প্রতীকী ছবি।
থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়াল বিজেপির কোন্দল।
সোমবার দুপুরে পুরুলিয়া শহরের একটি ধর্মশালায় দলের অগ্নি সংকল্প অভিযান কর্মসূচি ঘিরে গোলমাল বাধে। সেই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী, জেলা কমিটির দুই সাধারণ সম্পাদক বিবেক রঙ্গা, জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো-সহ আরও দশ জনের নাম উল্লেখ করে সোমবার রাতে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন পরেশনাথ রজক। নিজেকে দলের শাখা সংগঠন কিসান মোর্চার প্রাক্তন জেলা সভাপতি হিসেবে দাবি করে পরেশনাথ অভিযোগ করেন, জেলা সভাপতির সঙ্গে সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে তাঁর বচসা হয়। সেই সময় হঠাৎ জেলা সভাপতি তাঁকে গালিগালাজ করে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন। সেই সঙ্গে জেলাস্তরের আরও দুই নেতাও তাঁকে মারধর করেন। পরেশনাথের দাবি, সেই ঘটনা দেখে কিছু কর্মী প্রতিবাদ করলে জেলা সভাপতির নির্দেশে তাঁর অনুগামীরা তিন জনকে মারধর করেন। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে।
এই ঘটনাকে ঘিরে জেলার রাজনীতি মহলে চর্চা শুরু হয়েছে। দলের পূর্বতন জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে জেলা কার্যালয়ের দেওয়ালে পোস্টার দেওয়া, তাঁর অপসারণের দাবিতে শহরের রাস্তায় মিছিল থেকে কুশপুত্তলিকা দাহ পর্যন্ত হয়েছে। বর্তমান জেলা সভাপতির আমলে জেলা কার্যালয় ও সভাগৃহের বাইরে দলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরদ্ধে বিক্ষোভ, স্লোগানের ঘটনাও ঘটেছে। এমনকী, নেতার মুখে কালি লেপে দেওয়াও দেখেছে এই শহর। কিন্তু দলীয় কোন্দলের জেরে এই প্রথম পুলিশে অভিযোগ দায়ের হতে দেখে অনেকেই তাই তাজ্জব হয়ে গিয়েছেন।
বিজেপি জেলা সভাপতি এ দিন দাবি করেন, ‘‘যিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন, তিনি এক সময়ে দলে যুক্ত থাকলেও, এখন কেউ নন। দল থেকে দু’বছর আগেই তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।’’ অনেকে বিজেপি কর্মী অভিযোগের পিছনে শাসকদলের ইন্ধন রয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন। যদিও শাসকদলের নেতারা ভিত্তিহীন অভিযোগ বলে তা উড়িয়ে দিয়েছেন। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।
সোমবার জেলার ৪৪টি মণ্ডলের নেতৃত্বের সঙ্গে বিভিন্ন বিধানসভার পদাধিকারী ও দলের শাখা সংগঠনের নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন। দলের দুই রাজ্য নেতাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কর্মসূচি শুরুর ঠিক আগে, কিছু লোকজন ধর্মশালায় উপস্থিত হয়ে নিজেদের বিজেপির কর্মী বলে দাবি করেন। দলের জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে তাঁরা স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁরা অভিযোগ তোলেন, পঞ্চায়েতে ভাল ফল করা সত্ত্বেও বিভিন্ন পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে কেন বিজেপি বোর্ড গড়তে পারল না, জেলা সভাপতিকে তা নিয়ে জবাবদিহি করতে হবে। জয়ী সদস্যেরা কেন তৃণমূলে চলে যাচ্ছেন, সেই প্রশ্ন তুলেও জেলা সভাপতির কাছে জবাবদিহি চাওয়া হয়।
কয়েকজন নেতা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। ততক্ষণে দু’পক্ষের মধ্যে পাল্টা স্লোগান দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। কাউকে কাউকে চেয়ার তুলেও তেড়ে আসতে দেখা যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে গোলমাল বেশিদূর গড়ায়নি।
জেলা সভাপতির দাবি, ‘‘দল থেকে বহিষ্কৃত ওই ব্যক্তি, হঠাৎ আমার সঙ্গে কেন সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা করতে আসবেন? সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মিথ্যা অভিযোগ। ওরা আমাদের সভা ভন্ডুল করতে এসেছিল। কাউকে মারধর করা হয়নি। দলকে অপদস্থ করতে চক্রান্ত চলছে।’’
পরেশনাথের বক্তব্য, ‘‘দীর্ঘদিনের বিজেপি কর্মী। দলের স্বার্থেই সরব হয়েছি। তাই দমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আক্রান্ত হয়েছি বলেই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছি।’’