কলেজে তখন পরীক্ষা

রাস্তায় বাজছে হুল দিবসের মাইক

‘হুল উৎসব’-এর অনুষ্ঠান হচ্ছে জেলা পরিষদের সভাগৃহে। অথচ অনুষ্ঠান স্থল ছাড়িয়ে মাইক লাগানো হয়েছে গোটা রাস্তার চারপাশে। তৃণমূলের সাংসদ, জেলা পরিষদের সভাধিপতি, শাসকদলের বিধায়কদের সঙ্গে প্রশাসনিক কর্তারাও একের পর এক বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছেন। হচ্ছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। মাইকের মাধ্যমে তখন চারপাশ রীতিমতো ‘উৎসবমুখর’!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৫ ০২:৩১
Share:

রাস্তা লাগানো এই মাইকেই নাকাল পরীক্ষার্থীরা।— নিজস্ব চিত্র।

‘হুল উৎসব’-এর অনুষ্ঠান হচ্ছে জেলা পরিষদের সভাগৃহে। অথচ অনুষ্ঠান স্থল ছাড়িয়ে মাইক লাগানো হয়েছে গোটা রাস্তার চারপাশে। তৃণমূলের সাংসদ, জেলা পরিষদের সভাধিপতি, শাসকদলের বিধায়কদের সঙ্গে প্রশাসনিক কর্তারাও একের পর এক বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছেন। হচ্ছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। মাইকের মাধ্যমে তখন চারপাশ রীতিমতো ‘উৎসবমুখর’!

Advertisement

এ দিকে অনুষ্ঠানস্থলের একশো মিটারের মধ্যেই একটি কলেজে তখন বিএ পার্ট ওয়ানের বাংলা পরীক্ষা চলছে। অথচ উদ্যোক্তাদের খেয়ালই নেই সে কথা! মাইকের আওয়াজে পরীক্ষার্থীরা নাজেহাল। এমন সময়ে তৃণমূলের যুব নেতা এসে মাইক বাজানোয় আপত্তি করায় হুঁশ ফিরল আযোজকদের। রাস্তার পাশের মাইক বন্ধ হল। ততক্ষণে অবশ্য পরীক্ষা ও অনুষ্ঠান দুই-ই শেষের মুখে। ছাত্রছাত্রীদের যা দুর্ভোগ হওয়ার ছিল হয়ে গিয়েছে।

খাস বাঁকুড়া শহরের ঘটনা। মঙ্গলবার শহরের জেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের জেরে চরম সমস্যায় পড়তে হয়েছে বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজের পরীক্ষার্থীদের। এ দিন সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত ছিল বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা। একই সময়েই ছিল হুলদিবসের সরকারি অনুষ্ঠান। যার জন্য বাঁকুড়া কলেজ রোডের পাশে বেশ কিছু জায়গায় মাইক বাঁধা হয়েছিল। এই রাস্তার এক পাশে জেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম, অন্য পাশে বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজ। হুল দিবসের অনুষ্ঠানের যৌথ উদ্যোক্তা জেলা পরিষদ, অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর এবং তথ্য-সংস্কৃতি দফতর। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাঁকুড়ার সাংসদ মুনমুন সেন, জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী, জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু-সহ বেশ কিছু বিধায়ক ও প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ।

Advertisement

অথচ সোমবারই পুরুলিয়ার নিতুড়িয়ায় দেখা গিয়েছিল অন্য ছবি। সোমবার নিতুড়িয়ার পঞ্চকোট কলেজে ছাত্রী আবাস ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের উদ্বোধন করার কথা ছিল শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। কিন্তু, কলেজে দু’টি পর্যায়ে দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। মন্ত্রীর অনুষ্ঠানের জন্য মাত্র দু’টি সাউন্ডবক্স লাগানো হয়েছিল। দু’টো পরীক্ষার মাঝের সময়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, মন্ত্রী আসতে আসতে দ্বিতীয় পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়। সেই খবর পেয়ে বিতর্ক এড়াতে অনুষ্ঠানে আর আসেননি শিক্ষামন্ত্রী। কলেজের সামনে দিয়ে তাঁর গাড়ি চলে যায়। মাইক বাজিয়ে অনুষ্ঠান হলে ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা দিতে সমস্যা হবে বলেই শিক্ষামন্ত্রী ওই অনুষ্ঠান এড়িয়ে যান বলে জানিয়েছিলেন পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো।

বাঁকুড়ায় কিন্তু অন্য ছবি।

এ দিন কলেজে গিয়ে দেখা গেল, রাস্তার পাশে লাগানো মাইকের তীব্র আওয়াজে কলেজ চত্বর গমগম করছে। অনেক পরীক্ষার্থীকেই মাঝে মাঝে কানে হাত দিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করতে দেখা গেল। একাধিক পরীক্ষার্থী ক্ষোভের সুরে বললেন, “পরীক্ষার দিনগুলিতে এমনিতেই টেনশন থাকে। তার উপর কানের কাছে তারস্বরে মাইক বাজায় সব কিছু যেন গুলিয়ে যাচ্ছিল। মাইক যখন বন্ধ হল, পরীক্ষা তখন শেষ হওয়ার মুখে।’’ পরীক্ষায় মনোসংযোগ করতে তাঁদের সমস্যা হয়েছেও বলে দাবি করছেন কিছু পরীক্ষার্থী। কলেজের শিক্ষকদের একাংশও ঘটনায় ক্ষুব্ধ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, “জেলা প্রশাসনের অনুষ্ঠানের জন্য পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে পড়তে হল। অনুষ্ঠানের আগে সব দিক খতিয়ে দেখে নিলে ভাল হত।’’

মাইকের আওয়াজে পরীক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে শুনে দুপুরে কলেজে এসে পরিস্থিতি দেখে যান তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলার ছাত্রযুব নেতা শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরে সোজা অনুষ্ঠানের মঞ্চে গিয়ে তিনি বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ-কে ঘটনার কথা জানিয়ে রাস্তার মাইক বন্ধ করার অনুরোধ জানান। রাস্তার মাইক বন্ধও করা হয়। তখন ঘড়ির কাঁটা সাড়ে বারোটা পেরিয়ে গিয়েছে। শিবাজীবাবু বলেন, “কলেজের ছাত্র সংসদের ছেলেরাই আমাকে ফোন করে সমস্যার কথা জানিয়েছিল। কলেজে এসে পরিস্থিতি দেখে অনুষ্ঠানে গিয়ে রাস্তার মাইক বন্ধ করতে বলি।’’

কেন পরীক্ষা চলাকালীন মাইক বাজল?

জেলাশাসক বলেন, “কলেজে পরীক্ষা রয়েছে বলে অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের কাছে খবর ছিল না। খবর পাওয়ার পরে মাইক বন্ধও করে দেওয়া হয়েছে।’’ অনুষ্ঠানের আগে কেন কলেজে পরীক্ষা রয়েছে কিনা, খোঁজ নেওয়া হয়নি জানতে চাওয়া হলে জেলা তথ্য-সংস্কৃতি আধিকারিক গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় এই অনুষ্ঠান সভাগৃহে করা হয়েছে দাবি করে ফোন কেটে দেন। তার পর তাঁকে বারবার ফোন করা হলেও আর ফোন ধরেননি। জেলা সভাধিপতি বলেন, “পরীক্ষা হচ্ছে বলে য়ে মুহূর্তে আমরা খবর পেয়েছি, সঙ্গে সঙ্গেই মাইক বন্ধ করে দিয়েছি।’’

যদিও তাতে পরীক্ষার্থীদের বিশেষ একটা লাভ হয়নি। কারণ, তখন পরীক্ষা প্রায় শেষের মুখে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন