অভিযুক্ত বহিরাগত

রক্ষীকে মার পুরুলিয়ার হাসপাতালে

হাসপাতালের লোক পরিচয় দিয়ে ফিমেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের ভিতরে ঢুকে পড়েছিলেন এক বহিরাগত। তাঁকে বাইরে বের করে দেওয়ার ‘অপরাধে’ মার খেলেন পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত নিরাপত্তা আধিকারিক বা সিকিওরিটি ইনচার্জ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৭ ০২:০৮
Share:

আহত: হাসপাতালে প্রশান্ত সিংহ মহাপাত্র। নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালের লোক পরিচয় দিয়ে ফিমেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের ভিতরে ঢুকে পড়েছিলেন এক বহিরাগত। তাঁকে বাইরে বের করে দেওয়ার ‘অপরাধে’ মার খেলেন পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত নিরাপত্তা আধিকারিক বা সিকিওরিটি ইনচার্জ।

Advertisement

শুক্রবারের ওই ঘটনায় মাথায় আঘাত নিয়ে প্রশান্ত সিংহ মহাপাত্র নামে বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার ওই কর্মী সদর হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন। এই নিরাপত্তা সংস্থাটি অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীদের নিয়েই গড়া। গোটা ঘটনা হাসপাতাল সুপার শিবাশিস দাসের কাছে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন প্রশান্তবাবু। সুপার বলেন, ‘‘অভিযোগ পুলিশের কাছে পাঠিয়ে এফআইআর হিসেবে গণ্য করতে বলা হয়েছে।’’

অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম গণেশ চক্রবর্তী। তিনি আবার নিজেকে নিজেকে তৃণমূলের নেতা পরিচয় দিয়ে মারধরের ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই বলেই দাবি করেছেন।

Advertisement

প্রশান্তবাবু জানান, এ দিন সকালে এক ব্যক্তি তাঁকে এসে বলেন, তাঁর মেয়ে ফিমেল ওয়ার্ডে ভর্তি। সেখানে অপরিচিত একটি লোক কখনও কখনও মেয়ের শয্যায় এসে বসছে। প্রশান্তবাবু চার তলায় থাকা ওই ওয়ার্ডে গিয়ে ওই ব্যক্তির পরিচয় জানতে চান। প্রশান্তবাবুর দাবি, ওই বাইরের ব্যক্তি নিজেকে হাসপাতালের লোক বলে দাবি করলে তিনি ওয়ার্ডের নার্সদের কাছে এর সত্যতা জানতে চান। নার্সরা ওই লোকটিকে চেনেন না বলে জানিয়ে দেন। এর পরে ওই ব্যক্তির কাছে প্রশান্তবাবু পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে দু’জনের বচসা বাধে। প্রশান্তবাবু বলেন, ‘‘আমি লোকটিকে বাইরে বেরিয়ে যেতে বললে তখনকার মতো সে চলে গেলেও কিছুক্ষণ পরে এক জন এসে আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। এই লোকটিকে তার সঙ্গীরা গণেশদা বলে ডাকছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে বিষয়টি পুলিশকে জানিয়ে রাখতে বলা হয়।’’

থানায় গিয়ে সব জানিয়ে হাসপাতালে ফেরার পরেই প্রশান্তবাবুর উপরে হামলা হয় বলে অভিযোগ। বেশ কয়েক জন মিলে তাঁর উপরে চড়াও হয়। প্রশান্তবাবুর কথায়, ‘‘আমি কিছু বুঝে ওঠার চড়-ঘুষি মারতে থাকে। গণেশদা নামে লোকটিও ছিলেন। সঙ্গে আরও দশ-বারো জন ছিল। বলছিল, হাসপাতালে সিকিওরিটির কথা চলবে না। তাদের কথাই চলবে। আমার হাতে থাকা হেলমেট কেড়ে নিয়েও আমাকে মারতে থাকে।’’ কোনও রকমে তিনি পালান বলে প্রশান্তবাবুর দাবি।

অন্য দিকে অভিযুক্ত গণেশ চক্রবর্তীর দাবি, এ দিন এক ভদ্রমহিলা কাঁদতে কাঁদতে এসে তাঁকে বলেন, তাঁর মেয়ের গলব্লাডার অপারেশন হয়েছে। কিন্তু, মেয়ের বেডে কেউ বসেছিল বলে এক নিরাপত্তারক্ষী তাঁর হাত ধরে টানাটানি করেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘আমি সেটা বলতে যেতেই ওই রক্ষী আমাকে গালিগালাজ করেন। কিন্তু আমি তাঁকে মারিনি। অন্য অনেকেই মারধর করেছে।’’ প্রশান্তবাবু অবশ্য গালিগালাজের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গণেশবাবুর আরও দাবি, তিনি তৃণমূলের জয়হিন্দ বাহিনীর পুরুলিয়া শহর কমিটির সভাপতি এবং দলের প্রতিনিধি হিসেবে রোগী কল্যাণ সমিতিরও সদস্য। তৃণমূলের জেলা সম্পাদক নবেন্দু মাহালি অবশ্য বলেন, ‘‘ওই লোকটির সঙ্গে আমাদের দলের কোনও সম্পর্ক নেই। আইন আইনের পথেই চলবে। এই মর্মে মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থান খুব পরিষ্কার। হাসপাতালে কোনও ভাবে দালালরাজ বরদাস্ত করা যাবে না।’’

গোটা ঘটনায় নাম জড়িয়েছে হাসপাতালের দালাল চক্রের। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন