নিত্য উপদ্রব হরিশাড়ায়, ঠেক ভাঙলেন মহিলারা

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সিংবেলিয়া, গণপুর ও মোনাই আদিবাসীপাড়ার বেশিরভাগ পরিবার আদিবাসী এবং তফসিলি সম্প্রদায়ের। তিনটি গ্রামেই কয়েকটি মদের ঠেক রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৮ ০৭:২০
Share:

অভিযান: মদের ঠেকে মহিলাদের হানা। সাঁইখিয়ায়। নিজস্ব চিত্র

বার বার বলেও বিক্রেতারা মদ বিক্রি বন্ধ করেননি। মদ্যপান বন্ধ করেননি অনেক বাড়ির পুরুষেরা। ক্ষুব্ধ এলাকার কয়েক জন মহিলা তাই ঠেকে হানা নষ্ট করে দিলেন মজুত রাখা মদ। কোনওমতে পালান ঠেকে থাকা মদ্যপেরা। এমনই কাণ্ড ঘটল সাঁইথিয়ার হরিশাড়া পঞ্চায়েত এলাকার তিনটি গ্রামে।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সিংবেলিয়া, গণপুর ও মোনাই আদিবাসীপাড়ার বেশিরভাগ পরিবার আদিবাসী এবং তফসিলি সম্প্রদায়ের। তিনটি গ্রামেই কয়েকটি মদের ঠেক রয়েছে। গ্রাম সূত্রে খবর, অনেক পরিবারের পুরুষেরাই ওই সব ঠেকে গিয়ে মদ খান। নেশার জন্য খরচ করে ফেলেন দিনমজুরির রোজগারের অনেকটাই। বেসামাল হয়ে বাড়ি ফেরেন। অশান্তি হয় তাঁদের বাড়িতে, পাড়ায়।

ওই এলাকার বাসিন্দা প্রিয়া বাগদি, নিভা বাগদির কথায়, ‘‘অনেক বাড়ির ছেলেরা মদ কিনতে টাকা খরচ করে ফেলায় দু’বেলা দু’মুঠো ভাতও জোটে না। প্রতিবাদ করলেই মারধর।’’ সমস্যায় পড়ে সে সব বাড়ির ছোটরাও। মোনাই গ্রামের পঞ্চম শ্রেণির সোনালি বাগদি, দেব বাগদি বলে, ‘‘মদ্যপ লোকেদের চিৎকারে রাতে পাড়ায় টেকা দায় হতো কখনও কখনও। সে সব দিন ঠিকমতো পড়াশোনাও করা যায় না।’’

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে খবর, গ্রামের মহিলারা বার বার বিক্রেতাদের মদ বিক্রি করতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি বলে অভিযোগ। বুধবার সন্ধ্যায় তিনটি গ্রামের মহিলারা একজোট হয়ে অভিযানে নামেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন হরিশাড়া পঞ্চায়েতের প্রধান অপর্ণা মণ্ডলের স্বামী প্রশান্ত মণ্ডলও। শতাধিক মহিলা প্রথমে জড়ো হন গণপুর দুর্গামন্দিরের সামনে। সেখান থেকে ঝাঁটা-লাঠি হাতে তাঁরা একের পর এক মদের ঠেকে হানা দেন। কয়েকটি ঠেকে মদ নষ্ট করে দেওয়া হয়। সেখানে তখন কয়েক জন মদ্যপও ছিলেন। মহিলাদের ওই অভিযান দেখে তাঁরা মদ্যপান থামিয়ে বাড়ির পথ ধরেন। প্রমীলা বাহিনী তাঁদের হুঁশিয়ারি দেয়— এ বারের মতো ছেড়ে দেওয়া হল। এর পর এমন দেখলে আর রেয়াত করা হবে না।

স্থানীয় সূত্রে খবর, একই নিদান দেওয়া মদ বিক্রেতাদের। কয়েকটি ঠেকে মহিলাদের সঙ্গে মদ বিক্রেতাদের বচসার জেরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পৌঁছয় পুলিশ। তারাও বিক্রেতাদের সাবধান করেন। অভিযান শেষে আত্মবিশ্বাসী মহিলারা। প্রতিমা বাগদি, অরুণা বাগদির কথায়, ‘‘শুধু গ্রামের বাসিন্দা নন, বহিরাগতেরা মদ খেতে এসে এলাকায় নানা দুষ্কর্ম করে। আর গ্রামে কাউকে মদ বিক্রি করতে দেব না।’’ পঞ্চায়েত প্রধান অপর্ণাদেবী বলেছেন, ‘‘মদ সামাজিক পরিবেশ নষ্ট করার পাশাপাশি পরিবারে অনটন ডেকে আনছে। ওই অভিযানে আমার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।’’ একই আশ্বাস দিয়েছে পুলিশও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন