টিনের চালের নীচেই চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার

এ রাজ্যেরই কোনও কোনও হাসপাতালের ওয়ার্ডে মাঝে মধ্যে রোগীদের জন্য গান বাজানো হয়। তৈরি করা হয় ফুলের বাগান। কিন্তু বরাবাজার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অমিল ন্যূনতম স্বাচ্ছন্দ্যটুকুও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বরাবাজার শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৭ ০২:২১
Share:

গলদঘর্ম: এই বাড়িতেই চলে বরাবাজার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ছবি: সমীর দত্ত

মাথার উপরে টিনের চাল। পুরুলিয়ার দাবদাহে বরাবাজার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য আসা রোগীরা জেরবার হচ্ছেন। অসুস্থতা জনিত কষ্ট আরও বেড়ে যাচ্ছে গরমে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত পঞ্চাশ বছর ধরে ছবিটা একই রয়ে গিয়েছে।

Advertisement

এ রাজ্যেরই কোনও কোনও হাসপাতালের ওয়ার্ডে মাঝে মধ্যে রোগীদের জন্য গান বাজানো হয়। তৈরি করা হয় ফুলের বাগান। কিন্তু বরাবাজার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অমিল ন্যূনতম স্বাচ্ছন্দ্যটুকুও। বরাবাজারের জিলিং গ্রামের বাসিন্দা রথু সিং সেখানে এসেছিলেন। বলেন, ‘‘পেটের গোলমাল নিয়ে আমার স্ত্রী দু’দিন ধরে এখানে ভর্তি আছে। কিছুতেই সারছে না। গরমে আরও কাহিল হয়ে পড়েছে।’’ ধারগ্রাম গ্রামের বাসিন্দা প্রহ্লাদ মাহাতো পাঁচ বছরের শিশুপুত্রকে নিয়ে এসেছিলেন। বলেন, ‘‘ডাক্তারের কথা মতো ভর্তি করিয়েছি। জ্বর কিছুটা কমেছে। কিন্তু ভিতরে নিয়ে গেলেই কাঁদছে। বাইরে হাওয়ায় ঘোরালে ঠিক আছে। গরমটা একেবারে সহ্য করতে পারছে না।’’

এই ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ইনডোরে ৩০ জন রোগীর থাকার বন্দোবস্ত রয়েছে। তবে স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, রোজ সেখানে ভর্তি থাকেন গড়ে ৫০-৬০ জন। টিনের চালার তলায় সাধারণ এবং মহিলা ওয়ার্ড । একটি ছোট ঘরে অপারেশন থিয়েটার। মাথায় টিনের চাল। নার্সদের বসার ঘর, ভিআইপি কেবিন— সব কিছুর এক অবস্থা। এক চিকিৎসক জানান, হাড় কাঁপানো শীতেও টিনের চালের জন্য মুশকিল হয়। বিএমওএইচ স্বপন সিংহ সর্দার বলেন, ‘‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার অনেক আগে থেকে এ ভাবেই রোগীরা থাকেন। এই অব্যবস্থার কথা ব্লক ও জেলা কর্তৃপক্ষ জানেন।’’

Advertisement

এই অব্যবস্থা কাটাতে বরাবাজার পঞ্চায়েত সমিতি কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে ওই চত্বরেই এক বছর আগে একটি বাড়ি বানিয়েছেন। কিন্তু ব্যবহার হয়নি। কেন? বিডিও (বরাবাজার) শৌভিক ভট্টাচার্য জানান, নতুন বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। আর তাই জলের সংযোগও দেওয়া যায়নি। তাঁর আশ্বাস, খুব তাড়াতাড়ি সেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বিএমওএইচ জানান, ওই বাড়ি চালু হলে আপাত সমাধান হতে পারে বটে, কিন্তু অন্তর্বিভাগ সেখানে চালু করা সম্ভব নয়। ঘরগুলি ছোট। বিডিও বলেন, ‘‘বিএমওএইচ সমস্যার কথা জানানোর পরেই আমরা বরাবাজার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবন নির্মানের পরিকল্পনা জঙ্গলমহল অ্যাকশন প্ল্যানে ঢুকিয়েছি। টাকা পেলেই নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে যাবে।’’

বান্দোয়ানের বিধায়ক রাজীব সোরেন পদাধিকার বলে বরাবাজার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি। রাজীববাবুর দাবি, বরাবাজার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সমস্যার কথা কেউ তাঁকে জানাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন