দুই জেলায় বামেদের মুখরক্ষা দুই আসনে

এক তরফা জয়েও চোনা নির্দল কাঁটা

উপনির্বাচনে তাদেরই জয়জয়কার। তবু দুধে এক ফোঁটা চোনা ফেলে দেওয়ার মতো বাঁকুড়ায় শাসকদলের গলায় বিঁধল সেই নির্দল কাঁটা! দলীয় প্রার্থীকে হারিয়ে জিতলেন তৃণমূলেরই বিক্ষুব্ধ প্রার্থী। পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে সিপিএমকে টপকে দ্বিতীয় স্থানে এল বিজেপি। চারটি আসন হাতছাড়া হল সিপিএমের। দিনের শেষে তাদের সান্ত্বনা পুরস্কার স্রেফ একটি আসন। বেশির ভাগ আসনে জিতে শেষ হাসি হাসল তৃণমূলই।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৫ ০১:১৫
Share:

জয়ের উল্লাস। রাইপুরে বুধবারের নিজস্ব চিত্র।

উপনির্বাচনে তাদেরই জয়জয়কার। তবু দুধে এক ফোঁটা চোনা ফেলে দেওয়ার মতো বাঁকুড়ায় শাসকদলের গলায় বিঁধল সেই নির্দল কাঁটা!
দলীয় প্রার্থীকে হারিয়ে জিতলেন তৃণমূলেরই বিক্ষুব্ধ প্রার্থী। পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে সিপিএমকে টপকে দ্বিতীয় স্থানে এল বিজেপি। চারটি আসন হাতছাড়া হল সিপিএমের। দিনের শেষে তাদের সান্ত্বনা পুরস্কার স্রেফ একটি আসন। বেশির ভাগ আসনে জিতে শেষ হাসি হাসল তৃণমূলই।
জেলার ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং দু’টি পঞ্চায়েত সমিতি স্তরের আসনে উপনির্বাচন হয়েছিল শনিবার। যার মধ্যে পঞ্চায়েতের ১০টি আসন ও দু’টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনেই জয়ী শাসক দলের প্রার্থীরা। বিষ্ণুপুরের বাঁকাদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের দু’নম্বর আসনে সিপিএমের কাছে এবং সিমলাপাল পঞ্চায়েতের ১৫ নম্বর আসনে নির্দল (বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) প্রার্থীর কাছে হারেন তৃণমূল প্রার্থী। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাঁকাদহ পঞ্চায়েতের আসনটি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল তৃণমূল। সিমলাপালের আসনটি অবশ্য সিপিএমের দখলে ছিল। এই আসনে সিপিএম, বিজেপি-র সঙ্গে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল প্রার্থী তপন প্রতিহারের সঙ্গে লড়াই হয় তৃণমূলের প্রার্থী ধনী রায়ের। ধনীবাবু ১৯৫ ভোটে হারেন তপনবাবুর কাছে। খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতির সুপুর আসনে এবং মেজিয়া পঞ্চায়েত সমিতির রামচন্দ্রপুর আসনে জিতেছে তৃণমূল।
দলীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, তপনবাবু সিমলাপালের যুব তৃণমূল নেতা শীতল দে-র অনুগামী হিসেবে পরিচিত। অন্য দিকে, ধনীবাবু তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সনৎ দাসের অনুগামী। সিমলাপালে সনৎবাবুর একাধিক বিরোধী গোষ্ঠী রয়েছে। উপনির্বাচনে ওই গোষ্ঠীগুলিরও সমর্থন পেয়েছেন তপনবাবু। এটাই তৃণমূল প্রার্থীর হারের মূল কারণ বলে দাবি করছেন ব্লক নেতারা। এ দিন সনৎবাবুর সঙ্গে বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। ভোটের আগে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ কোনও নির্দল প্রার্থীই তৃণমূলের নয় বলে দাবি করেছিলেন। অথচ এ দিন শীতলবাবু স্পষ্ট বলেন, “দলীয় প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে অনেকেই সহমত ছিলেন না। তাই তপনকেই নির্দল প্রার্থী হিসেবে আমরা দাঁড় করিয়েছিলাম। বেশির ভাগ তৃণমূল কর্মীই তপনকে সমর্থন করেছেন।’’
জেলার এক তৃণমূল নেতার কথায়, “গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে কড়া হাতে দমন না করে বরং এড়িয়ে গিয়েছেন জেলা নেতৃত্ব। এ বার কড়া না হলে যে আরও বড় অঘটন অপেক্ষা করছে, সিমলাপালের এই ফলাফল তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল।’’ যদিও এই ঘটনার পরেও দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে বলে মানতে নারাজ জেলা সভাপতি। তাঁর কথায়, “বিধানসভা ভোটের পর থেকেই এই জেলায় ধারাবাহিক ভাবে সাফল্য ধরে রেখেছি আমরা। প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে কোথাও কোথাও মতানৈক্য থাকতেই পারে। তবে তাকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বলে আমি মানতে নারাজ।’’

Advertisement

অন্য দিকে, দু’বছর আগের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিষ্ণুপুরের বাঁকাদহ গ্রাম পঞ্চায়েতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সব কটি আসনেই জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। এ বার ওই পঞ্চায়েতের একটি আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী দিয়েই জয় পেল সিপিএম। দলীয় প্রার্থী গীতা ভুইয়াঁ হারিয়েছেন তৃণমূলের আল্পনা সর্দারকে। এই ফলেই অবশ্য উজ্জীবিত বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক স্বপন ঘোষ বলেন, “সন্ত্রাস করে একের পর এক পঞ্চায়েত বিনা ভোটে জিতেছিল তৃণমূল। এই ঘটনা প্রমাণ করল, মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারলে ফল উল্টো হতো।’’ যদিও বিষ্ণুপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি মথুর কাপড়ির দাবি, “দীর্ঘ বাম আমল থেকেই বাঁকাদহ সিপিএমের ঘাটি বলে পরিচিত। তবে, গত লোকসভা ভোটের তুলনায় উপনির্বাচনে আমাদের ভোট অনেকটাই বেড়েছে। কিছু ভোটের ব্যবধানে (মাত্র ৫৯ ভোট) এখানে আমরা পরাজিত হলেও, বোঝাই যাচ্ছে এই এলাকায় মানুষের সমর্থন হারাচ্ছে সিপিএম।’’

মঙ্গলবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এই জেলার জঙ্গলমহলের বারিকুলে সভা করে জঙ্গলমহল থেকে তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসের’ প্রতিরোধের ডাক দিয়েছিলেন। এ দিন উপনির্বাচনের ফলে কিন্তু, স্পষ্ট জঙ্গলমহলে বামেদের রক্তক্ষরণ এখনও অব্যাহত। হিড়বাঁধের বহড়ামুড়ি পঞ্চায়েত এবং রাইপুর পঞ্চায়েতের একটি করে আসনে ভোট ছিল। ওই দু’টি আসনই বামেদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে রাজ্যের শাসকদল। একই ফল হয়েছে বাঁকুড়া ১ ব্লকের কেঞ্জাকুড়া পঞ্চায়েত ও ছাতনার চীনাবাড়ি পঞ্চায়েতের একটি করে আসনে। বাঁকুড়ার জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীর তাই কটাক্ষ, “জঙ্গলমহলে হঠাৎ এক দিন সভা করে, ডান্ডা, ঝান্ডা দেখিয়ে আস্ফালন করে সিপিএম নেতারা যতই গর্জন করুন না কেন, সাধারণ মানুষের সমর্থন এখন আর ওদের সঙ্গে নেই। উপনির্বাচনে আমাদের সর্বত্র জয়ে এটাই প্রমাণ হল।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক অজিত পতির আবার অভিযোগ, “ভয় দেখিয়ে, টাকা ছড়িয়ে উপনির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছিল তৃণমূল। এই জয় প্রকৃত জয় নয়।’’

Advertisement

গত লোকসভা ভোটের পর গোটা রাজ্য তথা এই জেলাতেও বিজেপি-র সমর্থন বাড়ছে বলে মনে করা হচ্ছিল। লোকসভা নির্বাচনে ভোট প্রাপ্তির হার অনেকটাই বেড়েছিল বিজেপি-র। এ বছর পুর-নির্বাচনে বাঁকুড়া পুরসভায় দু’টি ও বিষ্ণুপুর পুরসভায় দু’টি ওয়ার্ডে জেতেন বিজেপি প্রার্থীরা। কিন্তু, উপনির্বাচনে কোথাও বিজেপি প্রার্থীরা জয় পাননি। তবে কেঞ্জাকুড়া, জগদল্লা ২ ও রাইপুর পঞ্চায়েতের একটি আসনে সিপিএম প্রার্থীর চেয়েও বেশি ভোট পেয়েছেন বিজেপি প্রার্থীরা।

দলের জেলা মুখপাত্র অজয় ঘটকের দাবি, “জিততে না পারলেও কিছু জায়গায় আমরা তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে উঠে এসেছি। আমাদের সমর্থন বাড়ছে। আগামী বিধানসভা ভোটের আগে আমাদের সংগঠন আরও মজবুত হবে। শাসক দলকে কঠিন লড়াই দিতে পারব আমরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন