ভিড় যথেষ্টই, তবু ফিরে দেখল না কেউ

চার ঘণ্টা স্ট্যান্ডে পড়ে আহত যাত্রী

শুক্রবার সকালে এমনই অমানবিক ছবির সাক্ষী রইল বীরভূমের সদর শহর সিউড়ির সরকারি বাসস্ট্যান্ড। সেই সময় বাসস্ট্যান্ডে ভিড় যথেষ্টই। হকারেরাও রয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৭ ০৩:৩৫
Share:

অমানবিক: শুক্রবার সকালে এমনই ছবি দেখা গেল সিউড়ির সরকারি বাসস্ট্যান্ডে। নিজস্ব চিত্র

জখম অবস্থায় সরকারি বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল এক বাসযাত্রীকে। ঘণ্টা চারেক সবার চোখের সামনে ওখানেই পড়েছিলেন আহত যাত্রী। কিন্তু, তাঁকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা তো দূর, কেউ খোঁজও নিলেন না!

Advertisement

শুক্রবার সকালে এমনই অমানবিক ছবির সাক্ষী রইল বীরভূমের সদর শহর সিউড়ির সরকারি বাসস্ট্যান্ড। সেই সময় বাসস্ট্যান্ডে ভিড় যথেষ্টই। হকারেরাও রয়েছেন। কিন্তু, কেউই আহতকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হননি। এমনকী, পুলিশেও খবর দেননি। ঘটনায় অভিযোগের তির মূলত দু’টি সরকারি পরিবহণ সংস্থার দিকে। প্রশ্ন উঠছে, এক জন আহত যাত্রীর সঙ্গে কেন এমন ব্যবহার করা হবে। একে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপাতে ব্যস্ত উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ সংস্থা। অনেক পরে সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে সন্তোষ কোঁড়া নামে ওই যাত্রীকে সিউড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, মধ্য তিরিশের সন্তোষের মেরুদণ্ডে চিড় ধরেছে। দুবরাজপুরের কুখুটিয়া কোঁড়াপাড়ায় তাঁর বাড়ি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুবরাজপুরের থেকে সিউড়ি আসার পথে কোনও ভাবে বাস থেকে পড়ে গিয়ে চোট পান সন্তোষ। সেই অবস্থায় সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ তাঁকে বাসস্ট্যান্ডে নামিয়ে দিয়ে চলে যায় একটি সরকারি বাস। তখন থেকে প্রায় বেলা ১২টা পর্যন্ত উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ সংস্থার টিকিট কাউন্টারের সামনেই পড়েছিলেন সন্তোষ। কুখুটিয়া গ্রামে সন্তোষের মা, ছবি কোঁড়া, স্ত্রী রূপা বলছেন, ‘‘দিনমজুরি করে ও সংসার চালায়। সকালে বেরিয়ে সন্ধ্যায় ঢোকে। এমন বিপদ ঘটেছে, জানতেই পারিনি। পরে শুনলাম অনেকক্ষণ পড়ে থাকলেও হাসপাতালে নিয়ে যায়নি ওকে।’’

Advertisement

যে বাস থেকে তাঁকে নামামো হয়েছিল সেটি উত্তরবঙ্গ না দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবণ সংস্থার সেটা নিয়েও চাপানউতোর শুরু হয়েছে। উত্তরবঙ্গ পরিবহণ সংস্থার দাবি, তাদের বাস থেকে নামানো হয়নি। সকালের ওই সময়টায় দুর্গাপুরের দিক থেকে দুবরাজপুর হয়ে সিউড়ি আসার বাস-ই নেই। আবার দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণের দাবি, বাসটি উত্তরবঙ্গের দুর্গাপুর-চাঁচল রুটের। ওই বাস থেকেই সকালে নামনো হয়েছিল আহত যাত্রীকে। প্রশ্ন উঠছে, বাসযাত্রী বা স্ট্যান্ডের মানুষজন না হয় গুরুত্ব দেননি, কিন্তু, দু’টি সরকারি পরিবহণ সংস্থার তরফে কেন আহত ওই যাত্রীকে হাসপাতালে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হল না? দিনের বেলা আহত এক যাত্রীর এ ভাবে পড়ে থাকায় অবাক পুলিশও।

সেই সময় দায়িত্বে থাকা উত্তরবঙ্গ পরিবহণ সংস্থার আধিকারিক নিখিল ফৌজদারের বক্তব্য, ‘‘মাঝে মধ্যেই মদ্যপ বা নেশারুরা এ ভাবে শুয়ে থাকে। আমরা তেমনটাই ভেবেছিলাম।’’ অন্য দিকে, দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ সংস্থার সিউড়ি ডিপোর ইনচার্জ তাপস মুখোপাধ্যায় মেনে নিচ্ছেন, এ ভাবে এতক্ষণ পড়ে থাকায় আহত বাসযাত্রীর আরও ক্ষতি হতে পারত। তাঁর দাবি, ‘‘আমাদের কর্মীদের অধিকাংশই থাকেন হাটজন বাজারের ডিপোয়। সিউড়ি বাসস্ট্যান্ডে শুধু টিকিট কাউন্টার থাকায় খুব কম সংখ্যক কর্মী থাকেন। কিন্তু, কেউই আমাদের এই ঘটনার কথা জানাননি। তা হলে নিশ্চই ব্যবস্থা হত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন