জট: বোলপুর-শান্তিনিকেতনের চিত্রা মোড়ে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
ঘড়িতে তখন দুপুর ১২.৪০। আপ শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস ঢুকেছে বোলপুর স্টেশনে। সামনে গুটিকয় রিকশা। বাঁ দিকের লেনে সার সার টোটো দাঁড়িয়ে। যাত্রীরা বাইরে আসতেই হাঁক-ডাক শুরু হয়ে গেল। হট্টগোলে হাঁটাই দায়। টোটো চালকরা প্রায় সবাই হাঁকছেন— ‘শান্তিনিকেতন...শান্তিনিকেতন...সাইড ট্যুর...।’
‘বাইপাস মোড়?’
—‘ও দিকে তো যাব না দাদা।’
‘বাসস্ট্যান্ড?’
—‘কোপাইয়ের দিকে যাব। বাড়ি ফিরতে হবে ভাই।’
প্রয়োজনের সময়ে বোলপুর স্টেশন থেকে বাইপাস মোড় কিংবা জামবুনি বাসস্ট্যান্ড কেন, বোলপুরে কাছে-পিঠে কোনও মোড়-পাড়া-পট্টির দিকেই টোটো মেলাই দায়। সকলেই বেশি টাকায়, বাইরে থেকে আসা লোক কিংবা পর্যটকদের নিয়ে শান্তিনিকেতন ঘোরাতে উৎসাহী। ট্রেন থেকে নামা এক বয়ষ্ক দম্পতি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বার বার জিজ্ঞেস করেও কোনও টোটো না পেয়ে কার্যত বিরক্ত পরস্পরকে বললেন, ‘‘চলো হেঁটেই চলে যাই।’’
এ ছবি নিত্যদিনের। এই ক’মাসে একেবারেই বদলে গিয়েছে শহরের টোটো-চিত্র। ট্রেন থেকে নেমে শান্তিনিকেতনের বাইরে বোলপুর পুর এলাকার মধ্যে কোথাও যেতে হলে চট করে টোটো মেলা ভার। স্থানীয়দের অভিযোগ, ‘‘সমস্যা বাড়ে যখন বিশ্বভারতীতে কোনও অনুষ্ঠান থাকে। আবার শনি-রবিবার লোকালে কোনও টোটো পাওয়া স্বপ্নের মতো। মনের মতো ভাড়া না মিললে, দাঁড়িয়ে থাকবে। তবু যায় না।’’
বোলপুর টোটো ই-রিকশা ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন কিংবা টোটো ড্রাইভার অ্যাসোসিয়েশন টোটো চালকদের ভাড়ার তালিকার নীচে লিখেছে, ‘সকল যাত্রীদের সাথে সু-ব্যবহার রাখতে হবে।’ স্থানীয় এক ব্যক্তি বলছিলেন, ‘‘কিছুটা হেঁটে, কিছুটা রিকশায় বাড়ি ফিরতে হয় প্রায়ই। কোথায় ওদের সেই সহযোগিতা!’’
২০১৩ সাল থেকে বোলপুর পুর এলাকায় টোটোর চলাচল শুরু হয়। তখন শহরে হাতেগোনা ৫০ থেকে ৬০টি টোটো চলত। প্রশাসনেরই একটি সূত্রের খবর, এখন সেই সংখ্যা ৩৫০০ ছাড়িয়ে যাবে। তবে সব কিন্তু বোলপুরের নয়। পাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রচুর টোটো ঢোকে শহরে। তাতেই ভিড় বেড়েছে বোলপুরে। টোটোর সংখ্যা বাড়ায় রোজগার কমেছে অনেক।
এক টোটোচালকের আবার ক্ষোভ, ‘‘বোলপুর পুরসভা এখনও টোটোর রেজিস্ট্রেশনই করেনি। আর এর সুযোগ নিয়ে শহরের বাইরের টোটো চালকরা যাত্রীদের সঙ্গে নানা অসহযোগিতা করছে, আর বদনামের ভাগিদার হচ্ছে শহরের টোটো চালকরা।’’
টোটো চালক সুকেশ চক্রবর্তী, গিরিধারী পালরা অবশ্য বলেন, ‘‘বেশির ভাগই ভাড়া
নিয়ে টোটো চালায়। মালিককে দিনে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দিতে হয়। কাছাকাছির একটা, দুটো ভাড়া চাপিয়ে ১০-২০ টাকা নিলে দিনের শেষে মালিকের টাকা মিটিয়ে নিজেদের হাতে কিছুই থাকে না। সাইড ট্যুরে বরং ৫০০, ৭০০ টাকা মেলে।’’
পুরপ্রধান সুশান্ত ভকত বলেন, ‘‘টোটোর রেজিস্ট্রেশন করার ক্ষমতা পুরসভার নেই। ওটা পরিবহণ দফতর করে।’’ টোটো ভাড়া
সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ এ পর্যন্ত তাঁর কাছে আসেনি বলেও সুশান্তবাবুর দাবি। টোটো ড্রাইভার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক গোপাল হাজরা বলেন, ‘‘কোনও যাত্রী যদি টোটোর নম্বর ধরে আমাদের কাছে অভিযোগ করেন তা হলে ব্যবস্থা নেব।’’