি জানান, এখন ৩৫ বিঘারও বেশি জমি লিজ নিয়েছেন। শসা আর তরমুজ চাষ করছেন। কিছুটা জমিতে ঝিঙে, টোম্যাটো, পটলও ফলিয়েছেন। বিজয় জানান, উন্নত মানের লম্বাটে তরমুজের আড়াই কিলোগ্রাম আর ভাল শসার দেড় কিলোগ্রাম বীজ কিনেছিলেন। তরমুজের বীজের দাম পড়েছে কিলোগ্রাম পিছু ৩০ হাজার টাকা। শসার বীজ ১৯ হাজার টাকা কিলোগ্রাম। তাঁর আশা, জমি থেকে প্রায় ৬০ টন তরমুজ আর ৫০ টন শসা উঠতে পারে।

Advertisement

মুকুটমণিপুর জলাধারের পশ্চিম প্রান্তে বাঁশকেটা, ধগড়া, জামদা প্রভৃতি গ্রাম রয়েছে। গ্রীষ্মে জলাধারের জল নেমে যায়। ওই সময় ফাঁকা জমিতে চাষ হয়। রাজীবের পড়শি উকিল রজক বলেন, ‘‘আগে আমরা ছোট করে আনাজ চাষ করতাম। পদ্ধতিতে ত্রুটি থাকায় অনেক সময়ে ক্ষতি হয়েছে। বিজয় চাষে নামার পরে অনেক আধুনিক পদ্ধতি শিখছি।’’ বিজয় জানান, চাষের খুঁটিনাটি জানতে তিনি ইন্টারনেট ঘাঁটেন। কৃষি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেন। জেনে নেন কোন সময়ে সার দিতে হবে। কোন সময়ে ওষুধ। তিনি বলেন, ‘‘চাষের আধুনিক পদ্ধতি সংক্রান্ত কয়েকটি অ্যাপ ব্যবহার করি মোবাইলে। কেন্দ্রীয় কৃষি দফতরের ওয়েবসাইটও দেখি।’’

জামদা গ্রামের চাষি অনিল মুদি, সন্তোষ মুদিরা বলেন, ‘‘আমাদের গ্রাম থেকে ব্লক কৃষি অফিস দূরে। রোগ পোকার আক্রমণ হলে বা সার দেওয়ার ব্যাপারে আমরা অনেক সময়েই বিজয়ের দ্বারস্থ হই।’’ মানবাজার ১ ব্লকের সহকারী কৃষি অধিকর্তা অর্ক রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘বাঁশকেটা গ্রামের বিজয় গড়াই উদ্যমী চাষি। শুনেছি, ওঁর পথ অনুসরণ করে এলাকার বেশ কিছু যুবক চাষে নেমেছেন।’’ বিজয় এবং ওই আগ্রহী চাষিদের সব রকমের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন