মানুষ চাইলে গ্রানাইট হাব

পাহাড় কেটে পাথর বের করার সরকারি প্রকল্প এই জেলায় থমকে আছে অন্তত দু’টি জায়গায়। মূলত আদিবাসীরাই পরিবেশ রক্ষার নামে ওই প্রকল্পে বাধাদান করছেন বলে প্রশাসনের কাছে খবর। আদিবাসী সম্প্রদায়কে বোঝাতে উদ্যোগীও হয়েছেন জেলার তৃণমূল নেতৃত্ব।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৭ ০২:০১
Share:

আছি: পাশে থাকার বার্তা। পুরুলিয়ার প্রশাসনিক সভায় সুজিত মাহাতোর তোলা ছবি।

পাহাড় কেটে পাথর বের করার সরকারি প্রকল্প এই জেলায় থমকে আছে অন্তত দু’টি জায়গায়। মূলত আদিবাসীরাই পরিবেশ রক্ষার নামে ওই প্রকল্পে বাধাদান করছেন বলে প্রশাসনের কাছে খবর। আদিবাসী সম্প্রদায়কে বোঝাতে উদ্যোগীও হয়েছেন জেলার তৃণমূল নেতৃত্ব। এমনই এক প্রেক্ষাপটে পুরুলিয়ায় গ্রানাইট হাব তৈরির প্রস্তাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার প্রশাসনিক সভার মঞ্চ থেকে মমতা বলেন, ‘‘যদি পুরুলিয়ার মানুষ চান, তা হলে নানা রকম খনিজ নিয়ে, আদিবাসীদের জায়গা নষ্ট না করে, পরিবেশ নষ্ট না করে এখানে গ্রানাইট হাব তৈরি করা যেতে পারে। এই হাব যদি তৈরি হয়, তাহলে মনে রাখবেন, কয়েক লক্ষ ছেলেমেয়ের কর্মসংস্থান হতে পারে। তবে, এটা পুরুলিয়ার মানুষই ঠিক করবেন।’’

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী বারবার জোর দিয়েছেন জেলার মানুষের ইচ্ছার উপরে। তাঁরা চাইলে তবেই গ্রানাইট হবে বলে জানিয়েছেন। কেন বলেছেন? তৃণমূল সূত্রের খবর, পাহাড় কেটে পাথর তৈরির প্রকল্পে আদিবাসীদের আপত্তি সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিবহাল খ্যমন্ত্রী। এমনকী, কাশীপুর ব্লকের বড়রা পঞ্চায়েতের পলসড়া মৌজায় পাহাড় কেটে পাথর বের করার প্রকল্প ঘিরে তৈরি হওয়া অচলাবস্থা কাটাতে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল স্বয়ং মমতাকেই। এই প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে রয়েছে রাজ্য সরকারি সংস্থা ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন (ডব্লিউএমডিটিডিসি)।

Advertisement

গত বছর বিধানসভা নির্বাচনের আগেই পলসড়ার ধনারডি গ্রামের কাছে ওই পাহাড় কাটার প্রকল্প ঘিরে উত্তেজনা দেখা দেয়। পাহা়ড় ধ্বংস হলে তাঁদের জীবন-জীবিকার উপরে প্রভাব পড়বে এবং পরিবেশের ক্ষতি হবে—এই দাবিতে ‘পাহাড় বাঁচাও কমিটি’ গড়ে আন্দোলনে নেমেছিলেন ধনারডি-সহ আশপাশের একাধিক গ্রামের আদিবাসী মানুষজন। ওই আন্দোলনকে ঘিরে কাশীপুরের তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে আদিবাসীদের দূরত্বও বাড়ে। শেষে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের নবান্নে ডেকে জট খোলেন মুখ্যমন্ত্রী। ঠিক হয়, কোনও ভাবেই পাহাড় কাটা হবে না।

একই ভাবে রঘুনাথপুর থানার সেনেড়া মৌজায় ডব্লিউএমডিটিসি-র গ্রানাইট মাইন প্রজেক্টের কাজ স্থানীয় আদিবাসীদের বাধায় বন্ধ হয়ে আছে। যে টিলা কেটে পাথর বের করার কথা, সেটি কাটা পড়লে তাঁদের ধর্মীয় স্থান নষ্ট হয়ে যাবে, এই আশঙ্কা করে চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে আন্দোলনে নামে স্থানীয় বাসিন্দারা। ডব্লিউএম়ডিটিসি-র সাইট অফিস ভাঙচুরও হয়। তার পর থেকেই কাজ বন্ধ করেছে সংস্থা।জেলা তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘আদিবাসীদের বুঝিয়ে প্রকল্প চালু করার চেষ্টা আমরা চালাচ্ছি। এখনও যে বিরাট কোনও ফল হয়েছে, তা নয়। দিদি (মুখ্যমন্ত্রী) সে কথা ভাল করেই জানেন বলে এ দিন গ্রানাইট হাবের প্রসঙ্গ তুললেন। আদিবাসীদের বোঝানোর চেষ্টা করলেন, প্রকল্প হলে আখেরে তাঁদেরই লাভ।’’

মুখ্যমন্ত্রী এ দিন উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘‘ঝাড়খণ্ডে অনেক খনিজ আছে। তারা যদি বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করতে পারে, তা হলে বাংলায়, পুরুলিয়ায় কেন হবে না? পুরুলিয়ার লোকের কর্মস্থান যদি পুরুলিয়ায় না হয়, তা হলে তো আপনাকে তো ঘুরে বেড়াতে হবে। আপনি কি রাজস্থানে যাবেন পাথর কাটতে? না এখান থেকে চলে যাবেন মধ্যপ্রদেশে পাথর কাটতে? পাথরটা যদি এখানেই কাটতে পারেন, তা হলে আপনার বাড়ি চোখের সামনে থাকবে। সংসার থাকবে। রোজগারটাও বাড়বে।’’

এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীর অভয়বাণী, ‘‘আমরা কখনও পরিবেশ নষ্ট করি না। পরিবেশ নষ্ট করা আমাদের কাজ নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন