বাঁকুড়ার জয়পুরের পথে প্রচার। —নিজস্ব চিত্র।
গ্রামে গ্রামে ঘুরছে সুসজ্জিত ট্যাবলো। সেখান থেকে সাউন্ডবক্সে ভরাট গলায় বেজে চলেছে— “বই মানুষের সেরা বন্ধু। কখনও বেইমানি করে না। স্বামী, স্ত্রী, সন্তান আপনার সঙ্গে বেইমানি করতে পারে, কিন্তু বই শুধু আপনাকে দিয়েই যাবে। বার্ধ্যক্যের বারাণসী হচ্ছে বই। যখন জীবনের পড়ন্ত বেলায় আপনাকে সঙ্গ দেওয়ার কেউ থাকবে না, নাতি-নাতনি সন্তানরা ব্যস্ত থাকবে নিজেদের নিয়ে, তখন আপনার একাকিত্ব দূর করবে বই। কিন্তু ছোটবেলা থেকে বই পড়ার অভ্যাস না থাকলে বুড়ো বয়সে তাকে সঙ্গী করা সমস্যা হবে।”
ট্যাবলো ঘুরছে বাঁকুড়ার জয়পুরের ময়নাপুর, হিজলডিহা, ডান্নে, কুচিয়াকোল, চাতরা, লেগো ইত্যাদি গ্রামে। বৃদ্ধ করুণা দিগার সাউন্ড বক্সে ওই গলা শুনে হঠাৎ ঘর থেকে হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে এলেন প্রচার গাড়ির কাছে। খোঁজ করলেন বক্তার। কিন্তু বক্তা তো নেই। পুরোটাই রের্কড করা বক্তব্য। কাপড়ের খুঁট থেকে টাকা বের করে তিনি বললেন, “বই এত বড় উপকারী জানা ছিল না। আমাদের তোমাদের লাইব্রেরির সভ্য করে নাও।’’ ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত ময়নাপুরের বিবেকানন্দ স্মৃতি পাঠাগার এ ভাবে একদিন প্রচার চালিয়েই ১০০ সদস্য সংগ্রহ করল। ওই পাঠাগারের গ্রন্থাগারিক সনৎকুমার সিংহ ঠাকুর বলেন, “ট্যাবলো থেকে রেকর্ডেড বক্তব্য এলাকার অনেককেই বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট করেছে। তাই একদিনের প্রচারে নেমেই আমরা ১০০ সদস্য পেয়েছি।” এ রকমই দু’জন নতুন সদস্য করুণা সিংহ রায়, প্রিয়াঙ্কা পণ্ডিত বলেন, ‘‘এ বার থেকে নিয়মিত পাঠাগারে যাব। নানা ধরণের বই পড়ার সুযোগ পাব সেখানে।”
বাঁকুড়া জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক মনোরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় জানান, মানুষকে আরও বেশি গ্রন্থমুখী করতে সারা জেলা জুড়েই এই প্রচার অভিযান চলছে। এতে ভাল সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। রেকর্ডেড বক্তব্যটি লিখেছেন ও পাঠ করেছেন রাজ্য গ্রন্থাগার পর্ষদের সদস্য প্রণব হাজরা।” পাটিত কৃষক পাঠাগারের গ্রন্থাগারিক প্রদীপ কারত ও ঝাঁটিপাহাড়ির গ্রন্থাগারিক মুক্তিপদ বিশ্বাস বলেন, “এই প্রচার অভিযান ভোকাল টনিকের মতো কাজ করছে। বহু সাধারণ মানুষও বই ও গ্রন্থাগার সম্পর্কে উৎসাহিত হচ্ছেন।”
আর প্রণববাবু নিজে বলছেন, “আমি দীর্ঘকাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার সামলাচ্ছি। আমি এই প্রচারে বলতে চেয়েছি, কেউ গালি দিলে, পাল্টা গাল না দিয়ে একটি বই ধরিয়ে দিন। বিবাহ, অন্নপ্রাশন, উপনয়ন, জন্মদিনে বই উপহার দিন। আমার কন্ঠে রেকর্ড করা সেই বার্তা কাজে লাগছে জেনে অবশ্যই ভাল লাগছে।’’ বাঁকুড়া জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক বলেন, “মানুষকে গ্রন্থমুখী করার প্রচারের পাশাপাশি জেলার ৩৪টি পাঠাগারকে এ বছর উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ২ কোটি ৩৭ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে বই ও আসবাব পত্র কেনা এবং ভবন নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ হচ্ছে।” এ ছাড়া এ বছরই প্রথম বাঁকুড়া জেলার ছ’টি বেসরকারি গ্রন্থাগারকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।